বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাদা, দুর্ভোগে দুই হাজার কৃষক

তৈলাভাঙা বিল সড়ক

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | শনিবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ার বৃহত্তর গুমাইবিলের পর সবচেয়ে বড় আবাদভূমি তৈলাভাঙা বিল। কিন্তু একের পর এক স্থাপনা উঠে ছোট হয়ে আসছে বিলটি। এছাড়া বিলের একমাত্র সড়কটি সংস্কার করা হয়নি দীর্ঘ বছরেও। বেহাল এই সড়কে কাঁদা মাড়িয়ে চলতে হয় দুই সহস্রাধিক কৃষককে। এছাড়া পাহাড় অধ্যুষিত এই বিলে নিয়মিত হানা দিচ্ছে বন্যহাতির পাল। এছাড়া তৈলাভাঙা বড়পানির মুখ এলাকায় নির্মিত ব্রিজে এপ্রোচ সড়ক না থাকায় কোন কাজে আসছে না।

দুই হাজার একর আয়তনের তৈলাভাঙা বিলে যেতে শিলক ইউনিয়নের বুচক্র হাট থেকে পাকিয়ার টিলা তলয়ভাঙা সড়ক দিয়ে যেতে হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রবেশমুখ থেকেই আনুমানিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটির বিলের বড়পানির মুখ ব্রিজ পর্যন্ত খুবই নাজুক অবস্থা। প্রবেশপথ থেকে বিলের আগে পর্যন্ত এই সড়কের দুই পাশে আনুমানিক পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস রয়েছে। এই অংশে সড়কে খানাখন্দ দেখা গেছে। অধিকাংশ অংশে ইট উঠে গেছে, কোথাও আরসিসি উঠে গিয়ে লোহা বেরিয়ে গেছে। দুইপাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। এতে বৃষ্টির পানি সড়কে জমে কাঁদায় একাকার হয়ে গেছে। লোকালয় ছাড়িয়ে বিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই সড়কে কাঁদামাটি। বৃষ্টি হলেই তীব্র খানাখন্দে ভরা এই সড়কটিতে কাঁদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়।

স্থানীয় কৃষক আমিনুর রহমান জানান, তৈলাভাঙা বিলের দুই হাজার কৃষকের চলাচলের একমাত্র সড়কটির খুবই নাজুক অবস্থা। বৃষ্টি হলেই হাটু সমান কাঁদামাটি মাড়িয়ে যেতে হয়। এ সময় মানুষ বাদ দিয়ে গরুও চলাচল করতে পারে না। বিলের ধান, বীজ, সারসহ চাষাবাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ আনা নেওয়া খুবই কষ্টকর।

কৃষাণী জাহানার বেগম জানান, চাষাবাদের কারণে বিলের ধারে বেশ কিছু পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ঘর বেঁধে আছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নেই। রাতে হাতি আতংকে দিন কাটে প্রতিটি কৃষক পরিবারের।

কথা হয় স্থানীয় জাবেদ চৌধুরী, লিয়াকত আলীসহ বাসিন্দাদের সাথে। তারা জানান, একসময় পদুয়া হয়ে মূল রাঙ্গুনিয়ায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো সড়কটি। এছাড়া হামিদ শরীফ মিয়া, প্রফেসর মনিন্দ্র লাল বড়ুয়া, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়াসহ বিশিষ্টজনদের বাড়ি এই সড়কপথে। এছাড়া এই সড়কপথে রয়েছে শিলক মহিউচ্ছুন্নাহ মাদ্রাসা, বৌদ্ধ মন্দির, শিলক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেঙ, মিনাগাজীরটিল মতিউল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ছিপাতুল্লাহ জামে মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এরপরেও দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির সংস্কার করা হচ্ছে না। এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি, কৃষকদের পাশাপাশি স্কুলকলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী এবং হাজারো বাসিন্দাদের চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

শহিদুল ইসলাম নামে একজন জানান, ২০০০ একর আয়তনের তৈলভাঙা বিলের পাশে ১২০০ আয়তনের পাঁচটিক্কা বিলও রয়েছে। শুধুমাত্র হাতির উপদ্রব আর যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে পাঁচটিক্কা বিলে আবাদ হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া ক্রমাগত বালু উত্তোলনের কারণে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডং খাল এবং ও ডংনালা খাল সংলগ্ন কৃষি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়কের শেষের একমাত্র ব্রিজটিও এপ্রোচ সড়ক না থাকায় কোন কাজে আসছে না বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, সড়কের বেহাল দশার বিষয়টি খোঁজে নিয়ে সংস্কারের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিলুপ্তির পথে মাছ ধরার চাঁই
পরবর্তী নিবন্ধতওবা আল্লাহর আজিম নেয়ামত