বিশ্ব শিশুশ্রম দিবস : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী | বুধবার , ১৮ জুন, ২০২৫ at ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ( আইএলও) শিশু অধিকার রক্ষা এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের ব্যাপারে অবহিতকরণ, সচেতনতা সৃষ্টি, উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০২ সাল থেকে প্রতি বছর ১২ই জুন World Day Against Child Labour বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালন করে আসছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিবছর ১২ই জুন দিবসটি পালন করে। আইএলও এবারে দিবসটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে Generation Safe and Healthy. বৈশ্বিক ইংরেজি শ্লোগান হলো : Progress is clear, but there’s more to do: let’s speed up! জাতীয়ভাবে দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হলো – “স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি এগিয়ে চলি দীপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি।” উল্লেখ্য ১২ই জুন সরকারি ছুটি থাকায় আগামীকাল ১৯ জুন দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রম ও কর্ম সংস্থান মন্ত্রণালয়।

আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ। শিশুশ্রম শিশুর জন্মের মতই একটি চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের বর্তমান সমাজবাস্তবতায় শিশুশ্রম নির্মূল করা যাবে না, তবে এটাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে এবং জোর দিতে হবে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে প্রত্যাহার করার।

১৯১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অন্যতম লক্ষ্য ছিল শিশুশ্রম নিরসন। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ১৯৭৩ সালে গৃহীত আইএলও ন্যূনতম বয়স কনভেনশন নং১৩৮ এবং ১৯৯৯ সালে গৃহীত ঝুঁকিপূর্ণ ধরনের শিশুশ্রম নিরসন সংক্রান্ত আইএলও সনদ ১৮২ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী সরকার, মালিকপক্ষ, শ্রমিক সংগঠন প্রতিটি পক্ষের মাঝে শিশুশ্রম নিরসনের পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের প্রাথমিক লক্ষ্য স্থির করে। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) পরবর্তীতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং ন্যাশনাল প্ল্যান অফ একশান (২০২১২০২৫) এর লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। যদিও কোভিড১৯ পরবর্তী বাস্তবতায় ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিয়ে খোদ জাতিসংঘের মহাসচিবই সংশয়সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এসডিজি’এর লক্ষ্য হচ্ছে শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। অশোভন কাজ আছে বলেই শোভন কাজের জন্য সংগ্রাম। শ্রমিক সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক পরিসরে ২০০৮ সাল থেকে ৭ অক্টোবর বিশ্ব শোভন কর্মদিবস পালন করে আসছে।

গত ২৭ মার্চ ২০২৫ চীনের হাইনান প্রদেশের বোয়াও শহরে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস বলেন, “সুদের হার বৃদ্ধি ও ঋণ পরিষেবা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এশিয়ার ঋণ সংকট আরো গভীর হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ২০৩০ এজেন্ডার প্রতি প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৪ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে (প্রথম আলো, ২৮ মার্চ, ২০২৫)

বিশ্বের যে ২২ টি দেশ প্রথম জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুসমর্থন করেছিল তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৯১ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে এই সনদের বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য আবশ্যকীয়। শিশুদের সুরক্ষা তথা কল্যাণে আইন ও নীতি, কার্যকর উদ্যোগ, কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়নে সরকার দেশের জনগণ ও জাতিসংঘের কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং এটা সংবিধান স্বীকৃত দায়ও বটে। দেশে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি (শিশুশ্রম জরিপ ২০২২, বিবিএস)। স্মর্তব্য রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বছর ৩৫ হাজার শিশুর জন্ম হয়। সর্বশেষ তথ্যে বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে বলে জানা যায়।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ (পঁচিশ) শতাংশের বেশি শিশু। এর মধ্যে ১৫ (পনেরো) শতাংশের বেশি শিশু দরিদ্র। এই দরিদ্র শিশুদের মধ্যে রয়েছে শ্রমজীবী শিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু, পথশিশু, চর, দ্বীপ, উপকূল, পাহাড় তথা দুর্গম এলাকায় বসবাসরত শিশু। শিশুশ্রম অমানবিক, অনৈতিক ও দন্ডনীয় অপরাধ। জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালায় এ কথা স্বীকৃত হয়েছে যেগোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক পরিচয় অথবা ভিন্নমত, জাতীয়তা কিংবা সামাজিক পরিচয়, শ্রেণি জন্মসূত্র কিংবা অন্যকোনো মর্যাদা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ কোনো প্রকার বৈষম্য ছাড়াই সবধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করবে। জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা অনুযায়ী বিশেষ যত্ন ও সহায়তা প্রতিটি শিশুর প্রাপ্য।

