বীর মুক্তিযোদ্ধার দাফনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অবহেলার অভিযোগ

| বৃহস্পতিবার , ২২ এপ্রিল, ২০২১ at ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

খুলনায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দাফনের আগে যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে ‘অবহেলার’ অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের বিরুদ্ধে। পরিবারের অভিযোগ, তেরখাদা উপজেলা সদরের দক্ষিণপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আব্দুস ছালামের কফিন জাতীয় পতাকায় আবৃত করা হয়নি, বিউগল বাজিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়নি। রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে যে কর্মকর্তাদের আসার কথা ছিল, তারা না এসে পাঠিয়েছেন অধস্তনদের, সেখানেও নিয়ম মানা হয়নি।
আব্দুস ছালাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল হিসেবে ১৯৯৮ সালে অবসরে যান। তার স্ত্রী সহিতোন নেছা বলেন, এমন কাজের মাধ্যমে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানের বদলে অসম্মান জানানো হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল খুলনার তেরখাদা উপজেলার বিড়ি আজগড়া গাউসবাড়ীর মোড় এলাকায় ট্রলি ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ৭০ বছর বয়সী আব্দুস ছালামের। ওইদিন সন্ধ্যায় স্থানীয় মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য স্থানীয় ইউএনও এবং থানার ওসির উপস্থিত থাকার কথা। রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর সময় বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিন জাতীয় পতাকায় আবৃত করতে হবে। সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তারা কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুলিশ সদস্যরা যখন সশস্ত্র সালাম জানাবেন, তখন বিউগলে করুণ সুর বাজাতে হবে। ইউএনও বা ওসি রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকলে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে যথাক্রমে সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসি ল্যান্ড) এবং থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন।
কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছালামের শেষকৃত্যে ইউএনও বা ওসি উপস্থিত ছিলেন না। ইউএনওর পরিবর্তে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এবং থানা থেকে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে ছয়জন কনস্টেবল রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে এসেছিলেন। আর গার্ড অব অনার দেওয়ার সময় কফিন জাতীয় পতাকায় আবৃত করা হয়নি এবং বিউগলও বাজানো হয়নি বলে অভিযোগ। সেদিন রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার সময় তেরখাদা সদর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নেছারউদ্দীন মোল্লা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনিও বলেছেন একই কথা। তিনি বলেন, আসলে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। রাষ্ট্রীয় রীতিনীতির নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করা হয়েছে। কফিন পতাকা দিয়ে আবৃত করা হয়নি, বিউগলও বাজানো হয়নি। পরে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করলে একটি পতাকা লাশের ওপর দিয়ে প্রশাসনের লোকেরা কেবল ছবি তুলেছে।
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তেরখাদা ইউএনও সাদিয়া ইসলাম বলেন, সেদিন আমি একটি রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত ছিলাম। যে কারণে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আব্দুস ছালামকে ‘যথাযথ নিয়ম মেনে’ রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়ে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ইউএনওর প্রতিনিধি হিসেবে সেদিন দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন তেরখাদা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগামী বাজেট দরিদ্রদের জন্য-অর্থমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকুমিরায় ৫০ কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