বুয়েটের সমীক্ষা প্রতিবেদনের পর সংস্কারের টেন্ডার

কালুরঘাট সেতু দিয়ে উচ্চ গতির ট্রেন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

পুরনো কালুরঘাট সেতুটি সংস্কারের মাধ্যমে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালানোর উপযোগী করে তোলার লক্ষে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। গত ৪ অক্টোবর থেকে ফিল্ড ভিজিটসহ স্টাডির কাজ শুরু করেছেন তারা। বুয়েটের সমীক্ষা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে বিদ্যমান পুরনো সেতুটি সংস্কার করে ২০২৩ সালে কক্সবাজার রুটে চালানো হবে ট্রেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, পুরনো কালুরঘাট সেতুটি সংস্কারের জন্য গত বছর রেল কর্তৃপক্ষ বুয়েটের দ্বারস্থ হলে রেল কর্তৃপক্ষের আহ্বানে বুয়েট সাড়া দিয়ে গত বছরের ৯ অক্টোবর বিশেষজ্ঞ দল কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করে। এরপর তারা সেতুর ত্রুটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদনে তারা সেতুর ৬টি ত্রুটির কথা উল্লেখ করে জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামতের পরামর্শ দেন।
সেতুটি মেরামত করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য সম্পূর্ণ সমীক্ষা চালানোর জন্য এসময় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এই পরামর্শ ফি নিয়ে বুয়েটের সাথে রেল কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়। কয়েকটি বৈঠক সমঝোতা ছাড়া শেষ হলেও দীর্ঘ দর কষাকষির পর সেপ্টেম্বরে ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকায় এই সেতু সংস্কারের সমীক্ষা করতে রাজি হয় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। পরবর্তীতে গত ৪ অক্টোবর বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম সাইফুল আমিনের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি বিশেষজ্ঞ দল কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করেছেন। গতকালও তারা সেতু এলাকা পরিদর্শন করে সমীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া আজাদীকে জানান, বিদ্যমান কালুরঘাট (পুরনো সেতু) সেতুটি সংস্কারের জন্য বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল কাজ শুরু করেছে। তারা গত ৪ অক্টোবর থেকে ফিল্ড ভিজিটসহ স্টাডির কাজ শুরু করেছেন। আজকেও (গতকাল বুধবার) তারা সেতু এলাকায় গিয়েছেন। তাদের একটি টিম চট্টগ্রামে থাকবেন। বুয়েটের সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা সেতুর সংস্কার কাজের টেন্ডার আহ্বান করবো।
রেলওয়ের সেতু প্রকৌশলী দপ্তর থেকে জানা গেছে, জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু দিয়ে আগামী ৫-৬ বছর (নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত) কঙবাজার রুটের উচ্চ গতির ট্রেন চলানোর জন্য বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের দেয়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে লক্কর ঝক্কর পুরনো কালুরঘাট সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলছে কোনো মতে। তাও শুধুমাত্র পটিয়া পর্যন্ত দুটি ডেমু ট্রেন চলাচল করছে। দোহাজারী রুটের সব লোকাল ট্রেন চলাচল প্রায় ২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
২০২৩ সালের জুলাই মাসের পর থেকে কঙবাজার রুটে পর্যটকবাহী এবং যাত্রীবাহী ও লোকাল ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য এখন পুরোদমে চট্টগ্রাম-কঙবাজার রেল লাইনের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৫১ কিলোমিটার রেল লাইন বসেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি জানান, বর্তমানে কালুরঘাট সেতু দিয়ে ১০ টন এঙেল লোড বিশিষ্ট ছোট লোকোমোটিভ চলাচল করে। বুয়েটের পরার্মশে সেতুর গার্ডার ও অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কার করে ১৫ টন এঙেল লোড বিশিষ্ট লোকোমোটিভ ব্যবহার করে আগামী বছর কঙবাজার ট্রেন চালানো হবে।
এই ব্যাপারে কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, পুরনো কালুরঘাট সেতুকে সংস্কার করে কঙবাজার রুটে ট্রেন চালানোর জন্য সমীক্ষা চালাতে বুয়েটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের আগে সেতু মেরামতের কাজ শেষ হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আমরা কালুরঘাট সেতু দিয়ে কঙবাজার রুটে ট্রেন চালাব। প্রথম দিকে বেশি না হলেও প্রতিদিন একটি ট্রেন চলাচল করবে। সেতুটি মেরামতের পর ছোট মিটারগেজ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে।
নতুন সেতুর ব্যাপারে তিনি জানান, নতুন কালুরঘাট সেতুর নকশা চূড়ান্ত হওয়ায় এখন নতুন নকশায় প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তৈরি করা হবে। তারপর কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) সাথে লোন এগ্রিমেন্ট হবে। এরপর একনেকে উঠবে। একনেকে অনুমোদনের পর আমরা টেন্ডারে চলে যাব। ঠিকাদার নিয়োগ হবে। পরামর্শক নিয়োগ হবে। এসব আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করতে ২০২৩ সাল চলে যাবে। ২০২৪ সালের শুরুতে আমরা সেতুর কাজ শুরু করতে পারব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্দোলনের ফল সহসা ঘরে আসবে : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধচাম্বলে নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হক জয়ী