এটি সর্বজনবিদিত যে, মানবসমাজের সাবলীল জীবন প্রবাহে অন্ন–বস্ত্র–শিক্ষা–স্বাস্থ্য–বাসস্থান স্বাভাবিক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদারূপে পরিগণিত। পারস্পরিক সম্পূরক–পরিপূরক অনুষঙ্গসমূহের পরিপূর্ণতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কল্যাণকর জাতিরাষ্ট্র। ফলশ্রুতিতে আপামর জনগোষ্ঠীর মানবিক চাহিদার সার্থক যোগান ব্যতিরেকে কোন সরকারই সাফল্য অর্জন করতে পারেনা। প্রচলিত বাস্তবতায় স্বাস্থ্য পরিচর্যা–গুণগত পর্যায় নির্ধারণ জীবনমান সম্পর্কিত মানবসম্পদ উন্নয়নে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে প্রতিভাত। উল্লেখ্য বিষয় হৃদয় গভীরে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সুস্থ জীবনযাপনে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশেষ করে দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিচর্যার সচেতনতার উদ্যোগ গ্রহণে একনিষ্ঠ ব্রতী হয়েছেন। প্রাসঙ্গিকতায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগদানকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সফল–সার্থক রূপকার হিসেবে জাতিসংঘ স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ব্রাউন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ওয়ারেন অ্যালপার্ট মেডিকেল স্কুলের মেডিসিন অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের ডিন ডা. মুকেশ কে জৈন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশংসাপত্রটি হস্তান্তর করেন। উক্ত প্রশংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার একটি সফল মডেল: প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং কমিউনিটি সম্পৃক্ততা উন্নয়নের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিধির জন্য একটি অংশগ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও ব্রাউন ইউনিভার্সিটি ভবিষ্যতে ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী রোগীদের রেকর্ড রাখার জন্য বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিককে ইলেকট্রনিক ডেটা ম্যানেজমেন্ট চালু করতে বাংলাদেশকে সাহায্য করার এবং গবেষণা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ার অভিপ্রায়ে চুক্তি স্বাক্ষরের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আমাদের সকলের জানা, চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘ সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে ‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সেবার মডেল রূপে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশের এই বৈশ্বিক স্বীকৃতির জন্য উত্থাপিত প্রস্তাব জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বৈশ্বিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেলো। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে দেশ–দেশবাসির ভাবমূর্তি অধিকতর উজ্জ্বল করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ রেজুলেশনের অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘রেজুলেশনটির সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়কাল থেকে বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অবিস্মরণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেবায় ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ বহু দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নতির মূলে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বঙ্গবন্ধুর তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দেওয়ার স্বপ্নের সফল ও সার্থক বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে অভিনব ধারণায় এ অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করেন। দেশের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এটি অকল্পনীয় বিপ্লব ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার মোট ১৪ হাজার ৪৯০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা গ্রামে ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয়। ২০০১ সালের মধ্যেই নির্মিত ১০ হাজার ৭২৩টি অবকাঠামো থেকে প্রায় ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম সচল করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে পুনরায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৫ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ১৩ হাজার ৫০০ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার–সিএইচসিপি নিয়োগ দেওয়া হয়। গ্রামীণ জনপদের প্রতি ৬০০০ মানুষের জন্য ২০ থেকে ৩০ মিনিটের হাঁটার দূরত্বে ৫ শতাংশ জায়গায় স্থাপিত ক্লিনিকগুলো কালক্রমে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে ৮ শতাংশ জমির উপর নতুন মডেলের ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। গণমাধ্যম সূত্রমতে, বর্তমানে ১৪ হাজার ২০০টি ক্লিনিক চালু আছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ১৪ হাজার ৮৯০টি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাকে আইনি কাঠামোয় ঢেলে সাজাতে ২০১৮ সালে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট–২০১৮’ নামে আইন প্রণীত যা ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর মহান সংসদে পাস হয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের প্রজ্ঞাপন হলে একই বছর উপদেষ্টা পরিষদের বিধান রেখে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড গঠিত হয়। সভাপতি হিসেবে যার নেতৃত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপি বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানের প্রাথমিক স্তর এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রদত্ত সেবাগুলোর মধ্যে আছে– সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় গর্ভবতী মাহিলাদের প্রসব পূর্ব এবং পরবর্তী সেবা, যক্ষ্মা–ডিফথেরিয়া–হুপিং কফ–পোলিও–ধনুষ্টংকার–হাম–হেপাটাইটিস বি, নিউমোনিয়াসহ ইত্যাদি রোগের প্রতিষেধক এবং শিশু ও কিশোর কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা, মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণ, ম্যালেরিয়া–যক্ষ্মা–কুষ্ঠ–কালাজ্বর–ডায়রিয়াসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা–চিকিৎসা সুবিধা, সাধারণ জখম– জ্বর– ব্যথা– কাটা– পোড়া– দংশন– বিষক্রিয়া– হাঁপানী– চর্মরোগ– ক্রিমি এবং চোখ–দাঁত–কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা, অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ–বিতরণ, জটিল রোগীদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা প্রদানপূর্বক রেফার করা ইত্যাদি। প্রারম্ভিক সময়ে ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা না থাকলেও বর্তমানে দেশের প্রায় ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় এক লক্ষ মায়ের নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব সেবা দেওয়া হয়েছে। ক্লিনিকগুলোতে বিনামূল্যে অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ এবং অসচ্ছল ও দরিদ্র ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিনসহ প্রায় ৩২ ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী বাবদ বছরভিত্তিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ২৪১ কোটি থেকে ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বিনামূল্যে সেবা সহজ করার জন্য কর্মরত সকল সিএইচসিপিকে দেওয়া হয়েছে ল্যাপটপ ও মডেম। বর্তমানে সব কমিউনিটি ক্লিনিক হতে ডিজিটালি অনলাইন রিপোর্টিং এবং মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে সিসি কর্ম এলাকায় অবস্থানরত খানার প্রত্যেক সদস্যের ডিজিটালি হেলথ ডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১১ লাখ গ্রামীণ জনগণকে হেলথ আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। বিগত জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত ক্লিনিকগুলোতে মোট ভিজিট হয়েছে ১০ কোটি ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭২৯টি। ১০ কোটিও বেশি মানুষ পেয়েছে বিনামূল্যের এই স্বাস্থ্যসেবা। প্রতিদিন প্রতিটি ক্লিনিকে ৭০ থেকে ৮০ জনেরও বেশি রোগি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকে যার ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি রোগীকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে জরুরি ও জটিলতার কারণে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে পৃষ্ঠপোষতার পাশাপাশি জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক, জাইকা, ইউনিসেফ ইত্যাদি সংস্থা আর্থিক–কারিগরি–লজিস্টিক সরবরাহের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মকান্ড বাস্তবায়নের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান উন্নয়নে কাজ করছে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুসারে, বাড়ির পাশের ক্লিনিক থেকে ওষুধ এবং পরামর্শ পেয়ে ৮০ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেবা নিয়ে ৯৮ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট। প্রান্তিক মানুষ এখন স্বাস্থ্যসেবার আশ্রয়স্থল হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকেই মনে করে। স্বাস্থ্যখাতে অভূতপূর্ভ সাফল্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিস্বরূপ এমডিজি, সাউথ–সাউথ, গ্যাভি এবং ভ্যাক্সিন হিরো পুরষ্কার প্রাপ্তিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্যগাথা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘কমিউনিটি ক্লিনিক : হেলথ রেভল্যুশন ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি বই প্রকাশ করে।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের সাইডলাইনে ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ অব কমিউনিটি ক্লিনিক : ইনোভেটিভ এপ্রোচ এচিভিং ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ ইনক্লুসিভ অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ডিজ–অ্যাবিলিটি’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর এ প্রচেষ্টাকে সহায়তার জন্য উন্নয়নশীল অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমাদের সম্মিলিত কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য এ বছর শপথ নেওয়ার সময় আমরা আপনাদের উপস্থিতিতে উৎসাহিত বোধ করছি। গ্লোবাল সাউথের উদীয়মান কন্ঠস্বর হিসেবে বাংলাদেশ এ বিষয়ে তার উপলব্ধি এবং দক্ষতা আগ্রহীদের সঙ্গে বিনিময় করতে প্রস্তুত আছে। সব সুখের মূলে রয়েছে স্বাস্থ্য। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চারদিকে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চাই।
সামগ্রিক পর্যালোচনায় সুদৃঢ়কন্ঠে ব্যক্ত করা যায়; অনগ্রসর সমাজকে ক্রমাগত প্রাগ্রসর সমাজে উত্তরণে উন্নয়নের সকল ক্ষেত্র পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করা না হলে সমাজে অসঙ্গতি বিরাজিত থাকবে। মৌলিক চাহিদা পূরণে ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় জনগণের সার্বিক কল্যাণে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই অনুধাবিত। অনুন্নত সমাজের স্বাস্থ্য–পুষ্টিহীনতা রোধকল্পে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রস্তাবিত শিশুকাল থেকে সন্তান–সন্ততির নিরাপদ ভবিষ্যত পরিকল্পনায় টিকাদানসহ সকল স্বাস্থ্যগত উপাদানসমূহ যথাসময়ে গ্রহণ করার জন্য পিতামাতা–পরিবার–সমাজ–রাষ্ট্র সবাইকে একযোগে সমন্বিত পন্থায় কাজ করার অভিন্ন উদ্যোগই হবে যথার্থ সঙ্কট পরিত্রাণের অন্যতম প্রধান পন্থা। সময়ক্ষেপণ না করে মহামারি আকারে পরিণত হওয়ার পূর্বেই যেকোন রোগের প্রাদুর্ভাবকে সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে মোকাবিলায় সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই নিরন্তর সহায়ক শক্তি। পূর্ণাঙ্গ পরিসরে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বীকৃতি প্রদান; শুধু প্রধানমন্ত্রীকে নয় পুরো দেশবাসীকে যুগান্তকারী অনুপ্রেরণায় উদ্ভাসিত করেছে। এভাবেই বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে সর্বত্রই অপরাজিত থাকুক– এটিই প্রত্যাশিত।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়