বৃষ্টির পর জেলেদের নতুন আশা

৫ মাস অপেক্ষার পর এবার ধরা পড়তে পারে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২২ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে মাছ ধরা পড়ছে আগের বছরগুলোর একই সময়ের তুলনায় অনেক কম। এমনকি সম্প্রতি পরিস্থিতি এতই নাজুক হয়ে পড়েছে যে, গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কক্সবাজারের অধিকাংশ ট্রলারই ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে। জেলেদের অপেক্ষা মূলত বৃষ্টির। কারণ বৃষ্টির পর গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উপকূলমুখী হবে ইলিশসহ অন্যান্য জাতের মাছ। আর তখনই সাগরে জাল ফেলবে তারা। গত বুধবার দুপুরের এক পশলা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের জেলেদের সেই প্রত্যাশাই পূরণ হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বুধবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বিগত চব্বিশ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৬ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৮ মিলিলিটার, ঢাকায় ৬০ মিলি ও রংপুরে ৬৫ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্নস্থানে কয়েক মিলি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে আরো বৃষ্টিপাত হতে পারে। জেলে ও ট্রলার মালিকদের মতে, ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত বছর অক্টোবরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে সাগরে প্রত্যাশিত মাছের দেখা মিলছে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, জেলে-বহদ্দারদের প্রত্যাশা ছিল- বৃষ্টি হলেই গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উপকূলমুখী হবে ইলিশসহ অন্যান্য জাতের মাছ। আর তখনই ফের সাগরে মাছ ধরতে যাবে তারা। গত বুধবার দুপুরের এক পশলা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের জেলেদের সেই প্রত্যাশাই পূরণ হয়েছে। এবার মাছ ধরা পড়বে, এ আশায় প্রস্তুতিও শুরু করেছে জেলে-বহদ্দাররা। একই তথ্য জানান দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম ও শামলাপুরের বোট মালিক আবুল মনসুর।
শামলাপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাস্টার এম এ মনজুর বলেন, টেকনাফ উপকূলের বাসিন্দাদের অধিকাংশই সাগরে মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত কয়েক মাসে সাগরে তেমন মাছ ধরা না পড়ায় এখানকার মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম বলেন, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৩ মাসের বেশি সময় সাগরে বড় বড় রূপচান্দাসহ চান্দা জাতীয় মাছ পাওয়া যায়। যেগুলোর দাম ইলিশের চেয়ে কম নয়। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারিতে মাত্র এক মাসই রূপচান্দা ধরা পড়ে। মার্চের শুরু থেকে সাগরে মাছের আকাল দেখা দেওয়ায় জেলেরা মাছধরা বন্ধ রেখে বোটগুলো ডকে তুলে রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, গত পাঁচ মাসে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটে যে পরিমাণ মাছ সাগর থেকে ধরে আনা হয়েছে, তা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম। এমনকি, এমন আকাল গত ২৫ বছরেও দেখা যায়নি। তিনি জানান, ফিশারিঘাটে ইলিশ ধরার মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ১শ থেকে দেড়শ মেট্রিক টন ইলিশ আসে। আর মন্দা মৌসুমেও আসে অন্ততপক্ষে ২০ থেকে ২৫ টন ইলিশ। যারমধ্যে স্থানীয় বাজারে প্রায় ৩ টন ইলিশ বিক্রি হয়, আর বাকি ইলিশগুলো পাঠানো হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু গত ৫ মাসের মধ্যে ৫/৬ দিনের কথা বাদ দিলে দৈনিক গড়ে ৫ টন ইলিশও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসেনি। আর গত এক মাস ধরে ৩ টনের বেশি ইলিশ আসছে না।
তবে সাম্প্রতিককালে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরা পড়ার হার কমে যাওয়ার ঘটনা মানতে নারাজ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, কক্সবাজারের বাজারগুলো ছাড়াও রাস্তায় ফেরী করে প্রতিদিন ইলিশ বিক্রি হতে দেখা যায়। মাছ ধরা কম পড়লে এটা কখনও সম্ভব হত না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান মনে করেন, বঙ্গোপসাগরে সবসময় ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু সম্প্রতি যেকোনো কারণে উপকূলীয় বিচরণক্ষেত্র থেকে গভীর সাগরে মাইগ্রেট করেছে ইলিশ। এত দূর থেকে মাছ ধরে অনেকেই পোষাতে পারে না। তাই হয়তো অনেক ট্রলার মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে। তবে বুধবারের এক পশলা বৃষ্টির কারণে এখন মাছের দল উপকূলের নদ-নদীগুলোর মোহনার কাছাকাছি চলে আসবে এবং বেশি পরিমাণে জেলেদের জালে ধরা পড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলবণমাঠে কালবৈশাখীর ক্ষতি কাটিয়ে বাম্পার উৎপাদনের আশা
পরবর্তী নিবন্ধসুদ মওকুফের ঢালাও সুযোগে লাগাম