বাংলাদেশের উদার নীতি এবং সরকারের দেওয়া সুযোগ সুবিধার কথা তুলে ধরে অবকাঠামো, শিল্প, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ করতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ–ভারত সহযোগিতাকে কেবল বাণিজ্যের মধ্যে না রেখে, বৃহত্তর লাভের জন্য বিনিয়োগ, অর্থায়ন, সেবা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মত ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিস্তৃতি ঘটানো উচিত। আর বিষয়টি দেখতে হবে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপট থেকে। গতকাল বুধবার দিল্লিতে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) আয়োজিত বাংলাদেশ–ভারত বাণিজ্য ফোরামে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিডিনিউজের খবর থেকে জানা যায়, গত এক যুগে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প, শিল্পোৎপাদন, জ্বালানি এবং পরিবহন খাতে বিনিয়োগের কথা বিবেচনা করতে পারেন। ভারতীয় বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বাই–ব্যাক কাঠামোর আওতায় কম সময়ে, সাশ্রয়ী ব্যয়ে এবং স্বল্প সম্পদ ব্যবহার করে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, গত দশ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সন্তোষজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই বাণিজ্য ভারসাম্য ভারতের দিকেই অনেকটা ঝুঁকে আছে। বাংলাদেশ এখন উন্নত উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে মানসম্পন্ন পণ্য রতের বাজারে সরবরাহ করতে প্রস্তুত। তাই আমরা ভারতীয় আমদানিকারকদের আমন্ত্রণ জানাতে চাই, বহু দূরের দেশ থেকে বেশি দামে আমদানির বদলে বাংলাদেশি পণ্যের দিকে আপনারা নজর দিতে পারেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১–২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ১৩৭০.৩৫৭ মিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে, যার মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ১৫.৭৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ মোট এফডিআইয়ের মাত্র ১.১৫ শতাংশ। দ্বিমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থেকে আমরা কীভাবে আরও সুফল পেতে পারি, সেই পথ খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করে আমাদের দুই দেশের সহযোগিতা আরও জোরদার করা প্রয়োজনীয়তা আমরা এখানে স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ সুবিধা বাংলাদেশই দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য আছে আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি। এ খাতের উন্নয়নে ধারাবাহিক সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
শিল্প, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি এবং পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করতে সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই–টেক পার্ক স্থাপন করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য মোংলা এবং মীরসরাইয়ে দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। আমি আজ এখানে উপস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেখানে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাব।
বন্ধুত্বের মশাল নেবে যুদ্ধবীরদের পরের প্রজন্ম : মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া যুদ্ধবীরদের পরবর্তী প্রজন্ম ভারত এবং বাংলাদেশের বন্ধুত্বের দূত হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল নয়াদিল্লির আইটিসি মাউরিয়া হোটেলে স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া শহীদ এবং যুদ্ধাহত ভারতীয় সেনা পরিবারের সন্তানদের ‘মুজিব স্কলারশিপ’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সত্যিই দেখতে চাই যে, যুদ্ধবীরদের বংশধররা বাংলাদেশ–ভারত বন্ধুত্বের দূত হিসেবে কাজ করছে এবং তাদের মহান পূর্বপুরুষদের মতোই তাদের অবদান। আমরা মনে করি, দুই দেশের তরুণদের মধ্যে নিবিড় আদান–প্রদান বাড়াতে হবে এবং অভিন্ন ইতিহাসের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হবে। কারণ তারাই ভবিষ্যতের নেতা, তাদের অবশ্যই সীমান্তের উভয়পাশে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে, অতীতে আমাদের নেতারা যেমনটা করেছেন।