বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে

| সোমবার , ১ জুলাই, ২০২৪ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিল না হওয়ায় সারা দেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া।

এদিকে একই দাবিতে গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়ন পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বলে জানিয়েছেন আজাদীর চবি প্রতিনিধি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় প্রত্যেক বিভাগে পরীক্ষা ছাড়া সবরকম ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। এছাড়া আজ সোমবার থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে চবি শিক্ষক সমিতি। আজ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতৃবৃন্দ। এ সময় ক্লাস, পরীক্ষা, দাপ্তরিক কাজসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে।

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের আহ্বানে ১, ২ ও ৩ জুলাই পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার জাবেদ।

এদিকে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১৩ মার্চ ২০২৪ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচি মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং শনিবার ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। আজ সোমবার থেকে আমরা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাব।

সরকার শিগগিরই এই দাবি মেনে নেবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, না হলে ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।

গত মার্চ মাসে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে প্রত্যয় স্কিম নামের একটি প্যাকেজ চালু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা।

শিক্ষক সমিতির দাবি, এ স্কিম বৈষম্যমূলক। এতে আগামী ১ জুলাই এবং এর পরে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবিতে আজ থেকে ক্লাসপরীক্ষা বর্জনসহ সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা।

উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষকদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার না করায় সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও। এছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি এবং কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সহায়ক কর্মচারী সমিতি সদস্যরা কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সভা করেন গতকাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাংকের তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত : শিক্ষামন্ত্রী