বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু

মো. মোরশেদুল আলম | বুধবার , ৭ এপ্রিল, ২০২১ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সালিহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের অন্যতম মহামানব অভিহিত করে বলেছেন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রত্যাশী মানুষের হৃদয়ে তিনি একটি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। আর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক ভিডিওবার্তায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির এই মূলনীতিকে অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করেছেন। সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের ইতিহাসে একজন অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালবাসা ছিল অপরিসীম। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আসনটি ছিল সুরক্ষিত। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক তিনি। বিশ্বশান্তি আন্দোলনের অন্যতম সেনানী এবং সমকালীন বিশ্বের মানব জাতির মুক্তিসংগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ উৎসর্গীকৃতদের একজন। তিনি সারাজীবন নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের দাবি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম করে গেছেন। পৃথিবীতে যে কয়জন ক্যারিশমেটিক নেতা ছিলেন যেমন-আব্রাহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিং, ফিদেল কাস্ত্রো, নেলসন ম্যান্ডেলা-বঙ্গবন্ধু তাঁদের মতো বিশ্বনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুধু উপমহাদেশে নয়, বিশ্বের শোষিত মানুষের পক্ষে স্বগৌরবে অবস্থান নিয়েছিলেন। কেবল বাংলাদেশ নয়; এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন বঙ্গবন্ধু। জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথ, ন্যাম প্রভৃতি বিশ্বসংস্থায় তিনি নিপীড়িত রাষ্ট্রগুলোর প্রাগ্রসর প্রতিনিধি ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বশান্তির দূত; শোষিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার কণ্ঠস্বর। বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জাতিগত বৈষম্যকে তিনি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এবং তা থেকে মুক্তির দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি কংগ্রেসের সম্মেলন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রেরিত বার্তায় তাই প্রতিফলিত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, মস্কোতে বিশ্বশান্তি কংগ্রেসের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সংবাদে আমি সত্যিই আনন্দিত। একসময় যখন বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মানুষ সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা ও জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে, তখন এই কংগ্রেসই পারবে বিশ্বশান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সকলকে শক্তিশালী এবং অনুপ্রাণিত করতে। যদি বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তাহলে পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষকে নিজেদেরকে শোষণ থেকে মুক্ত করতে হবে এবং মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায়কে বিদায় করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি বা বাংলাদেশের জন্যই নয়; সমগ্র বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে গেছেন, তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বিশ্বশান্তি ছিল তাঁর জীবনদর্শনের মূলনীতি। বঙ্গবন্ধু বিশ্বে শান্তি স্থাপন ও মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু সোচ্চার ছিলেন। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের ন্যায়সংগত সংগ্রামকে তিনি সমর্থন দিয়েছেন। সেই সংগ্রামটি এশিয়া, আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকার যে এলাকায় হোক। তাই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, স্বাধীনতা ও শান্তিকামী সংগ্রামী মানুষের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা চাই বিশ্বের সর্বত্র শান্তি বজায় থাকুক, তাকে সুসংহত করা হোক। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফেরার পথে ভারতের দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করেছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লি বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্ত্থনা জানান। সেখানে আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, আপনি মানুষের মুক্তি ও মানবিক স্বাধীনতার জন্য কষ্ট ও আত্মত্যাগের শাশ্বত চেতনার মূর্ত প্রতীক।
১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে বঙ্গবন্ধুর যুগোশ্লাভিয়া সফরকালে প্রেসিডেন্ট টিটোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই নেতা ভিয়েতনাম ও লাওসে যুদ্ধের সমাপ্তি এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের অগ্রগতির পাশাপাশি স্বাধীন এবং সার্বভৌমভাবে ভিয়েতনাম ও লাওসের জনগণের জন্য তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াকে স্বাগত জানান। তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং আরব রাষ্ট্রগুলো ও ফিলিস্তিনের আরব জনগণের অধিকারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধার অপরিহার্যতার ওপর জোর দেন। উভয় নেতা কম্বোডিয়ায় বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানান। অস্ত্রের ঝনঝনানি ও পারমাণবিক পরীক্ষার ভয়াবহতা বঙ্গবন্ধুকে আতঙ্কিত করেছিল। ১৯৭৩ সালের আগস্ট মাসে কানাডায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সভায় তিনি বলেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি যে শান্তিতে বেঁচে থাকায় উন্নত এবং উন্নয়নশীল সকল দেশেরই স্বতঃস্ফূর্ত সাধারণ আগ্রহ থাকে। অস্ত্রের প্রতিযোগিতা মানবজাতির জন্য হুমকি হয়েই রয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু সম্পূর্ণ ধ্বংস করার হুমকিই অন্তর্নিহিত নয়, বরং পৃথিবীর সব সম্পদের ব্যাপক অপচয়সাধন। আমরা কি এসব সম্পদকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করার জন্য কিছু করতে পারি না, যাতে তা মানুষের দুর্দশা নিরসনে ও মানবকল্যাণে অবদান রাখতে পারে?
