বিশ্বের ‘সৌভাগ্যবান দুর্ভাগা’

মৃত্যু হয়নি কোনো দুর্ঘটনাতে জেতেন কোটি টাকার লটারিও

| মঙ্গলবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ফ্রানে সেলাক, ক্রোয়েশিয়ার একজন সঙ্গীত শিক্ষক। তবে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘সৌভাগ্যবান দুর্ভাগা’ হিসেবে। এর পিছনে দুটো কারণ রয়েছে। তিনি সৌভাগ্য কেননা, মৃত্যু তার জীবনে বহুবার আসা-যাওয়া করেছে। কিন্তু তিনি প্রতিবারই মৃত্যুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবলীলায় জীবনে ফিরেছেন। নিশ্চিত মৃত্যুকে এড়িয়ে যেতে পেরেছেন। আর কপাল খারাপ কারণ, জীবনে সাতবার তাকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে গাড়ি বিস্ফোরণ, ট্রেন দুর্ঘটনা কিছুই বাদ নেই সেই তালিকায়। অবশ্য দুর্ঘটনা যত বড়ই হোক সামান্য কাটা ছেঁড়ার উপর দিয়েই ফ্রানের বিপদ কেটেছে।
ফ্রানের জন্ম ক্রোয়েশিয়াতেই, ১৯২৯ সালের ১৪ জুন। এখন তিনি ৯২ বছরের বৃদ্ধ। তবে মৃত্যুর সঙ্গে তার পাঞ্জা শুরু ১৯৬২ সাল থেকে। তখন তাঁর বয়স ৩২। প্রথম ঘটনাটি ঘটে সেই বছরের জানুয়ারি মাসে। কনকনে ঠান্ডায় ক্রোয়েশিয়ার এক শহর থেকে অন্য শহরে সফর করছিলেন যুবক ফ্রানে। যে ট্রেনে তিনি উঠেছিলেন সেটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায় ট্রেনের বেশ কয়েকটি কামরা। ঠান্ডায় নদীর বরফ জলে ডুবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মারা যান ফ্রানের ১৭ জন সহযাত্রী। ফ্রানেও ডুবে গিয়েছিলেন। কিন্তু মোক্ষম সময়ে কেউ নদীর জল থেকে টেনে তুলে আনে তাকে। হাত ভেঙে গিয়েছিল। তবে প্রাণে বেঁচে যান।
পরের ঘটনাটি ঘটে পরের বছরই। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে বিমানে উঠেছিলেন। বিমান যখন মাঝ আকাশে তখন কাজ করা বন্ধ করে দেয় দুটো ইঞ্জিন। ফ্রানে দরজার কাছে বসেছিলেন। কেবিনে বায়ুর চাপ কমে যেতেই দরজা ভেঙে বেরিয়ে যায়। প্লেন থেকে ছিটকে যান ফ্রানেও। ওই ঘটনায় বিমানের ভিতরে থাকা বাকি ১৯ জন মারা গিয়েছিলেন। এ দিকে ফ্রানে, যিনি প্যারাশ্যুট ছাড়াই বিমান থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন, বেঁচে যান।
তৃতীয় ঘটনা ঘটে বিমান দুর্ঘটনার তিন বছর পর ১৯৬৬ সালে। বাসে সফর করছিলেন ফ্রানে। চাকা খুলে বাসটি নদীতে ডুবে যায়। ৪ যাত্রী মারা গেলেও বেঁচে যান তিনি। এই ঘটনার পর ট্রেন, বাস, বিমানে সফর বন্ধ করে দেন ফ্রানে। ঠিক করেন যেখানে যাবেন নিজের গাড়িতেই যাবেন। কিন্তু সেখানেও বিপদ। ১৯৭০ সালে ফ্রানে যখন গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ঘটে গাড়িতে বিস্ফোরণ।
১৯৭৩ সালে আবার গাড়ি দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন ফ্রানে। তার গাড়ির জ্বালানি পাম্প ভেঙে ইঞ্জিন থেকে আগুনের হলকা বের হতে শুরু করে। আগুনের হলকায় ফ্রানের মাথার চুল পুড়ে যায়। ১৯৯৫ সালে রাস্তায় হাঁটছিলেন ফ্রানে। একটি বাস তাকে সজোরে ধাক্কা মারে। ১৯৯৬ সালে তার গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে জাতিসংঘের একটি ট্রাকের। পাহাড়ি রাস্তায় ৩০০ মিটার গড়িয়ে পড়ে ফ্রানের গাড়ি। তবে গাড়ির ভিতর ফ্রানে ছিলেন না। গাড়িটি খাদে পড়ার মুহূর্তে ছিটকে একটি গাছের ডালে আটকে যান তিনি। ফ্র্যানের জীবনে এখনও পর্যন্ত অবশ্য এটাই শেষ দুর্ঘটনা।
তবে এত কিছুর পর ২০০৩ সালে ফ্রানে লটারি জেতেন। তখন তার বয়স ৭৩। ১১ লক্ষ ১০ হাজার ডলার জিতেছিলেন লটারিতে। লটারির টাকায় দুটি বিরাট বাড়ি আর একটি বিলাসবহুল নৌকা কিনেছিলেন ফ্রানে। তবে ২০১০ সালে তিনি হঠাৎই ঠিক করেন তার জেতা লটারির অধিকাংশ টাকা এবং তা থেকে কেনা সম্পত্তি আত্মীয় বন্ধুদের বিলিয়ে দেবেন। তারপর থেকে একান্তে অতি সাধারণভাবে জীবন কাটাতে শুরু করেন ফ্রানে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ এর রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু
পরবর্তী নিবন্ধদেশে প্রতি বছর জন্ম নেয় ৪ লাখ অপরিণত শিশু