বিজয়ের ৫৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ভিন্নধর্মী উৎসব ‘হ্যাপি স্ট্রিট’ আয়োজন করেছে বুরহানী বিএসআরএম উচ্চ বিদ্যালয়। নগরের বায়েজিদ থানার শেরশাহ বাংলাবাজার ডেবারপাড় এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টির মাঠ এবং স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় গতকাল শুক্রবার এ ‘হ্যাপি স্ট্রিট’ উৎসব পালিত হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে স্কুলের মাঠ ও সংলগ্ন সড়কে নানা ধরনের ক্রীড়া উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়। এতে সড়কটি শিশু–কিশোরদের জন্য একটি নিরাপদ খেলার মাঠে রূপ নেয়, যে মাঠ ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। বুরহানী বিএসআরএম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় শিশু–কিশোররাও সেখানে মেতে উঠে আনন্দে। এ উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয় আশপাশের চারটি স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফ্রোবেল একাডেমির প্রিন্সিপাল ও ডিরেক্টর হাওরা তেহসিন জোহায়ের, বিএসআরএম গ্রুপের পরিচালক ও ফ্রোবেল প্লে স্কুল ও ফ্রোবেল একডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাবিন আমের, বিএসআরএম গ্রুপের পরিচালক ও সিএসআর ডিপার্টমেন্টের প্রধান রুনি রহমান ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের।
ফ্রোবেল একাডেমির প্রিন্সিপাল ও ডিরেক্টর হাওরা তেহসিন জোহায়ের বলেন, শিশুদের খেলাধূলার জায়গা দিন দিন কমে যাচ্ছে। খুব কম জায়গা রয়েছে যেখানে বিনামূল্যে আমরা সমাজের সবাই একসঙ্গে আনন্দের সাথে কিছু সময় কাটাতে পারি। তাই আমরা বিজয় দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয় এলাকা এবং তার পাশের সড়কে খেলাধূলার নানা আইটেম দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করার চেষ্টা করেছি। এখানে শিশুরা যতবার ইচ্ছে ততবার খেলতে পারে।
বিএসআরএম গ্রুপের পরিচালক এবং সিএসআর ডিপার্টমেন্টের প্রধান রুনি রহমান বলেন, সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সন্তানরা শতভাগ ফ্রি’তে বুরহানী বিএসআরএম উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। স্কুলে পড়ালেখার জন্য আরো যেসব সুবিধা লাগে, বই–খাতার পাশাপাশি তারা কিভাবে আরো উন্নতি করতে পারে সে বিষয়েও সহযোগিতা করা হয়।
আয়োজকরা জানান, ‘হ্যাপি স্ট্রিট’ আধুনিক স্মার্ট স্ট্রিট ধারণার একটি অংশ, যেখানে ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সকল সমপ্রদায়ের মানুষের জন্য উন্মুক্তভাবে আনন্দ ও খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বুরহানী বিএসআরএম উচ্চ বিদ্যালয় সমাজের সকল স্তরের শিশুদের জন্য নিরাপদ সড়ক নির্মাণ এবং বৈষম্যহীন একতাবদ্ধ সুখী সমাজ গঠন নিশ্চিত করার জন্য সবার সহযোগিতার অনুরোধ জানান। এই অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল উৎসবে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, দড়িযুদ্ধ, ব্যাডমিন্টন, ট্যানগ্রাম, রিং গেম, মার্শাল আর্ট, ম্যাজিক শোসহ নানা চমকপ্রদ খেলায় অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
দড়িযুদ্ধে অংশ নেয়া বুরহানী বিএসআরএম স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ইয়াছিন আরাফাত আজাদীকে বলেন, অনেক মজা লাগছে। তানভীর নামে নার্সারির এক ছাত্র জানান, ম্যাজিক দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে।
এদিকে উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় দর্শনার্থীরাও ভিড় করেন সেখানে। নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাদের পরিবার–পরিজন, শিশু–কিশোর ও বন্ধু–বান্ধবকে নিয়ে উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। আনন্দ ও উচ্ছ্বাস ভাগাভাগি করেন পরষ্পরের সাথে। তারা এমন একটি সফল ও সৃষ্টিশীল উদ্যোগের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
বদিউল আলম নামে এক দর্শনার্থী আজাদীকে বলেন, স্ট্রিট উৎসব খুব চমৎকার একটি আয়োজন। এ স্কুলে যারা পড়ে তারা সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সন্তান। ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় তাদের মা–বাবা চাইলেও সন্তানকে বর্ণিল একটি দিন উপহার দিতে পারে না। কিন্তু সেই দিনটি উপহার দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এজন্য তাদের ধন্যবাদ দিতে হয়।
উল্লেখ্য, বুরহানী বিএসআরএম উচ্চ বিদ্যালয়ে নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক শিশুদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও অসামপ্রদায়িক চেতনা গড়ে তোলায় গুরুত্বারোপ করে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে স্কুলটি। বর্তমানে বিদ্যালয়টির ঐতিহ্য ২০ বছর পূর্তি লগ্নে দাড়িয়েছে এবং অত্র কমিউনিটিতে তৈরি করছে শ্রেষ্ঠত্বের এক অনন্য নিদর্শন।












