বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের জুমায়ও লাখো মানুষের ঢল

আখেরি মোনাজাত কাল সকালে

| শনিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শুরুর দিন অনুষ্ঠিত জুমার জামাতেও অংশ নিয়েছেন লাখো মানুষ। গতকাল শুক্রবার বেলা ১টায় ময়দানে জুমার আযান হয়। ১টা ৪৫ মিনিটে খুতবা শুরু হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। এরপর জুমার জামাত শুরু হলে শেষ হয় ১টা ৫৮ মিনিটে। বৃহত্তম এ জুমার নামাজে তাবলিগ জামাতের অনুসারী ছাড়াও ঢাকা, টঙ্গী, গাজীপুর, নরসিংদী, নারাছুগঞ্জসহ আশেপাশের জেলা থেকে আসা মানুষরা অংশ নিয়েছেন। জুমায় জামাতে অংশ নিতে তারা ভোর থেকেই ইজতেমার স্থলে জমায়েত হয়েছিলেন। আশপাশের বাসা বাড়ি, বহুতল ভবন, সড়কের অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন তারা। আগামীকাল রোববার সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার এ দ্বিতীয় পর্ব। খবর বিডিনিউজের।

গাজীপুরে শ্রীপুর থেকে আসা আব্দুল হালিম বলেন, বৃহত্তম জামাতে নামাজ পড়া ছওয়াবের ব্যাপার। বড় বড় আলেমওলামাদের সাথে নামাজ পড়লে তাদের সাথে আমাদের নামাজও কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ইজতেমাস্থলে চলে ছুটে এসেছি জুমার নামাজে অংশ নিতে। হালিমের মত নরসিংদী থেকে আসা মো. জসিম উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কামাল হোসেন, মানিকগঞ্জ থেকে শফিউদ্দিনসহ হাজার হাজার মানুষ জুমায় অংশ নিতে সকালেই এসে ইজতেমার স্থলে উপস্থিত হয়েছেন।

এদিকে শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের জুমার জামাতে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। এর মধ্যে শুক্রবার সকালেই ইজতেমা ময়দানে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রাসেল। তিনি বিদেশিদের খিত্তায় খিত্তায় গিয়ে মেহমানদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের সব ধরনের সেবা প্রদানের আশ্বাস দেন।

জাহিদ আহসান রাসেল জানান, প্রতি বছরই ইজতেমায় আগত মানুষদের বিভিন্ন সমস্যা ও সেবার জন্য ইজতেমার ময়দানে আসেন। দুইপর্বের জন্য তিনদিন ময়দানে নেতাকর্মীদের নিয়ে সেবায় নিয়োজিত থাকেন। তিনি আরও জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর ইজতেমায় পানির ব্যবস্থা, টয়লেটখানা, গ্যাস ব্যবস্থা, ফায়ার সার্ভিস, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া জুমার নামাজের আগে বিদেশিদের খিত্তায় যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল। তারা বিদেশি মেহমানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন ও সুবিধাঅসুবিধার খোঁজখবর নেন। পরে তারা ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে শরিক হন।

শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৫৪টি দেশের ৬ হাজার ১২৬ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আয়োজক কমিটি। এর আগে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনের ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম। তিনি জানান, ফজরের নামাজের পর উর্দু ভাষায় বয়ান করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী। তা বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশি মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। পরে সকাল ১০টায় ভারতের মাওলানা ইলিয়াস তালিমের মৌজু, জুমার আগে জুমার ফাজায়েলের ওপর ১০ মিনিট বয়ান করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।

মিডিয়া সমন্বয়ক সায়েম জানান, জুমার পরে বয়ান করেন শেখ মোফলে (আরবি), তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় তর্জমা করেন মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ্‌ মনসুর, আসরের পর বয়ান করেন মাওলানা মোশাররফ, মাগরিবের পর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ, তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা জিয়া বিন কাশেম।

প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও দেশবিদেশের লাখ লাখ মানুষ ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। ১৬০ একর ময়দানে কিছু অংশ চটের প্যান্ডেল এবং ময়দানের বাকি অংশ ইজতেমায় যোগ দিতে জেলা থেকে আসা মানুষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শামিয়ানা টানিয়েছেন। তবে বিদেশি মেহমানদের জন্য টিন দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সুবিধাসহ আবাসস্থল।

এ বছর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি, যা ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। পরে শুক্রবার শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্ব শেষ হবে আগামীকাল রোববার সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহিম উদ্দিন ফাউন্ডেশনের খাবার পেল ১০০ অসহায় পরিবার
পরবর্তী নিবন্ধরোজার আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী