বৃষ্টি-লকডাউন, তবুও সড়কে সরব উপস্থিতি

আগ্রাবাদ ইপিজেড জিইসি মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে যানজট স্বাস্থ্যবিধি মানারও গরজ নেই কারো

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ

সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল নগরীতে। চলমান ‘কঠোর বিধিনিষেধের’ সপ্তম দিনের এই বৃষ্টি ভেজা দিনেও ঘরবন্দী থাকেনি মানুষ। নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার, টেরিবাজার, হাজারী গলি, আসকারদীঘির পাড়, পাথরঘাটা, কোতোয়ালীর মোড়, আগ্রাবাদ, বাদামতলী মোড়, টাইগারপাস এলাকায় দেখা গেছে মানুষের সরব উপস্থিতি। পুলিশ সদস্যরা জানালেন, বাইরে বের হওয়ার যেসব কারণ মানুষ দেখাচ্ছে তাতে বেশির ভাগকেই আটকানো যাচ্ছে না। তবে কারও উত্তর সন্তোষজনক না হলে ‘আরও ভালো ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ’ করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকালে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে গণপরিবহন না চললেও আগের দিনগুলোর তুলনায় সড়কে মানুষ, রিকশা, যানবহন অনেক বেড়েছে। বৃষ্টি এবং কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কাজে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। সেই সঙ্গে যানবাহনও বেড়েছে সড়কে। করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ায় শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও খুব বেশি গরজ নেই মানুষের। এখনও মাস্ক দেখা যাচ্ছে না অনেকের মুখে। রেয়াজউদ্দিন বাজারে বাজার করতে আসা আহমেদ হোসেন আজাদীকে বলেন, ‘মানুষ সচেতন হচ্ছে না। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও তাদের মধ্যে কোনো বোধ সৃষ্টি হচ্ছে না। লকডাউনেও এভাবে মানুষজন রাস্তায় বের হলে সরকারের কী করার আছে?’
আবার কোতোয়ালীর মোড়ে কথা হওয়া নজরুল ইসলাম বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, কিছু কিছু অফিস ছাড়া অন্যগুলো খোলা আছে, তাহলে তো সড়কে মানুষ বের হবেই, লকডাউন একেবারে কঠোর হলে সব কিছুই বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের অফিস খোলা, না গেলে কি চাকরি থাকবে? তাহলে আমাদের মতো মানুষের তো বের হতেই হবে। এখন যেহেতু অফিস যেতে হবে তাই কেউ হেঁটে যাচ্ছে, কেউ রিকশায় যাচ্ছে। এছাড়া কর্মজীবী মানুষও বের হয়েছে কাজের আশায়।
গত কয়েক দিন দেখা না গেলেও গতকাল সড়কে দেখা মিলেছে দুই একটি সিএনজি টেক্সিও। এমন এক সিএনজি চালক আহমদ হোসেন। তিনি বলেন, কয়দিন আর ঘরে বসে থাকবো? বাইরে বের হলে ট্রাফিক পুলিশের মামলা-হয়রানি, তবুও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে বের হয়েছেন বেশ ক’জন চালক। ঘরে খাবার নেই, যে কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের বের হতে হয়েছে। লকডাউনেও অনেক অফিস, কর্মক্ষেত্র খোলা আছে তাই সকালে সড়কে মানুষের প্রচুর উপস্থিতি। তারা গণপরিবহনের জন্য হাহাকার করছেন। স্বল্প দূরত্ব হলে রিকশায় যেতে পারছেন, কিন্তু যাদের অফিস বা কর্মক্ষেত্র দূরে অথবা জরুরি প্রয়োজনে কিছুটা দূরত্বে যেতে হবে, সে ক্ষেত্রে মানুষ কী করবে। এদিকে আমাদেরও ঘরে খাবার নেই, তাই বাধ্য হয়েই বের হয়েছি। বাইরে এসে দেখা যাচ্ছে সড়কে মানুষের প্রচুর উপস্থিতি, শুধু চলছে না গণপরিবহন।
চেরাগীর মোড়ে রিকশা চালক মোতালেব বলেন, প্রথম দুই-তিন দিন লকডাউনের কার্যকারিতা ছিল সড়কে। এরপর থেকে মানুষ কাজে বের হচ্ছে। প্রথম দুই-তিনদিন তো তেমন ট্রিপই পাইনি। এরপর থেকে ট্রিপ পাচ্ছি ভালোই। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি, তবুও মানুষের উপস্থিতি কম নেই।
নগরীতে প্রবেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ পথ সিটি গেট ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় দেদারসে ১/২ জন করে আরোহী নিয়ে মোটর সাইকেল চলছে। শহরতলীতে চলছে সিএনজি টেক্সিও। আবার বাসের সামনে গার্মেন্টসের স্টিকার লাগিয়ে উপজেলা থেকে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। নগরীতে ঢুকছে বিভিন্ন গণপরিবহনও।
দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী যানবাহন নগরে প্রবেশ করছে বাধা ছাড়াই। আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী কাগজপত্র দেখে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। তবে রাস্তার মোড়ে ও অলি-গলিতে চলছে মানুষের আড্ডা। কাঁচাবাজারগুলোতে চলছে জমজমাট বিকিকিনি। খোলাবাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রির খবরে অনেকে এসেছেন রাস্তায়। এছাড়া ব্যাংকিং লেনদেন করতে লাইন ধরতে হয়েছে ব্যাংকগুলোর সামনে।
তবে নগর পুলিশের দাবি, প্রশাসনের জরিমানার কারণে বিনা কারণে বাইরে বের হওয়া মানুষের সংখ্যা কমেছে। বিভিন্ন কারখানা খোলা থাকায় পোশাক শ্রমিকদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। এ কারণে শহর জুড়ে রিকশাই বেশি চলাচল করছে। মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া যাত্রী বহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ৪৭ মামলায় ১৩ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেছেন। অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিল্লুর রহমান নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ৪টি মামলায় ১৩০০ টাকা, খুলশী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিবেদিতা চাকমা ৬টি মামলায় ১১০০ টাকা, খুলশী ও বায়েজিদ এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হাসান ২টি মামলায় ৮০০ টাকা, হালিশহর এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিবি করিমুন্নেছা ৬টি মামলায় ২৭০০ টাকা, চান্দগাঁও এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী ১২টি মামলায় ২৩৫০ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তাহমিনা সারমিন আগ্রাবাদ ও হালিশহর এলাকায় ৭টি মামলায় ১১০০ টাকা, চকবাজার এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন ১টি মামলায় ১০০০ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ জিইসি এলাকায় ৫টি মামলায় ১৮০০ টাকা এবং কোতোয়ালী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন ৪টি মামলায় ১০৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘরে গৃহবধূর লাশ রেখে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক
পরবর্তী নিবন্ধহাইতির প্রেসিডেন্টকে নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা