বৃষ্টি হলেই আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে ওরা

খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ৮শ পরিবার।। টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ১০ জুলাই, ২০২১ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৮শ পরিবার। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য। অপরদিকে পাহাড় ধসের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করলেও তাদের পুনর্বাসনে নেই কার্যকর উদ্যোগ। সরেজমিনে খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার সবুজবাগ, শালবাগান, কুমিল্লটিলা, কলাবাগান, কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একাধিক পাহাড়ে ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৫০টি বসতঘর। এছাড়া ৯টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে পাহাড় ধসের কারণে সড়কে চলাচলে তৈরি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। চলমান বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহাণির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবুজবাগ ও শালবন এলাকা। সবুজবাগ এলাকায় পাহাড়ের উপর ঘর বানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মরিয়ম। তবে টানা বৃষ্টিতে তার ঘরের মাটি ধসে গেছে। একইভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট টিপুর ঘরও।
মরিয়ম বলেন, আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। যেটা ছিল তাও ধসে গেছে। বৃষ্টি হলে রাতের বেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাই। এভাবে কি বসবাস করা যায়? নতুন করে ঘর বানানোর সার্মথ্য নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট টিপু বলেন, বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের মাটি ধসে যায়। পাহাড়ের নিচে ধারক দেয়াল থাকলেও আমরা নিরাপদ নই। বৃষ্টি নামলেই আমাদের আতংক বাড়ে। রাতের বেলায় আত্মীয়ের বাসায় চলে যেতে হয়।
খাগড়াছড়ি ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানিক পাটোয়ারি বলেন, আমার ওয়ার্ডের কুমিল্লা টিলা, মোহাম্মদপুর ও সবুজবাগে অন্তত ৫০টি পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ধস শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘরের মাটি ধসে গেছে। বৃষ্টি হলে আমরা তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাই। কিন্তু এটা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। পাহাড় ধস রোধে টেকসই ব্যবস্থাপনা নেই। পাহাড় ধস রোধে ঠেকসই পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
এদিকে পাদদেশে কিংবা পাহাড়ের উপর বসবাসরতদের বেশিরভাগই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ। বিকল্প উপায় না পেয়ে বছরের পর বছর তাদের সেখানে বসবাস করতে হচ্ছে। মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়ে বসবাস করছেন তারা। প্রাণহানি এড়াতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, পৌর এলাকায় দুই ওয়ার্ডে পাহাড় ধসের ঝুঁকি রয়েছে। বৃষ্টি হলে মাইকিং করে পাহাড়ে বসবাসরতদের সরে যেতে বলা হয়। এছাড়া অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়। যারা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদের পৌর আবাসন এলাকায় পুনর্বাসন করার কথা জানান তারা।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ে ধসে ঝুঁকিতে থাকা বসতবাড়ি পরিদর্শন করেছে। তাদের জন্য জেলায় ৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর সভার মেয়রগণ এসব সমন্বয় করবে। এজন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকঠোর বিধিনিষেধেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী
পরবর্তী নিবন্ধটিকার ওয়েবসাইটে নেই পদুয়া ইউনিয়নের নাম