বিশ্ব বাণিজ্যের রীতিনীতি গুঁড়িয়ে ট্রাম্পের ১০% শুল্ক নেওয়া শুরু

মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা, বাড়তে পারে বেকারত্বের হার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদে বিরোধীরা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৫ at ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের সিংহভাগ দেশ থেকে সব আমদানি পণ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, তা নেওয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল শনিবার প্রথম প্রহর থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা পণ্য থেকে নতুন এ শুল্ক নেওয়া শুরু করেন। ৫৭টি বড় বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ট্রাম্প আরও বেশি শুল্ক চাপিয়েছেন, তা আগামী বুধবার থেকে নেওয়া শুরু হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, সব মার্কিন সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও শুল্ক গুদামে পূর্বাঞ্চলীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে এই ‘ভিত্তি শুল্ক’ কার্যকর হয়; এর ভেতর দিয়ে ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারিত শুল্ক ব্যবস্থাকে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করলেন।

এদিকে মার্কিন অর্থনৈতিক সংস্থা জেপি মর্গ্যান আমেরিকায় মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে। চলতি বছরেই আমেরিকান অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে বলে তাদের অনুমান। সেই সঙ্গে দেশ জুড়ে বেকারত্বের পরিমাণও বেড়ে যাবে। জেপি মর্গ্যানের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে আমেরিকার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টস বা জিডিপি) সঙ্কুচিত হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে চলেছে মার্কিন অর্থনীতি। যদি আমেরিকায় মন্দা হয়, সে ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। সারা বিশ্বে মন্দার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ, জানিয়েছে জেপি মর্গ্যান।

যুক্তরাষ্টজুড়ে প্রতিবাদে বিরোধীরা : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ধনকুবের মিত্র ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যজুড়ে প্রায় ১২০০টি প্রতিবাদ আয়োজন করেছে তার বিরোধীরা। ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্পমাস্ক জুটির বিরুদ্ধে গতকাল শনিবারের এসব বিক্ষোভ একক দিনে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বলে ধারণা সংগঠকদের।

জানুয়ারিতের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প একের পর এক নির্বাহী আদেশের বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে শুরু করেন। বিরোধীদের জন্য ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের বিষয়ে নিজেদের অসন্তোষ জানানোর সুযোগ হয়ে এসেছে এই ‘হ্যান্ডস অফ!’ প্রতিবাদ। গতকালের এসব আয়োজনের অন্যতম সংগঠক গোষ্ঠী ইন্ডিভিসিবলের সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, এটি একটি বিশাল বিক্ষোভ। যা মাস্ক, ট্রাম্প ও কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের কাছ এবং তাদের এমএজিএ(মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) অন্ধ সমর্থকদের কাছে একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠাবে যে আমাদের গণতন্ত্র, সমাজ, আমাদের স্কুল এবং আমাদের বন্ধুদের ও প্রতিবেশীদের ওপর তাদের হাত আমরা চাই না। এ বিষয়ে রয়টার্স ট্রাম্প ও মাস্কের মন্তব্য চেয়ে অনুরোধ জানালেও হোয়াইট হাউজ তাৎক্ষণিভাবে সাড়া দেয়নি।

এ দফায় ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং চীনা পণ্যে ৩৪% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছেন; আগে ২০ শতাংশ শুল্ক থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে এখন অনেক চীনা পণ্য ঢুকতে গুণতে হবে ৫৪ শতাংশ বাড়তি শুল্ক। ট্রাম্পের প্রথম বছরে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে লাভবান হওয়া ভিয়েতনামের পণ্যে বসেছে ৪৬ শতাংশ শুল্ক; এই শুল্ক কমিয়ে আনতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় রাজিও হয়েছে বলে শুক্রবার জানা গেছে। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক থেকে বাদ পড়েছে কানাডা ও মেঙিকো; দেশদুটির অনেক পণ্যে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আগেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান জানিয়ে ফতোয়া জারি
পরবর্তী নিবন্ধছাঁটাই হওয়া জুতা কারখানা শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