মুসলিম বিয়েতে দেনমোহরের বিপরীতে নিবন্ধনে বিয়ে নিবন্ধক বা কাজী যে টাকা আদায় করেন, তার বড় অংশ সরকারি কোষাগারে নেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। গতকাল রোববার সংসদ ভবনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়। গত মার্চ মাসে কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বিয়ে এবং তালাক নিবন্ধনে আলাদা ‘দুই ধরনের’ খাতা রেখে কাজীর বাড়তি ফি আদায় ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানো এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশও করা হয়েছে সভায়। খবর বিডিনিউজের।
রোববারের বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন পার্বত্য এলাকা ছাড়া দেশে ২০ লাখ ২০ হাজার ৭৪৯টি বিয়ে হয়েছে। এ সব বিয়ের দেনমোহরের পরিমাণ ৯০ হাজার ৯৪০ কোটি ৬৯ লাখ ৬ হাজার ৩৫১ টাকা। এই দেনমোহরের বিপরীতে কাজীরা আদায় করেছেন ১ হাজার ৫৬২ কোটি আট লাখ ৩৩ হাজার ৯৮৭ টাকা। এর মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে ৭ কোটি ৮৫ হাজার ৪৫৮ টাকা।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯-এ বলা আছে, একজন নিকাহ নিবন্ধক চার লাখ টাকা পর্যন্ত দেনমোহরের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার টাকার জন্য সাড়ে ১২ টাকা ফি নিতে পারবেন। দেনমোহর চার লাখের বেশি হলে এরপর প্রতি এক লাখ বা অংশ বিশেষের জন্য ১০০ টাকা নিবন্ধন ফি নিতে পারবেন। তালাক নিবন্ধনের ফি ৫০০ টাকা। একজন নিকাহ নিবন্ধক বা কাজী তার নিবন্ধন ফি হিসেবে বছরে সরকারি কোষাগারে ১০ হাজার টাকা এবং তা নবায়নের জন্য ৫ হাজার টাকা জমা দেন।
সংসদীয় কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘এই যে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় হচ্ছে, এখানে সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে খুব অল্প টাকা। এই টাকার একটা অংশ যাতে সরকারি কোষাগারে যেতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এখানে বিধিমালা পরিবর্তনের বিষয় আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতির বিষয় আছে। আইন মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো দেখবে।’
আর্থিক বিষয়গুলো ডিজিটালাইজড করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, এই কাজের জন্য মুলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন আইন ও বিধিমালায় সংশোধন দরকার হবে। এ বিষয়ে পর্যলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বিবাহ নিবন্ধন ফি সহজ করতে এবং জনভোগান্তি হ্রাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কাজীদের কার্যক্রম মনিটরিং করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত বৈষম্যবিরোধী আইন নিয়ে সুশীল সমাজ ও অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।