বৃষ্টিতে এক সপ্তাহ আগেই শেষ লবণ চাষের মৌসুম

কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১১ মে, ২০২১ at ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিতে এক সপ্তাহ আগেই শেষ হয়ে গেল চলতি বছরের লবণ চাষের মৌসুম। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু চাষী ফের মাঠে নামতে পারে। সাধারণত, বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সময়কে লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। তবে আবহাওয়ার কারণে সময়ের পরিধি বাড়ে কমে।
আবহাওয়া ভাল থাকায় গতবছর নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত আরো ১০ দিন বেশি লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু এ বছর উৎপাদন মৌসুম শেষ হয়ে গেছে নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ আগেই। বিসিকের মতে, ৯ মে পর্যন্ত দেশে লবণ উৎপাদন ১৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ লাখ ১৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কঙবাজারে প্রায় ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত বিসিকের সর্বশেষ মাঠ জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। তবে শনি ও রোববার দুই দিনে আরো ৩০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি লবণ উৎপাদিত হয়েছে বলে আশা করছেন কঙবাজার বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আগাম বৃষ্টিতে অনেক চাষী মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। এ কারণে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে। তবে আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু চাষী ফের মাঠে নামতে পারেন বলে জানান তিনি।
বিসিক সূত্র জানায়, দেশের ৯০ শতাংশ লবণ কঙবাজারে উৎপাদিত হয়। কঙবাজার জেলার রামু ছাড়া বাকি সাত উপজেলা যথাক্রমে সদর, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় নিম্নভূমিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে লবণের চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু গতকালের ভারী বৃষ্টিতে যেন আগাম থেমে গেল লবণ মৌসুম।
কঙবাজার আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সোমবার ভোররাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কঙবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর আগে চলতি মাসের ৪ তারিখ ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। গত মৌসুমে কঙবাজারে সর্বশেষ বৃষ্টিপাত হয় নভেম্বরের ৪ তারিখ। ওইদিন মাত্র ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় কঙবাজারে। এর টানা ৫ মাস পর চলতি বছরের ৪ এপ্রিল কঙবাজারে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়।
বিসিকের মতে, হালকা বৃষ্টিপাতে লবণ চাষের তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে মারাত্মক ক্ষতি হয়। এক দিনের বৃষ্টিপাতে অন্তত ৩ দিনের লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কাশেম বলেন, সোমবার রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে মৌসুমী সবজি ও কৃষিক্ষেতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এতে সবজির বাজারে বড় কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।
পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিমের মতে, বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি বনাঞ্চলের উদ্ভিদগুলো আরো সবুজ ও সবল হয়ে উঠবে। গজিয়ে উঠবে নতুন লতাপাতা। এতে বৃদ্ধি পাবে দেশের বনজ সম্পদ।
এদিকে এই বৃষ্টিপাতের ফলে কঙবাজারের ভূ-গর্ভস্থ পানীয় জলের মজুদের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ভূ-তত্ত্ববিদ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, প্রতি বছর খরা মৌসুমে কঙবাজার শহরের একাংশের ভূ-গর্ভস্থ পানীয় জলে জনস্বাস্থ্যের জন্য সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত লবণ ও ইউরেনিয়াম-থোরিয়ামের মত ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া যায়। বৃষ্টিপাত হলে সেই মজুদগুলো পুনরায় রিফিল হয়ে পানিতে ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা কমে আসে।
এই বৃষ্টিপাতের ফলে বঙ্গোপসাগরের রেড টাইড বা লাল জোয়ার পুরোপুরি দূর হয়ে যাবে বলে আশা করেন কঙবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, গত ৬ দিনে দুই বার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গড় তাপমাত্রাও কমেছে। এর ফলে ক্ষতিকর এলগাল ব্লুম মিলিয়ে গেছে। যার কারণে কঙবাজার উপকূলে বিষাক্ত লাল জোয়ারের আশংকা আর নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরব সাগরে বিপুল রুশ-চীনা অস্ত্রের চালান জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র
পরবর্তী নিবন্ধস্বর্ণের দাম বাড়ল ভরিতে ২,৩৩৩ টাকা