বঙ্গবন্ধু ঔপনিবেশিকতা ও জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণের ন্যায্য সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, আরব ভূখণ্ডকে অব্যাহত দখলে রাখা এবং আরব ও ফিলিস্তিনের জনগণের বৈধ অধিকারকে অস্বীকার করা শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ এবং অবিলম্বে তার ন্যায্য সমাধান দাবি রাখে। এখনো যারা দক্ষিণ আফ্রিকা, রোডেশিয়া, নামিবিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক এবং আফ্রিকার অন্যান্য অংশে ঔপনিবেশিকতা ও জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে সকল নিপীড়িত জনগণের ন্যায্য সংগ্রামকে সমর্থন করার জন্য আমরা আমাদের সংবিধান দ্বারা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা মোজাম্বিকের সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞের নিন্দা করি। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব বীর শহীদেরা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি শহীদদের নামে প্রতিজ্ঞা করছি যে আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার মুক্তিসংগ্রামরত মানুষের সাথে বাংলাদেশ সর্বদাই থাকবে। বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক, আরেকদিকে শোষিত। আমি শোষিত মানুষের পক্ষে’। বঙ্গবন্ধুর সেই বক্তৃতা সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আগ্রাসনের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ভূখণ্ড দখল, জনগণের অধিকারহরণের জন্য সেনাবাহিনী ব্যবহার এবং জাতিগত বৈষম্য ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনো অব্যাহত রহিয়াছে। আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং গিনিবিসাও এই সংগ্রামে বিরাট জয় অর্জন করিয়াছে। চূড়ান্ত বিজয়ে ইতিহাস ও জনগণ ন্যায়ের পক্ষেই যায়, এইসব বিজয় এই কথাই প্রমাণ করিয়াছে”।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জুলি ও কুরী’ শান্তিপদক পাওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমরা চাই, আমরা বিশ্বাস করি, শান্তিতে বাস করতে চাই, সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে চাই, পেট ভরে খেতে চাই, শোষণহীন সমাজ গড়তে চাই, দুনিয়া থেকে শোষণ বন্ধ হোক এটাই আমরা বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাস করি। আজ বিশ্বশান্তির প্রয়োজন।” উল্লিখিত সংবর্ধনা সভায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, আমরা বন্ধু হয়ে বাস করতে চাই। অস্ত্র দেখায়া লাভ নাই। যেখান থেকে অস্ত্র পেয়ে কেউ যদি আবার মাথা তুলে দাঁড়াও, জাগ্রত জনগণকে তোমরা দাবায়া রাখতে পারবে না। আমরা সব ভুলেও বন্ধুত্ব কামনা করি। আমরা বন্ধুত্ব কামনা করি সাউথইস্ট এশিয়ার সমস্ত দেশের সঙ্গে। আমরা বন্ধুত্ব কামনা করি সাবকন্টিনেন্টের সমস্ত দেশের সঙ্গে। আমরা বন্ধুত্ব কামনা করি ল্যাটিন আমেরিকা, আমেরিকা, কানাডা, দুনিয়ার সমস্ত দেশের সঙ্গে। কারণ আমরা দুনিয়ার সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই। কিন্তু আমাদের দেশের বৈদেশিক নীতি পরিষ্কার। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি ওহফবঢ়বহফবহঃ ঘবঁঃৎধষ ঘড়হ-ধষষরবফ ঋড়ৎবরমহ চড়ষরপু. আমরা বিশ্বাস করি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব। কারো সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম নয়। এই নীতিতে বিশ্বাস করেই আমরা এগিয়ে চলেছি। এই নীতিতে বাংলার মানুষ অটুট থাকবে।
১৯৭৫ সালের মে মাসে জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আফ্রিকান কৌশলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন ও দারুস সালাম ঘোষণা অনুমোদনের জন্য কমনওয়েলথ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ রোডেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্যের নির্যাতন উৎখাত ও স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশে ন্যায়ের সংগ্রামে নিয়োজিত আফ্রিকানদের সঙ্গে তাঁর দেশের একাত্মতা ঘোষণা করেন। সম্মেলনে উপস্থিত আফ্রিকান নেতাদের তিনি আশ্বাস দেন যে, তাঁদের ন্যায়ের সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সমর্থনের ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত থাকতে পারেন। আফ্রিকান ভাইদের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধু তাঁর দেশের মুক্তিসংগ্রামে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের জাম্বিয়া ও নামিবিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে কাজ করার প্রস্তাব দেন। তিনি তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট নায়ারের আলোচনা চলাকালেও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। ওই সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, এটা বিশ্বশান্তির প্রতি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তিনি আপস-মীমাংসায় ইসরায়েলের অস্বীকৃতিকে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সংকট জিইয়ে রাখার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেন। তিনি কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের জনগণের বিজয়কে কয়েক দশকব্যাপী রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আশঙ্কার বাস্তবায়ন বলে বর্ণনা করেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দূত-স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীক। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য তিনি সমগ্রবিশ্বে সমাদৃত। ১৯৭৩ সালের মে মাসে বিশ্বশান্তি পরিষদ কর্তৃক ঢাকায় আয়োজিত দু’দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তিপদক প্রদান করেছিলেন। পুরস্কার প্রদানকালে রমেশ চন্দ্র বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে’।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশব্দ দূষণ : সচেতনতা জরুরি
পরবর্তী নিবন্ধচড়ুই হল বন্ধু