মহামারী করোনার কারণে প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় ঘরবন্দী শিক্ষার্থীরা। এসময় শ্রেণী পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ‘বিষণ্ন’ সময় কাটাচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীর অবসাদগ্রস্ত বা বিষণ্নতা দূর করতে শিক্ষার্থীদের ঐতিহ্যবাহী ‘বাঁশ’ নৃত্য বা ‘ব্যাম্বু’ ড্যান্স শেখানো হচ্ছে। এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে পেরাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৫ কি.মি দূরে সবুজ ছায়ায় আচ্ছাদিত বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরভী তালুকদার শিশুদের মধ্যে একঘেয়েমি, বিষণ্নতা দূর করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি।
খুশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ‘নাচের পোশাক পরে মহড়া করছে শিক্ষার্থীরা। বাঁশ নৃত্যের জন্য বিশেষ পোশাকও পরেছে তারা। প্রতিটি শিক্ষার্থীর চোখেমুখে উচ্ছ্বাসের ছটা। কোমলমতি শিশুদের এমন আয়োজন দেখতে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন অভিভাবকারাও ভিড় করেন। বাঁশ নৃত্যের মহড়ায় অংশ নেয় প্রায় ২৪ জন শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ঈদিকা চাকমা, স্বরূপা চাকমা, স্নিগ্ধা চাকমা, অভিক চাকমা ও অর্নব বড়ুয়া জানায়, করোনার কারণে অনেক দিন বন্ধুদের সাথে দেখা হয় না। সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলাও করতে পারে না। প্রধান শিক্ষিকা আমাদেরকে স্কুলে এনে ব্যাম্বু ড্যান্স শেখাচ্ছেন। আমাদের ভালো লাগছে। মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আমরা বাঁশ নৃত্য শিখে ফেলেছি। আমরা সবাই মিলে সহজেই বাঁশ নৃত্যে অংশ নিতে পারি। ’
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘স্কুল বন্ধ হওয়ায় পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। তারপরও শিক্ষার্থীদের শরীর ও মন ভালো রাখতে খেলাধুলা ,গান, নাচ শেখানো হচ্ছে। শিশুদের শরীরচর্চা করানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মন খুব প্রফুল্ল। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘদিন পাঠদান বন্ধ থাকলেও সহপাঠ কার্যক্রমগুলো চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। বাঁশ নৃত্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিষণ্নতা দূর হয়েছে।’
পেরাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরভী তালুকদার জানান, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব এখন স্থবির। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চাঙা রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২৪ জন শিক্ষার্থীকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘বাঁশ নৃত্য’ শেখানো হয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার্থীরা এটি রপ্ত করেছে। তাদের পরিবেশনাও দেখার মত। তাদের নিয়ে নাচ, গান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সহপাঠ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’