শিশুশ্রম নিরসন তথা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম থেকে শিশুদের প্রত্যাহারের জন্য সরকার আইন কানুন, বিধিবিধান, নীতি, পরিকল্পনা, বাজেট বরাদ্দ ও প্রকল্প গ্রহণ করেছেন যা চলমান এবং তার ইতিবাচক প্রভাবও দৃশ্যমান। শিশু জরিপ ২০২২ এর বরাতে জানা যায় কোভিড১৯ অভিঘাতে তাবৎ দুনিয়ার মত বাংলাদেশেও শ্রমে যুক্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে তবে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত শিশুর সংখ্যা কমেছে। আইএলও’র তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৮ কোটি শিশু শিশুশ্রমে নিয়োজিত। শিশুশ্রম এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা বেশি।

কোভিডের প্রভাব

প্রশমনমূলক ব্যবস্থা ছাড়া, ২০২০ সালের ১৬০ মিলিয়ন থেকে ২০২২ সালের শেষের দিকে শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুদের সংখ্যা বেড়ে ১৬৮.৯ মিলিয়ন পৌঁছাতে পারে।

২০১৩ সালের পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘শিশুশ্রম জরিপ ২০২২’এর ফলাফল প্রকাশ করা হয় ১৯ জুলাই ২০২৩। জরিপে দেখা যায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বিগত ১০ বছরে (২০১৩ ২০২২) বেড়েছে। লক্ষণীয় যে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা কমেছে।

গত ১০ বছরে দেশে শিশুশ্রম কমেনি, বরং বেড়েছে। এ সময়ে দেশে প্রায় এক লাখ শিশুশ্রমিক বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে, দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশুশ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। এ ছাড়া বর্তমান শিশুশ্রমিকদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তবে ১০ বছরের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকের সংখ্যা দুই লাখের মতো কমেছে। (জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২)

ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের তালিকা দীর্ঘ হয়েছে ৩৮টি থেকে ৪৩টি। গার্মেন্টস শিল্প, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ, শিপ ব্রেকিং, সিল্ক, ট্যানারি, চামড়া, কাচ ও সিরামিক এ আটটি খাত শিশুশ্রম মুক্ত বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার দাবী।

সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী ‘ বাংলাদেশের ১২ লাখেরও বেশি শিশু এখনও বিপজ্জনক শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে’ (নাজমা মোবারেক, সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিশেষ ক্রোড়পত্র, বিশ্ব শিশু দিবস ২০২৪, প্রথম আলো, ৭ ই অক্টোবর ২০২৪)। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনসহ সবধরনের সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। শিশুশ্রম দন্ডণীয় অপরাধ, যদিও প্রতিবেশী দেশের তুলনায় আমাদের দেশের দন্ডটা লঘু। শিশুশ্রম শিশুর অধিকার লঙ্ঘন এবং অনৈতিক এবং জাতির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জন্য ক্ষতিকর। এটা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং শ্রমে যুক্ত শিশুর পরিবারের জন্য বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি করা আবশ্যক।

চট্টগ্রামে শিশুশ্রম, শিক্ষা ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে উন্নয়ন সংগঠন ঘাসফুল, ইপসা, কারিতাস, অপরাজেয় বাংলা, ওয়ার্ল্ড ভিশন, কোডেক, বিটা ও ভোরের আলো।

চট্টগ্রাম শহরে কোভিড পরবর্তী সড়ক পরিবহণ সেক্টরে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের নিয়ে গবেষণায় প্রাপ্ত উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে :

). ছেলে শিশুদের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার ১৬.১৭%। ২). পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত শিশু ২৪.৫০%। ৩). মাদকাসক্ত শিশু ১১.২৪%। ৪). শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৯১.৪২% ও ৫). যৌন নির্যাতনের শিকার ১২.৭২% শিশু।

