বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে এসে লাশ কলেজ ছাত্রী

হত্যা নাকি আত্মহত্যা

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ১৫ মার্চ, ২০২৩ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

বিয়ের দাবিতে সাতকানিয়ায় প্রেমিকের বাড়িতে এসে লাশ হয়ে ফিরলেন পেকুয়ার এক কলেজ ছাত্রী। গত সোমবার দিবাগত রাতে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বারদোনা মৌলভী পাড়ায় প্রেমিক আমিনুর রহমানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে প্রেমিক আমিনুরসহ পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছেন। আমিনুর রহমান সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বারদোনা মৌলভী পাড়ার মৃত শব্বির আহমদের পুত্র। প্রেমিক আমিনুর রহমানের দাবি, তার প্রেমিকা বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। আর কলেজ ছাত্রীর স্বজনদের দাবি, মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।

জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে কক্সবাজারের পেকুয়ার টৈটং এলাকার বাসিন্দা ওই কলেজ ছাত্রীর সাথে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বারদোনা মৌলভী পাড়ার আমিনুর রহমানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমিনুর বিভিন্ন সময়ে প্রেমিকাকে সাথে নিয়ে বেড়াতে গেছেন। গত সোমবার সকালে আমিনুর কলেজ ছাত্রীকে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যান এবং হোটেলে উঠেন। বিকালে কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে আমিনুর কাজ থাকার কথা বলে চকরিয়ায় নেমে যান। এরপর কলেজ ছাত্রীর মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেন। ওই কলেজ ছাত্রী ঘরে পৌঁছার পর প্রেমিকের মোবাইলে বারবার কল দিয়েও সংযোগ না পেয়ে রাতে সাতকানিয়ায় প্রেমিকের বাড়িতে চলে আসেন।

প্রেমিকের বাড়িতে আসার পর তার পরিবারের সদস্যরা জানান, আমিনুর বাড়িতে নেই। তখন কলেজ ছাত্রী আমিনুরের পরিবারের সদস্যদের তাদের প্রেমের সম্পর্ক, সকালে কক্সবাজারে যাওয়া এবং হোটেলে ওঠার বিষয়টি জানান। এজন্য বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করেন। এ সময় আমিনুরের বোনভগ্নিপতিসহ পরিবারের সদস্যরা গালিগালাজ ও মারধর করে তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। এরপর ওই কলেজ ছাত্রী সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছবুরের কাছে ফোন করে প্রেমিকের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন।

এদিকে গতকাল ভোরে প্রেমিক আমিনুরের বোন কলেজ ছাত্রীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে লোহাগাড়া থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।

সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছবুর বলেন, মেয়েটি রাতে আমাকে ফোন করে আমিনুরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকার কথা বলেছে। তাকে প্রেমিক আমিনুরের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছে। তখন আমি তাকে অভিভাবকদের নিয়ে আসতে বলেছি। সকালে শুনেছি মেয়েটি মারা গেছে। তবে কীভাবে মারা গেছে সে বিষয়ে জানি না।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই কলেজ ছাত্রীকে ভোরের দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে মেয়েটিকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। তার শরীরে উল্লেখযোগ্য কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়ার আগে মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাাচ্ছে না।

ওই কলেজ ছাত্রীর চাচা মিজানুর রহমান বলেন, প্রেমিক আমিনুর বিয়ের কথা বলে মেয়েকে কক্সবাজারে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর হোটেলে ওঠে। কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে আমিনুর কাজ থাকার কথা বলে চকরিয়ায় এসে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পরে আমিনুর মেয়ের মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। মেয়ে ঘরে পৌঁছার পর আমিনুরকে ফোনে না পেয়ে রাতে প্রেমিকের বাড়িতে চলে যায়। সেখানে প্রেমিকের বোনভগ্নিপতিসহ পরিবারের সদস্যরা মিলে তাকে গালিগালাজ ও মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে তাদের আঘাতে মেয়েটি মারা যায়।

ঘটনার বিষয়ে প্রেমিক আমিনুর রহমান মোবাইলে বলেন, তার প্রেমিকা বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। তাকে কেউ মারধর করেনি।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআপিলে সমাধান এলেও সুরক্ষা পরিষদ অসন্তুষ্ট কেন?
পরবর্তী নিবন্ধইটভাটা মালিকসহ ১৩ ব্যক্তিকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা জরিমানা