চন্দনাইশ–সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শঙ্খ নদীতে ঘটছে উপর্যুপরি বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের ঘটনা। নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত রাতের অন্ধকারে নদে বিষ প্রয়োগ করে। বিষের প্রভাবে নদীর চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠলে দুর্বৃত্তরা মরা মাছ ধরে ভোরের আলো ফুটতেই পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভোর হলে স্থানীয় লোকজন মরা মাছ ভেসে যেতে দেখলে তা ধরতে নদীতে নেমে পড়ে শতশত মানুষ। শীতের এই শুকনো মৌসুমে শঙ্খ নদীতে বার বার বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটলেও বরাবরের মতোই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বিষ প্রয়োগকারী দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কিংবা বিষ প্রয়োগে নিরুৎসাহিত করতে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে শঙ্খ নদীর বাস্তুতন্ত্র।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শঙ্খ নদীর বান্দরবান ও চন্দনাইশ সীমান্তের রেইচা এলাকা এবং দোহাজারী দিয়াকুল অংশে বিষ প্রয়োগ করে দুর্বৃত্তের দল। এতে বিষের প্রভাবে নদের ধোপাছড়ি থেকে বাজালিয়া, ধর্মপুর, লালুটিয়া, দোহাজারী ও চাগাচর কালিয়াইশসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দেখা দেয় মাছের মড়ক। ভোর থেকে নদীর পানিতে ভেসে যেতে দেখা যায় চিংড়ি, চিরিং ও বাইলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। এসব মাছ আহরণ করতে নদীর দুপাড়ে ঢল নামে শিশু–কিশোর, নারী–পুরুষসহ শত শত মানুষের। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকেই ভেসে যাওয়া মাছ আহরণ করতে নদীতে নামে তীরবর্তী মানুষ। শত শত শিশু–কিশোর, নারী–পুরুষ হাতা জাল, ঠেলা জাল, চালুনি ও মশারিসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়ে নদীতে। সকালে দোহাজারী দিয়াকুল অংশেও দেখা যায় এমন দৃশ্য।
দিয়াকুল এলাকার আলম উদ্দীন জানান, সকালে কেরানীহাট যাওয়ার সময় শঙ্খ নদীর দুপাড়ে দেখা যায় শত শত শিশু–কিশোর বিষের প্রভাবে মরে ভেসে যাওয়া মাছ আহরণ করছে। এ সময় তাদের মধ্যে কেউ কেউ আধা কেজি থেকে এক–দুই কেজি পর্যন্ত মাছ পেয়েছে। অধিকাংশ মাছই মরা। দুর্বৃত্তের দল প্রতিনিয়ত শঙ্খ নদীর ধোপাছড়ি থেকে দোহাজারী পর্যন্ত বিষ প্রয়োগ করার ফলে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছের প্রজনন ধ্বংস হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে এসব দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।
জানা যায়, বিগত কয়েক বছর আগেও শঙ্খ নদীতে চিংড়ি, চিরিং, বাইলা, পাবদা, বোয়াল, রুই, কাতাল ও কাকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। হাজার হাজার জেলে পরিবার শঙ্খ নদীতে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বিগত কয়েক বছর ধরে উপর্যুপরি বিষ প্রয়োগের ফলে প্রায় মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে।
শঙ্খ নদীর জেলে বলরাম জলদাস (৪০) জানান, মাত্র কয়েক বছর আগেও নদীতে জাল ফেললে কয়েক কেজি মাছ পাওয়া যেতো। বর্তমানে উপর্যুপরি বিষ প্রয়োগের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিধন হচ্ছে। ফলে সারাদিন জাল ফেলেও অনেক সময় আধা কেজি মাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে অনেক জেলে পরিবার অন্য পেশায় চলে গেছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) স্বপন চন্দ্র দে জানান, নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নদীতে বিষ প্রয়োগের খবর পেলেও কারা বিষ প্রয়োগ করছে তাদের কেউ সঠিক তথ্য দিতে না পারায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। তীরবর্তী এলাকার মানুষকে নদীতে বিষ প্রয়োগকারীদের ব্যাপারে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারা বিষ প্রয়োগ করছে তথ্য দিতে পারলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব হোসেন।