বর্তমান সমাজে একটি হতাশাজনক চিত্র হলো বৃদ্ধাশ্রমে বড়লোকদের পিতা–মাতাদের ঠাঁই দেওয়া। যারা এক সময় সন্তানদের সুখের জন্য দিন–রাত পরিশ্রম করেছেন, তাদেরই শেষ বয়সে নির্বাসন দেওয়া হয় একাকিত্বের কফিনে। ধনী সন্তানরা নিজেদের ব্যস্ততা কিংবা ভোগ–বিলাসের অজুহাতে পিতা–মাতাকে পরিবার থেকে আলাদা করে রাখে, যেন তারা এক একজন বোঝা। অথচ এই বয়সে তাঁদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় স্নেহ, নিরাপত্তা ও পারিবারিক উষ্ণতা। বৃদ্ধাশ্রমে তাঁদের চাহিদা পূরণ হলেও মনের অভাব পূরণ হয় না। সন্তানদের উচিত, বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠিয়ে নিজ ঘরে তাঁদের মর্যাদা ও ভালোবাসা দিয়ে রাখা। এতেই মানবতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের প্রকৃত বহিঃপ্রকাশ ঘটে। পিতা–মাতা আমাদের জীবনের অমূল্য রত্ন। তাঁদের অবদান ছাড়া কোনো সন্তান পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে না। ছোটবেলায় যেমন করে তাঁরা আমাদের রাত জেগে দেখভাল করেছেন, না খেয়ে খাইয়েছেন, তেমনি তাঁদের বয়সের শেষ সময়ে আমাদের কর্তব্য হলো তাঁদের স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখা। অনেক সন্তান পিতা–মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে বোঝা মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অমানবিক। বরং এই সময়ে তাঁদের একটু যত্ন, একটু কথা, একটু হাসিমুখই হতে পারে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। ভরণ–পোষণ শুধু দায়িত্ব নয়, এটি একজন সন্তানের প্রতি পিতা–মাতার ত্যাগের প্রতিদান। তাই আসুন, তাঁদের অবহেলা না করে ভালোবাসায় রাখি, বৃদ্ধাশ্রমে না রেখে হৃদয়ের মাঝে রাখি, যেন সমাজে ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।