প্রতিবছর ফিরে আসে এ মহান দিনটি। এ দিনে একজন আমেরিকান ডেনটিস্ট রোগীকে প্রথম এনেস্থেসিয়া দেয়ার মাধ্যমে দিনটির শুভ সূচনা করেন। এনেসথেসিয়া ছাড়া ছোট বড় যে কোন অপারেশন কল্পনাই করা যায় না।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এনেস্থেসিয়া বর্তমানে অনেক আধুনিক এবং আপডেট, আরামদায়ক এবং ভীতিহীনও বটে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম এ মুহূর্তে বাংলাদেশের এনেস্থেটিস্টগণ। এ দেশের অনেক এনেসথেটিষ্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উন্নত হাসপাতালগুলাতে সুনামের সাথে কাজ করে চলেছেন।
যুগের প্রয়োজনে আধুনিক এনেস্থেসিয়া মেশিনের সাথে সাথে উন্নত মনিটরিং সিষ্টেম সংযুক্তির ফলে নিরাপদ এনেস্থেসিয়া এখন হাতের নাগালে। এ মুহূর্তে এনেস্থেসিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে রোগীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ নিরাপদ এনেস্থেসিয়ার মূল ভিত্তি।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে এনেস্থেটিস্টটের হার পূর্বের তুলনায় বেড়েছে বহুগুণ। এনেস্থেটিস্টটের পোস্ট যেমন বেড়েছে, সংখ্যাও তেমন বেড়েছে। তবে আমাদের দেশে এখনো পর্যাপ্ত এনেস্থেটিস্টটের অভাব রয়েছে। এ স্বল্পতা পূরণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
অতি সমপ্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে, বেসিক অর্থাৎ নন ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোতে পর্যাপ্ত জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং এসব বিষয়ে ডাক্তারদের আসতে উৎসাহিত করার জন্যে ইনসেনটিভ প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। এর সাথে এনেসথেসিয়া বিষয়কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি সরকারের একটি সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি।
এনেস্থেসিয়ার মতো একটি টেকনিক্যাল বিষয়ে ডাক্তারদের আসার আগ্রহ কম। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে পেশাগত শ্রেণী বিন্যাস। দেখা যায়, একজন সিনিয়র এনেস্থেটিস্ট একটি অপারেশনে একজন সিনিয়র সার্জনের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ থেকে এক দশমাংশ পর্যন্ত ফি কম পেয়ে থাকেন। এ ধরনের বৈষম্যও এনেস্থেসিয়ায় ডাক্তারদের না আসা তথা এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী না হওয়ার মূল কারণ এবং আমাদের দেশে এনেসথেসিয়ার পেশাগত প্রেকটিসটা অনেকটা সার্জনদের উপর নির্ভরশীল হওয়াটাও অন্যতম কারণ হতে পারে। যেহেতু রোগীরা সরাসরি এনেস্থেটিস্টদের কাছে আসে না, সার্জনদের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়।
পেশাগত কারণেএনেস্থেটিষ্টদের সাথে অপারেশনের পূর্বে রোগীদের সাক্ষাতের তেমন সুযোগ হয় না, তাই এনেস্থেটিস্টগণ থাকেন পর্দার আড়ালে। প্রি এনেস্থেটিক চেক আপ বাধ্যতামূলক করা হলে রোগীরাও এনেস্থেটিস্টদের সাথে অপারেশনের আগে থেকেই সম্পৃক্ত হবে এবং রোগীর সাথে আলাপের মাধ্যমে রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এনেসথেটিস্টগণ ভালো ভাবে অবহিত হতে পারবে। তাছাড়া রোগীর সাথে সহজাত আলাপের মাধ্যমে রোগীর অপারেশনের পূর্বে অপারেশন এবং এনেস্থেসিয়া সম্পর্কিত ধারণা দেয়া যাবে। এতে রোগীদের আশ্বস্ত করার মাধ্যমে রোগীর অপারেশন এবং এনেস্থেসিয়া ভীতি বহুলাংশে কমে যাবে এবং রোগীর অপারেশনকালীন জটিলতাও কমে যাবে, যা রোগীর জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।