ছত্রিশ জুলাই আন্দোলনে শিশুদের আত্মত্যাগ

শিশুরা আগামীর বাংলাদেশ, জাতির ভবিষ্যৎ। ছত্রিশ জুলাইর (জুলাইআগষ্ট ২০২৪) ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শিশুদের আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে মোট ১৩২ শিশু কিশোর এবং ১১ জন নারী শহীদ হয়েছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন (প্রথম আলো, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪)। দেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং নিজের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সার্পোট সোসাইটি (এইচআরএসএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার জুলাই আগস্ট আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ১৩৬ জন ও তরুণ ৪৫০ জন (প্রথম আলো, ১ লা জানুয়ারী ২০২৫)। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের (ও এইচ সি এইচ আর) ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট সূত্রে জানা যায় জুলাই আগস্টে সংঘটিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ হত্যাকান্ড। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় ১৪০০ নিরস্ত্র মানুষকে। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী, নিরস্ত্র বিক্ষোভকারী, নারী ও শিশু রয়েছে। হত্যাকান্ডের শিকার মোট শিশু ১১৮ জন, শতকরা হিসাবে যা ১২১৩ শতাংশ। আহত হয়েছেন প্রায় ১২ হাজার ( দৈনিক যুগান্তর, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)

মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্র ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও অধরাই রয়ে গেল। ফলে তাবত মানুষের মত শিশুরাও ভুক্তভোগী, প্রয়োজনীয় অধিকার সেবা আত্তিবঞ্চিত এবং শ্রমে যুক্ত।

আইন নৈতিকতা কিংবা মানবিক দৃষ্টিকোণ যেকোনো বিবেচনায় শিশুশ্রম অগ্রহণযোগ্য এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। সাংবিধানিক অঙ্গীকার এবং রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকারসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণাও তাই।

আগাম সতর্কতা জরুরি

বাংলাদেশে এ বছর আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অতিদরিদ্রের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে গত ২৩ এপ্রিল রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদন এ তথ্য জানানো হয়েছে। শুধু অতিদারিদ্রের হার নয়; জাতীয় দারিদ্রের হারও বাড়তে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, জাতীয় দারিদ্রের হার গত বছর ছিল সাড়ে ২০ শতাংশ। ২০২৫ সালে তা বেড়ে হতে পারে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ ( প্রথম আলো, ২৫ এপ্রিল ২০২৫)। সাধারণ সূত্র বলছে, দারিদ্রতা ১ শতাংশ বাড়লে শিশুশ্রম ০.৭০ শতাংশ বাড়বে। কাজেই আগাম সর্তকতা জরুরী।

পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা

আমরা লক্ষ করেছি শিশুশ্রম নিরসনে দেশে আইন আছে, বিধি আছে, পরিকল্পনা আছে প্রকল্প আছে, পর্যাপ্ত না হলেও বাজেট বরাদ্দও আছে কিন্তু প্রায়শ তা যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। অভিযোগ আছে বাস্তবায়নের সদিচ্ছা সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে, সরকারি কাজের ধীরগতি ও দীর্ঘসূত্রিতারও। এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রস্তাব হলো আমাদের অত্যন্ত ভালো আইন আছে। এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখ ভাল করার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পর্যবেক্ষণ ও তদারকী সেল গঠন করা দরকার। জেলা পর্যায়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করা যা আইনগুলো ও কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, শিশুরা আইনগত অধিকার পাচ্ছে কি না, তাদের সুরক্ষার বিষয়টা প্রতিপালিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। শিশু অপরাধ সংক্রান্ত যেসব নির্দেশনা শিশু আইনে আছে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা জেলাউপজেলা ও থানা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে। শিশুদের কল্যাণে, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও আয়বর্ধক কাজে যুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারের বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন।

কল্যাণকামী একটি রাষ্ট্র গড়া আমাদের স্বপ্ন ও জাতীয় অঙ্গীকার। শিশুদের ঝুঁকিতে রেখে কিংবা শিশুশ্রম জিইয়ে রেখে কল্যাণকামী রাষ্ট্র গড়ার সাধ স্বপ্ন, অঙ্গীকার অধরাই থেকে যাবে। আসুন শিশুশ্রম মুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হই।

লেখক : সমাজ বিজ্ঞানী, প্রাবন্ধিক; সিনেট সদস্য চবি ও চেয়ারম্যান, ঘাসফুল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিতর্ক সৃজনশীল চিন্তাভাবনাকে বিকশিত করে
পরবর্তী নিবন্ধমিল্লাতের খেদমতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে