বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞ : বাংলাদেশি শ্রমিকের ছুটি ছাড়া ৩ বছর

স্পোর্টস ডেস্ক | শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

ফুটবলের বৈশ্বিক আসর মাঠে গড়ানোর আর সাত মাসের মতো বাকি থাকতে পুরনো বিষয় আবারও নতুন করে সামনে এলো অ্যামনেস্টির একটি প্রতিবেদনে। সেখানেই আব্দুল নামের এক বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক জানান-তিন বছর ধরে তিনি কোনো সাপ্তাহিক ছুটি পাননি। কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা শুরু থেকেই চলছে। ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচন ঘিরে ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠেছে অনেকবার।
অনেক অভিযোগ, আলোচনা-সমালোচনার পথ মাড়িয়ে আগামী ২১ নভেম্বর মাঠে গড়াতে যাচ্ছে প্রতিযোগিতাটি। তবে, দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এখনও আছে আগের মতোই। বিশ্বকাপ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু প্রকল্পে কাজ করা নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি। তাদের প্রতিবেদনে নিরাপত্তা রক্ষী, অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরূপ আচরণ, বিধি অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি না দেওয়াসহ নানা অসঙ্গতি উঠে এসেছে। এর প্রেক্ষিতে অ্যামনেস্টি প্রশ্ন তুলেছে-বাধ্যতামূলক শ্রমের সীমা কতটুকু? আটটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানির ৩৪ জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে তাদের ‘মানবেতর’ জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকরা কাতারে মাসের পর মাস, এমনকি বছরে পর বছর কাজ করেছেন কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াই। ওই শ্রমিকদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, কাতারের আইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক যে ছুটি পাওয়ার কথা, তারা সেটা পাননি। আর যারা ওই ছুটি কাটিয়েছেন, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে মজুরি কর্তন করে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কাতারে হোটেলে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করা কেনিয়ার এক নাগরিকের কথা। বাংলাদেশের ওই শ্রমিকের মতো তিনিও জানিয়েছেন, এমনও সময় গেছে যখন তিনি মাসের পর মাস কাজ করেছেন কোনো ছুটি ছাড়া। দেশটিতে শ্রমিকদের ভাষা, জাতীয়তা ও বর্ণভেদেও বৈষম্য করা হয় বলে অভিযোগ এনেছে অ্যামনেস্টি। কাতারের আইন অনুযায়ী, একজন শ্রমিকের ওভারটাইমসহ সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ৬০ ঘণ্টা এবং প্রত্যেকের পুরো পারিশ্রমিকসহ সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম (ডে-অফ) পাওয়ার কথা। অ্যামনেস্টির দাবি, ৩৪ জন নিরাপত্তা রক্ষীর ২৯ জন তাদের জানিয়েছে, প্রতিদিন তারা নিয়মিত ১২ ঘণ্টা কাজ করেছেন। ২৮ জন বলেছেন, তাদেরকে সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়া হয় না। যার অর্থ হচ্ছে, অনেক শ্রমিক প্রতি সপ্তাহে ৮৪ ঘণ্টা করে কাজ করেন। দ্য গার্ডিয়ানের গত বছর ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকে দেশটিতে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকার নাগরিক ছিলেন তারা। এর অর্থ হলো, কাতারে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে এই পাঁচ দেশের গড়ে ১২ জন করে শ্রমিক মারা গেছেন প্রতি সপ্তাহে। ২০১০-২০২০ পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বকাপের দেশটিতে মারা গেছে ৫ হাজার ৯২৭ জন। কাতারে পাকিস্তানি দুতাবাসের দেওয়া তথ্যমতে, ওই ১০ বছরে মারা গিয়েছিল ৮২৪ জন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেই ধারণা করা হয়। কারণ, মৃত্যুর ওই সংখ্যার মধ্যে ফিলিপিন্স ও কেনিয়ার মতো দেশগুলোর হিসাব নেই, যারা অনেক বেশি শ্রমিক কাতারে পাঠিয়েছে। ২০২০ সালের শেষ কয়েক মাসের তথ্যও এখানে যোগ করা হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে হারিয়ে শীর্ষে ইমরুলের শেখ জামাল
পরবর্তী নিবন্ধনিলামে উঠতে যাওয়া ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের জার্সি নিয়ে বিভ্রান্তি