একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, ফ্যাশন ডিজাইনে লেখাপড়ার মাধ্যমে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন নয়, বিশ্বমানের ব্র্যান্ড তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের পণ্যকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে ডিজাইনারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আপনারা বিশ্বমানের ব্র্যান্ড তৈরি করলে আমাদের রপ্তানিখাত অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির যে স্বপ্ন আপনারা দেখছেন তা অর্জিত হবে।
গতকাল সকালে নগরীর খুলশীর চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (সিবিইউএফটি) ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এমন বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ায় বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, রপ্তানি আয়ের প্রায় আশি ভাগ অর্জন আপনাদের মাধ্যমে হয়। আপনাদের এই অর্জনের ফলেই আমাদের দেশ সচল থাকে। কোভিড কিংবা ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা সংকটের মাঝেও আপনাদের কারণেই আমাদের দেশ সচল রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ফ্যাশনটাকে এগিয়ে নিতে হবে। মানুষের রুচির সাথে সমন্বয় করে আপনাদের নিত্যনতুন ডিজাইন আমাদের পুরো সেক্টরটাকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। বিজিএমইএ এগিয়ে এসেছিল বলেই আজ এমন চমৎকার একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। যেখানে অর্জিত জ্ঞান নিয়ে আমাদের সন্তানেরা শুধু দেশে নয়, বিশ্বের নানা দেশে ফ্যাশন জগতে নেতৃত্ব দেবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিবিইউএফটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবদুস সালাম, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী। গেস্ট অব অনার ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এসএম সাজেদুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী। স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক মশিউর রহমান, অধ্যাপক কাজী নাজমুল হুদা এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাব্বির আহমেদ ও নওশিন মরিয়ম।
শিল্পপতি এবং বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, সিবিইউএফটি আজ অনেক ছোট মনে হচ্ছে। কিন্তু এটি কোনো আইল্যান্ড নয়, নয় শুধুমাত্র একটি রুম। আপনারা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়তো চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ক্যাম্পাস হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা জীবন উপভোগ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমে গেছে। একসময় গার্মেন্টস সেক্টরের অনেক কিছুই বিদেশিদের দ্বারা করাতে হতো। আজ তোমরা করছ। এই নির্ভরতা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।
তিনি বলেন, দেশের রপ্তানি এবং শিল্পখাতে বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য ভূমিকা রাখবে। তোমরা সবাই সেই গর্বের গর্বিত অংশীদার। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সময়ের প্রতি সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সময়ের ব্যাপারে সজাগ না থাকলে গার্মেন্টস সেক্টরে টিকে থাকা কঠিন। সময়ের কাজটি সময়ে না করলে বা না শিখলে ভবিষ্যতে সফল হওয়া সম্ভব হবে না।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, শেখার কোনো শেষ নেই। কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আজকের শিক্ষার্থীরা একদিন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। আমি চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু বাংলাদেশে নয়, তারা পৃথিবীর গার্মেন্টস সেক্টরে নেতৃত্ব দিক। একদিন আমার এই চাওয়া ইনশাআল্লাহ পূর্ণতা পাবে।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের উপর দাড় করাতে হলে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ইনভেস্ট করি, শিল্প গড়ি। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব আপনাদের হাতে থাকে। আপনারা বড় মার্চেন্ডাইজার হয়ে, বড় মার্কেটিং ম্যানেজার হয়ে কিংবা টেকনিশিয়ান হয়ে প্রতিষ্ঠানকে দাড় করাতে হবে। আপনারা তা না পারলে আমাদের অর্থনীতি শক্ত ভিত পাবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব না হলে, কারিগরি শিক্ষায় বিপ্লব না হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওই তাগাদা থেকেই মূলত বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। তিনি বলেন, আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফ্যাশন ডিজাইন এবং টেকনোলজিতে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করে একদিন আমাদের ভাগ্য বদলের হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম বলেন, শিক্ষা এবং বিদ্যা অনেক বড় জিনিস। তাই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে শিখতে হবে। এই শিক্ষাই একদিন আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। আমাদের প্রতিটি কাজই কোনো না কোনো প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি ছাড়া সমাজ সামনে যাবে না। পৃথিবী সামনে যাবে না। পৃথিবীকে এগিয়ে নেওয়ায় নেতৃত্ব দিতে হলে আমাদেরকে প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
জীবনের সর্বক্ষেত্রে ফ্যাশন এবং ডিজাইনের গুরুত্ব অসীম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জগতটাই টেকনোলজি দ্বারা নির্ধারিত। টেকনোলজি–নির্ভর একটি সোসাইটিতে আমরা বসবাস করি। কোনো একটি টেকনোলজি যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদের সোসাইটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিদ্যুৎ, প্রেস, লেখাসহ সবকিছুই একেকটি টেকনোলজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাজের সবকিছুরই ডিজাইন আছে। এই ডিজাইনে যত দক্ষতা অর্জিত হবে তার জন্য পৃথিবী ততই সহজ হয়ে উঠবে। ৫০ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্টস রপ্তানিকে যদি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হয় তাহলে ফ্যাশন এবং ডিজাইনে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে হবে। গ্র্যাজুয়েট তৈরির সেই মিশন নিয়ে সিবিইউএফটি এগিয়ে চলছে।