ভারতের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে গত ৫ অক্টোবর থেকে। এরই মধ্যে ১৮ টি ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে। ভারতের দশটি শহরে হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। আর সবগুলো শহরই ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। চেন্নাই, মুম্বাই ঘুরে আমি এখন মুম্বাইতে। চেন্নাইতে চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামের একেবারে কাছেই ছিলাম। পায়ে হেটে স্টেডিয়ামে যেতে সময় লাগতো তিন থেকে চার মিনিট। কিন্তু চেন্নাইতে বিশ্বকাপের কোন উত্তাপ দেখিনি। বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার যে ম্যাচটি হয়েছিল চিদাম্বাবরম স্টেডিয়ামে সে ম্যাচে দর্শক এসেছিল মাত্র ১৪ হাজার। অথচ সে স্টেডিয়ামের ধারন ক্ষমতা পঞ্চাশ হাজারের বেশি। চেন্নাই শেষে গন্তব্য ছিল পুনেতে। অবশ্য সেখানে বিশ্বকাপের উন্মাদনা খানিকটা দেখা গেছে। তার অবশ্য একটা কারণও ছিল। মহারাস্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ম্যাচটি ছিল ভারতের। সে জন্যই দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। এবারের বিশ্বকাপে যেখানে ভারতের খেলা সেখানে দর্শক হচ্ছে। বাকি ম্যাচ গুলোতে গ্যালারী ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে।
গতকাল সকালে পুনে থেকে মুম্বাই রওয়ানা হই। ১৪১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে প্রায় আড়াই ঘন্টা লেগে যায়। বিশাল পুনে–মুম্বাই হাইওয়ে। মহা সড়কের দু’পাশে পাহাড়। পুরো সড়কে অন্তত ৫টি টানেল রয়েছে পাহাড়ের নিচে। দারুণ আনন্দদায়ক ভ্রমণ বলা যায়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে প্রথম গন্তব্য ছিল মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। সেখানে তখন ইংল্যান্ড দল অনুশীলন করছিল। কারন আজ তাদের খেলা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ভারতের অন্যতম ঐতিহ্যবাহি স্টেডিয়াম এই ওয়াংখেড়ে। গতকাল দুপুরে যখন স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করছিলাম তখন সেখানে চলছিল বিশাল কর্মযজ্ঞ। কারন রাত পোহালেই যে এই স্টেডিয়ামে বসবে এবারের বিশ্বকাপের ম্যাচ। প্রধান ফটক থেকে অনেক দূরে মিডিয়া সেন্টার। দারুণ সুন্দর স্টেডিয়াম। সে সাথে তার প্রেস বক্সও।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পাশেই মুম্বাইয়ের বিখ্যাত মেরিন ড্রাইভ। সাগরের দু’পাশে বিশাল বিশাল দালান। আর সাগর ঘেষে এই মেরিন ড্রাইভ। তবে এখানে কোন বিচ নেই। এই মেরিন ড্রাইভে কথা হচ্ছিল স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া বেশ কয়েকজনের সাথে। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই মাঠে যে কাল বিশ্বকাপ তোমরা জানো। যে জবাবটা তাদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল সেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। এই সব স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা জানে না তাদের পাশের স্টেডিয়ামটিতে বিশ্বকাপ ম্যাচ হচ্ছে। শুধু তাই নয় মুম্বাই শহরের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আসলেও বিশ্বকাপের কোন কিছুই চোখে পড়েনি। সড়ক কিংবা মহা সড়ক কোথাও চোখে পড়েনি কোন ব্যানার কিংবা ফেস্টুন। যদিও বিশ্বকাপের সব টিকিট অন লাইনে বিক্রি করা হয়েছে কিন্তু সে টিকিট কোথা থেকে সংগ্রহ করা হবে তারও যেন হদিস পাচ্ছিল না যারা টিকিট কিনেছে তারা। এমনকি শহরের টেক্সি চালকরাও জানেনা ওয়াংখেড়েতে বিশ্বকাপের ম্যাচ হচ্ছে। তারাও শুনছে আমাদের কাছ থেকে। আর এসব শুনে এবং দেখে অবাকই হতে হয়।
আইপিএলের কারণে ভারতের ক্রিকেট উন্মাদনা বিশাল। আর ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম মুম্বাইয়ের দল মুম্বাই ইন্ডয়ান্সের হোম গ্রাউন্ড। ক্রিকেট ঐতিহ্যে ভরা একটি শহর। আর এই শহর সুনিল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকারদের শহর। কিন্তু সে শহরেই কিনা নেই বিশ্বকাপকে ঘিরে কোন উন্মাদনা। সত্যিই অবাক হতে হয়। এমনিতেই এবারের বিশ্বকাপ আয়োজনে ভারতকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। ভেন্যুগুলো অনেক দূরে হওয়ায় ভারতের বাইরে থেকে যারা এসেছে তাদের যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমনি ভারতীয়দেরও সমস্যা হচ্ছে। তবে যেখানে ভারতের খেলা থাকছে সেখানে কিন্তু নানা সমস্যাকে টপকে চলে যাচ্ছে ভারতের দর্শকরা। কিন্তু অন্য ম্যাচগুলোতে গ্যালারী থাকছে ফাঁকা। আজ থেকে মুম্বাইতে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ। একটি সেমিফাইনাল সহ ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। এখন দেখার বিষয় দর্শকরা কেমন আগ্রহ দেখায় মুম্বাইয়ের বিশ্ব্কাপ ম্যাচগুলোতে।