গত কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত সেলিম মাস্টারের খোঁজখবর নিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীতে মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ায় চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার হোমে উপস্থিত হয়ে মন্ত্রী চট্টগ্রামের নিজ নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ার সাবেক শিক্ষক সেলিম মাস্টারের পাশে কিছু সময় অবস্থান করেন ও তার অসহায় অবস্থার উত্তরণে ইতিমধ্যেই নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান। এসময় তিনি সেলিম মাস্টারকে পাঞ্জাবি এবং নগদ টাকা উপহার দেন। পাশাপাশি চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারের হাতেও তার প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক সহায়তার একটি চেক প্রদান করেন। ড. হাছান মাহমুদ আশ্রমের কক্ষ ঘুরে অন্যান্য বাসিন্দাদেরও খোঁজ–খবর নেন।
মন্ত্রী সেলিম মাস্টারের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার কোথায় জিজ্ঞেস করলে অসুস্থ সেলিম মাস্টার নিশ্চিত করেন পারুয়ায় তিনি শিক্ষকতা করলেও চন্দ্রঘোনা বনগ্রামে ঘর বেঁধে থাকতেন। হাছান মাহমুদকে নিজের ছাত্র দাবি করে ইতিপূর্বে দেয়া সেলিম মাস্টারের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে কথোপকথনকালে তার ভুল ভাঙিয়ে দেন মন্ত্রী। সেলিম মাস্টার ১৯৮০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। তিনি রাঙ্গুনিয়াতেই শিক্ষকতা করেছেন। অন্যদিকে ড. হাছান চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করেছেন, রাঙ্গুনিয়ায় পড়েননি। এবং সেলিম মাস্টারের শিক্ষকতা জীবন শুরুর আগেই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে যান। তাই সেলিম মাস্টার তার শিক্ষক নন বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
সেলিম মাস্টারের দুই কন্যা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দুই মেয়ে তার বাবার সাথে যা করেছেন তা যথেষ্ট অন্যায় হয়েছে। তার কন্যাদ্বয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করে বললেও ঠিকমতো নাম বলতে পারছেন না। তারপরও এই দুই মেয়েকে খুঁজে পেতে আমার অফিসের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে খবর নেয়া হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়ায় আমার নিজ সংসদীয় এলাকাতেও তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
সেলিম মাস্টার প্রসঙ্গে বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক মিল্টন সমাদ্দার মন্ত্রীকে বলেন, ২০১৭ সালের দিকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি মাজারের সামনে অসুস্থ ও রুগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকা সেলিম মাস্টারের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তাকে আশ্রমে নিয়ে আসা হয়। এসময় তার প্রশ্রাবের রাস্তায় বড় সাইজের হার্নিয়া ছিল। পরবর্তীতে তার অবস্থা দেখে চিকিৎসার আগ্রহ দেখায় চট্টগ্রামের র্যাব–৭। পরে র্যাব–৭ এবং র্যাব–৪ এর সহায়তায় তার হার্নিয়ার অপারেশন হয় এবং এখন পর্যন্ত তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমে আছেন।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা সন্তানের উচিত তাদের বাবা–মা যেমনই হোক না কেন তাদের সেবা করা। তাদের সাধ্যমতো যতটুকু সম্ভব দেখাশুনা করা। আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু তাই করে থাকে। যারা করে না, তারা প্রথমত একটি সামাজিক অন্যায় করছে, দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ করছে। এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।
বৃদ্ধাশ্রমটির পরিচালক প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মিল্টন সমাদ্দার যা করছেন তা অনন্য অসাধারণ কাজ। আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এবং বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ইতিমধ্যে তাকে সমাজ কল্যাণ পুরস্কার এবং ইয়ুথ এওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়ার সাবেক স্কুল শিক্ষক মো. সেলিম মিয়ার পেনশনের ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার দুই মেয়ে তাকে চিকিৎসার কথা বলে চট্টগ্রাম বায়েজিদ বোস্তামি মাজার গেট সংলগ্ন সড়কে ফেলে চলে যায়। বাবার সঙ্গে মেয়েদের অমানবিকতার ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
মিল্টন সমাদ্দার জানান, ২০১৪ সালে একজন অসহায় বৃদ্ধকে নিজের বাসায় নিয়ে আসার পর থেকে মনের তাগিদে তিনি এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ১৫ জন অনাথ শিশু, ২০ জন বিশেষ শিশু–কিশোর ও ১৩৫ জন বৃদ্ধ–বৃদ্ধা সম্পূর্ণ বিনা খরচে বিভিন্ন মানুষের ব্যক্তিগত দানের মাধ্যমে পরিচালিত এই চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার হোমে আছেন।