যথাযথ উদ্যোগ এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিপুল সম্ভাবনাময় হালাল পণ্যের ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজারে ঠাঁই নেই বাংলাদেশের। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং কূটনৈতিক তৎপরতায় সুবিশাল এই বাজারে প্রবেশ করতে পারে বাংলাদেশ। উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং তা যথাযথভাবে সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হলে পুরো বিশ্বেই বাংলাদেশী হালাল পণ্য বিশাল বাজার ধরতে পারে।
সূত্র জানায়, হালাল পণ্য মানে ইসলামী বিধিবিধান অনুসরণ করে প্রস্তুতকৃত পণ্য। এছাড়া যে ধরনের সেবা মানবজীবনে গ্রহণ করার অনুমোদন রয়েছে সেগুলোকেও হালাল বলে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে উৎপাদিত অধিকাংশ পণ্যই হালাল। কিন্তু হালাল সার্টিফিকেশনের অবকাঠামো, আইনগত ভিত্তি এবং সার্টিফিকেশনের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করা সম্ভব না হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে হালাল পণ্য উৎপাদনকারী হিসেবে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে পারেনি। বর্তমানে ইসলামী ফাউন্ডেশন হালাল সনদ ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করছে। অথচ সেখানে পণ্যের মান সনদ নিশ্চিত করার কোনো কার্যক্রম নেই। শুধু সনদ প্রদানের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে যদি ওআইসি প্রণীত আন্তর্জাতিক হালাল মান অনুসরণ করা হতো তাহলে তা বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য হতো। দেশে যেভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেরূপভাবে হালাল পণ্য রপ্তানির স্বার্থে হালাল মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিবীক্ষণ প্রতিষ্ঠান তৈরি করা সম্ভব। যদি ওআইসির মান অনুসরণ করা যেতো তাহলে আন্তর্জাতিক হালাল পণ্য ক্রেতামহলের দৃষ্টি আকর্ষণ সহজ হয়ে উঠতো। যা হালাল পণ্য রফতানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে। বিশ্ববাজারে হালাল পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকলেও নানা কারণে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। হালাল পণ্যের বড় বাজারগুলো অমুসলিম দেশগুলো নিয়ন্ত্রণ করলেও মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। অথচ এই সুযোগ কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠতো। বিশ্বের মুসলিম–অমুসলিম সব দেশেই হালাল পণ্যের বিশাল বাজার। গুণগত মান এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি না থাকায় নিরাপদ খাদ্য হিসেবে শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীই নয়, আমেরিকা, ইউরোপের অমুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ এবং নানা কাজে মুসলিম জনগোষ্ঠীর অমুসলিম দেশে বসবাস বৃদ্ধি পাওয়ায় হালাল পণ্যের বাজার বিশ্বের সবদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দেশে হালাল পণ্য বিক্রিও হয় বাড়তি দামে।
বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি হালাল পণ্য রপ্তানি করে ব্রাজিল। এরপরই অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড বাজারটি দখল করে রেখেছে। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়াও প্রচুর হালাল পণ্য রপ্তানি করে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা কোন কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
সূত্র বলেছে, দেশের ১১৫টি কোম্পানি ৭ শতাধিক পণ্যের হালাল সনদ নিয়েছে। এর মধ্যে থেকে ৪৯ কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ৩ শতাধিক হালাল পণ্য বিশ্বের ৪৩ দেশে রপ্তানি করছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কুয়েত, দুবাই এবং মালদ্বীপের মতো দেশ। স্বল্প জনসংখ্যার এসব দেশে বাংলাদেশ মাংস রপ্তানি করে। ইউরোপ–আমেরিকার বিশাল বাজারে হালাল পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের উপস্থিতি নেই বললে চলে।
এই তিন দেশে হালাল গোশত রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বব্যাপী হালাল হিসেবে পরিচিত কিছু পণ্য রফতানি করছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বিশাল বাজার হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজারের খুব কম অংশই দখল করতে পেরেছে।
ব্যবসায়ী নেতা মাহফুজুল হক শাহ বলেছেন, হালাল পণ্যের ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং বেসরকারি সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে। কাজে লাগাতে হবে বিশ্বের নানা দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাস এবং হাইকমিশনকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পর্যাপ্ত হালাল পণ্য উৎপাদনের সুযোগ এবং দক্ষ জনবল রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই জনবলকে আরো দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। হালাল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নগদ আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। একই সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে তুলতে সরকার সহজ শর্তে ঋণসুবিধা প্রদান করতে পারে। হালাল পণ্য উৎপাদনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠারও সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি দূতাবাসগুলোকেও কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ যে একটি মুসলিম রাষ্ট্র এবং এখানে মানসম্পন্ন হালাল পণ্য উৎপাদিত হয় সেটা বিদেশিদের জানানোর উদ্যোগ নিয়ে বাজার সৃষ্টি করা গেলে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।