দেখা যায়, একজন সিনিয়র এনেস্থেটিস্ট একটি অপারেশনে একজন সিনিয়র সার্জনের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ থেকে এক দশমাংশ পর্যন্ত ফি কম পেয়ে থাকেন। এ ধরনের বৈষম্যও এনেস্থেসিয়ায় ডাক্তারদের না আসা তথা উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী না হওয়ার মূল কারণ এবং আমাদের দেশে এনেস্থেসিয়ার পেশাগত প্রেকটিসটা অনেকটা সার্জনদের উপর নির্ভরশীল হওয়াটাও অন্যতম কারণ হতে পারে। যেহেতু রোগীরা সরাসরি এনেস্থেটিস্টদের কাছে আসে না, সার্জনদের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়।
বর্তমানে সার্জারীর বিষয় যেমন বেড়েছে সে হিসাবে এনেস্থেটিস্ট তেমন বাড়েনি। এনেস্থেটিস্টের স্বল্পতাই অপারেশনের সংখ্যা রাশের মূল কারণ। তাছাড়াও সিনিয়র এনেস্থেটিস্টরা অবসরে চলে যাওয়াতে দক্ষ এনেস্থেটিস্টের শূন্যতা বাড়ছে দিনে দিনে, যা কাম্য নয়। তাই সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে দ্রুত, না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। অবশ্য সরকার সামপ্রতিক সময়ে এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন যেমন: চাকরি থেকে অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে এনেস্থেটিস্টদের পদায়ণ করে। এটি সরকারের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করি।
ছয় বছর আগে এনেস্থেসিয়ার ১৬৭ বছর উদযাপন উপলক্ষে ‘অপারেশনের রোগীর জন্য জরুরী তথ্য’ সম্বলিত একটি পোষ্টার সোসাইটি অব এনেস্থেসিওলজিস্ট, চট্টগ্রাম শাখা প্রচার করে। এটি অপারেশন সংক্রান্ত রোগীদের জ্ঞাতার্থে আবারো প্রকাশ করা হলো, যা রোগী এবং রোগীর আপনজনদের সচেতন করার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে বলে আশা রাখি।
তথ্যসমূহ: ১) আপনাকে/আপনার রোগীদের কে অজ্ঞান করবেন, তা জানা আপনার অধিকার। ২) আপনার রোগীর অপারেশনে যোগ্যতাসম্পন্ন এনেস্থেটিস্ট সংশ্লিষ্ট আছেন কিনা জেনে নিন, মৃত্যুর ঝুঁকি কমান। ৩) অপারেশনের পূর্বে এনেস্থেটিস্ট কতৃক আপনার রোগীর চেক আপ করিয়ে নেয়া রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪) চেকআপকালীন সময়, আপনার এনেস্থেসিয়ার ধরন, এর সুবিধা অসুবিধা এবং সম্ভাব্য জটিলতা সম্বন্ধে আগে জেনে নিন।
৫) এনেস্থেসিয়ার ডিগ্রিধারী ডাক্তার কর্তৃক অজ্ঞান করানো নিরাপদ। ৬) এনেস্থেটিস্ট নন এমন ডাক্তার কতৃক অজ্ঞান করিয়ে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবেন না। ৭) রোগীর সঠিক নিরাপত্তায় সচেতন হোন।
রোগীরা অপারেশন শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাক, এটি সবার কাম্য। ডাক্তারদের উচিত রোগীদেরকে আপনজন ভেবে তার দায়িত্ব পালন করা। রোগীর প্রতি মমতা, নিবিড় পর্যবেক্ষণই রোগীকে সুস্থ করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এটি সব চিকিৎসকদের মনে রাখা উচিত।
রোগীরা অত্যন্ত অসহায় হয়েই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। রোগীদের প্রতি দায়বদ্ধতা, রোগীদের বিশ্বাস অর্জন করার মাধ্যমে ডাক্তারের প্রতি রোগীর শ্রদ্ধাবোধ তৈরী হবে।
একজন চিকিৎসক কখনোই কামনা করেন না, একজন রোগী খারাপ হয়ে যাক। চিকিৎসকও একজন মানুষ, কাজেই তিনি কখনো রোগীর অমঙ্গল কামনা করতে পারেন না। চিকিৎসকের প্রতিও মানুষের বিশ্বাস রাখতে হবে। এভাবেই ডাক্তার এবং রোগীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,
সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।