বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত ১৯জনের মৃত্যু, ৭২ জোড়া বর–কনের যৌতুকবিহীন বিয়ে
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টা ১ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। শেষ হয় ৯টা ২৩ মিনিটে। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা জুবায়ের। মোনাজাতে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও ইজতেমা ময়দানের আশপাশ এলাকা।
মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত, ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা–মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি প্রার্থনা করেন। এ মোনাজাতে দুই হাত উপরে তুলে লাখ মুসল্লি বারবার বলছিলেন, আমিন আমিন। মোনাজাতের সময় এ ধ্বনিতে পুরো টঙ্গী এলাকা আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। তারা সবাই ইহলোকের মঙ্গল ও পরলোকের ক্ষমা প্রার্থনা করে চাইলেন সুখ ও সমৃদ্ধি। আখেরি মোনাজাতের আগে বাদ ফজর নামাজের পর হেদায়েতি বয়ান করা হয়। বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল। এরপর কিছু সময় নসিহত মূলক বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। এরপর আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। খবর বাসসের।
মোনাজাতে সমগ্র বিশ্বের মানবকূলের নিরাপত্তা, ঐক্য, মুক্তি এবং ইহ ও পরলৌকিক কল্যাণ কামনা করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে আকুতি–মিনতি জানানো হয়। এ সময় পুরো ইজতেমা মাঠসহ আশপাশ এলাকার পরিবেশে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে আকাশ–বাতাস কাঁপিয়ে মহামহিমা ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে অপার করুণা ও অশেষ রহমত কামনা করেন। মনিব–ভৃত্য, ধনী–গরিব নির্বিশেষে সব শ্রেণি–পেশার মানুষ আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
দক্ষিণে খিলক্ষেত, উত্তরে গাজীপুর চৌরাস্তা, পূর্বে টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী ও পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত বিশাল জনসমুদ্র থেকে ধ্বনি ওঠ্তে ‘হে আল্লাহ, হে আল্লাহ’। মোবাইল ফোনে এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সমপ্রচারের সুবাদে দেশ–বিদেশের লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তুলেছেন আল্লাহর কাছে। সবাই প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লি ছাড়াও বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ৩ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
১৯জনের মৃত্যু, ৭২ জোড়া বর–কনের যৌতুকবিহীন বিয়ে: এদিকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ৭২ বিয়ে হয়েছে যৌতুকবিহীন। এছাড়া মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত একজন পুলিশ সদস্যসহ ওই ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সেলের প্রধান মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান। ইজমেতায় ৭২ জোড়া বর–কনের যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার শূরায়ে নিজামের অনুষ্ঠিত ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর যৌতুক বিহীন এইসব বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ে পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান।
মোট ১৯ মুসল্লীর মৃত্যু: বিশ্ব ইজতেমায় রোববার সকাল পর্যন্ত একজন পুলিশ সদস্যসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ইজতেমা ময়দানে ১২ জন এবং ময়দানে আসার পথে একজন পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন মারা যান।
যৌতুকবিহীন ৭২ বিয়ে: টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় ৭২ জোড়া বর–কনের যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার শূরায়ে নিজামের অনুষ্ঠিত ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর যৌতুক বিহীন এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমায় যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করা হয়। বাদ আসর ওই ৭২টি বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। গত শনিবার বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ ছিল যৌতুকবিহীন বিয়ে। সম্পূর্ণ ইসলামি শরিয়া মেনে তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। বর ও কনের সম্মতিতে উভয় পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয় বিয়ে। এজন্য সকাল থেকেই অভিভাবকরা হবু দম্পতিদের নাম তালিকাভুক্ত করান। বিয়ের পর বয়ান মঞ্চ থেকেই মোনাজাতের মাধ্যমে নব দম্পতিদের সুখ–সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করা হয় এবং মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খোরমা–খেজুর বিতরণ করা হয়।