মোহাম্মদ হামিদুর রহমান (১৯৫৩–১৯৭১)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। স্বদেশের জন্য উৎসর্গ করেছেন নিজেকে। মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীর শ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাদের অন্যতম। তিনি সাত জন বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ (১৮)। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ১৯৫৩ সালের ২ রা ফেব্্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলাা কালিগঞ্জের খদ্দখালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আক্কাস আলী মণ্ডল ছিলেন ভূমিহীন কৃষক এবং মা কায়েদুননেসা ছিলেন গৃহিণী। সবার পরামর্শে বাবা তাকে ভর্তি করিয়ে দেন গ্রামের পাঠশালায়। দারিদ্রের কষাঘাতের মধ্যেও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। ৫ম শ্রেণি পাশ করে ভর্তি হলেন স্থানীয় নৈশ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। দারিদ্রতার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে লেগে গেলেন বাবাকে সাহায্যের কাজে। ১৯৭০ সালে যোগদান করেন মুজাহিদ বাহিনীতে। কর্মস্থলের আশেপাশে প্রশিক্ষণরত বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা সদস্যদের চৌকসতা ও সুশৃঙ্খলতা মুগ্ধ করে তাকে। ১৯৭১ সালের ২ রা ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে। প্রশিক্ষণের জন্য গমন করেন চট্টগ্রাম ইবিআরসিতে। ২৫ মার্চ বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ২০ বেলুচ রেজিমেন্টের সেনারা হামলা চালায় সেখানে। তার চোখের সামনেই হত্যা করে অসহায় ২৫০০ রিক্রুট এবং অন্যান্য বাঙালি সৈনিকদের বেশিরভাগকে। সেখান থেকে পালিয়ে পায়ে হেঁটে গমন করেন নিজ গ্রামে। মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে যোগ দেন যশোরের কাছে অবস্থানরত ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে। নিযুক্ত হন রান্নার কাজে। কিন্তু সম্মুখ যুদ্ধের প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণে তাকে লে. কাইয়ুমের রানার হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেবার সুযোগ দেওয়া হয়। বীরত্ব প্রদর্শন করেন কোদালকাঠি পাকিস্তানী অবস্থান আক্রমণে। ১৯৭১ সালের ২৮ শে অক্টোবর ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ধলই আক্রমণে সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার্থে শত্রুর বাঙ্কার ধ্বংস করতে গিয়ে শত্রুর মেশিনগান বাস্টের আঘাতে শাহাদত বরণ করেন। পরবর্তীতে সহযোদ্ধারা তার মৃতদেহ উদ্ধার করে আম্বাসার হাতিমারাছড়া গ্রামে দাফন করে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ‘ খেতাবে ভূষিত করে। শাহাদাতের ৩৬ বছর পর ১১ ই ডিসেম্বর ২০০৭ বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে তার দেহাবশেষ স্থানান্তর করে রাষ্ট্রীয় সম্মানে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়।