বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হোক

| শুক্রবার , ৫ জুলাই, ২০২৪ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস শেষ করা লন্ডনের রয়েল কলেজ অব সার্জনসে এফ, আর, সি এস ফাইনাল পরীক্ষার অল্প কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ঘৃণাভরে ছিড়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিলেন যে মানুষটি তিনি আর কেউ নন, চট্টগ্রামের রাউজানের কোয়েপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের সনদ নিয়ে ভারতীয় ভিসা সংগ্রহ করে ভারতের আগরতলার সন্নিকটে বিশ্রামগঞ্জে ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে অসংখ্য যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের চিকিৎসাসেবায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গরিব দুঃখী মেহনতি মানুষের চিকিৎসা সেবার সুযোগ সৃষ্টি করে গণমানুষের আপনজনে পরিণত হয়েছিলেন। জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়নে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে দেশের ওষুধ শিল্পকে বিদেশি বেনিয়াদের বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত করে ওষুধ উৎপাদনে দেশকে স্বনির্ভরই শুধু করেননি, ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রীত্বের লোভনীয় প্রস্তাব বিনয়ের সাথে গ্রহণ না করে জাতীয় যে কোন সংকটে প্রত্যক্ষভাবে কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান না করেও তাঁর বিশ্বাস এবং ভাবনা চিন্তা প্রকাশ্যে দৃঢ়চিত্তে জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেশকে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। নারী মুক্তির বিষয়ে কথামালায় সীমাবদ্ধ না থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিরাটসংখ্যক নারীকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা এই কীর্তিমান মানুষটি আজ থেকে একবছর আগে ২৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ১১ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে নিজের হাতে গড়া গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানবতার কল্যাণে নিজেকে আত্মনিবেদিত করার আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে এই পৃথিবীকে চিরবিদায় জানিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নাগরিক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং নারী নেত্রীসহ বিশিষ্টজনেরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে আয়োজন কমিটির পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব করা হলে হলভর্তি উপস্থিত শ্রোতারা প্রস্তাবটির প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রকাশ করে এই ব্যতিক্রমী মানুষটির স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুবিবেচনা প্রত্যাশা করেন।

মোজাফ্‌ফর আমান,

ফোর্‌রখ সেন্টার,

নজুমিঞাহাট, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী : বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী
পরবর্তী নিবন্ধআত্মহত্যা নয় বরং আত্মত্যাগের মনমানসিকতায় বাঁচুন