বিশেষ শর্ত নেই, অংশ নিতে পারবে ৮০ প্রতিষ্ঠান

কমলাপুর আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন করে টেন্ডার

হাসান আকবর | রবিবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ at ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ

নির্ধারিত সময়ে টেন্ডার করা সম্ভব হয়নি। বিগত সরকারের আমলের টেন্ডারে কমলাপুর আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিং কাজ যাতে বিশেষ একটি কোম্পানি পায়; ওই ধরনের শর্ত জুড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। দেশের আইসিডি মালিকদের বিরোধিতার মুখে পড়ে ওই টেন্ডার। ছাত্রগণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। মেয়াদ শেষে ডিপিএম পদ্ধতিতে আগের কোম্পানিকে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। অবশেষে গতকাল আগের বিশেষ শর্তগুলো বাদ দিয়ে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এবার টেন্ডারে বিশেষ শর্ত না থাকায় কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন অন্তত ৮০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে গতি আনার লক্ষ্যে ঢাকা এবং সন্নিহিত অঞ্চলের ব্যবসায়ীশিল্পপতিদের সুবিধা প্রদান এবং ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর চাপ কমাতে ১৯৮৭ সালে চালু করা হয় কমলাপুর রেলওয়ে আইসিডি। দেশের প্রথম এই আইসিডি রেলওয়ের জায়গায় নির্মিত হলেও পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। ঢাকা অঞ্চলের রপ্তানি পণ্যবোঝাই কন্টেনারগুলো রেলওয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডিতে নিয়ে আমদানিকারকদের পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দিনে দিনে এক কর্মযজ্ঞে পরিণত হয় কমলাপুর আইসিডি। একইসাথে হ্যান্ডলিং করা হয় প্রয়োজনীয় খালি কন্টেনারও। বছরে ৮০ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার এই আইসিডিতে হ্যান্ডলিং হয়। গত বছর কমলাপুর আইসিডিতে ৩৯ হাজার ২১১ টিইইউএস আমদানি পণ্য বোঝাই এবং ৪০ হাজার ৭৯৬ টিইইউএস রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়।

বেসরকারি অপারেটরের মাধ্যমে কমলাপুর আইসিডিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ঠিকাদার হিসেবে সাইফ পাওয়ারটেক কমলাপুর আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হয় বিগত সরকারের আমলে। কিন্তু টেন্ডারে ‘রেলওয়ের মাধ্যমে লোডিং আনলোডিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকার’ একটি শর্ত দেওয়া হয়। এই শর্তটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে দেশের ১৯টি আইসিডির পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, সাইফ পাওয়ারটেককে কাজটি দেওয়ার জন্যই মূলত এমন একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

দেশের বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা টেন্ডারের ওই শর্ত বাতিল করার দাবি জানিয়ে বলেছিল, চট্টগ্রামের বেসরকারি আইসিডিগুলোর সাথে কমলাপুর আইসিডির কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। কমলাপুর একটি চালু আইসিডি। এই ধরনের একটি আইসিডিতে অপারেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়ে সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার অপচেষ্টা প্রতিষ্ঠানের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। তারা বলেছিলেন, বন্দরের উচিত দেশের আমদানিরপ্তানির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে বন্দরের কাজকে ঝুঁকিতে না ফেলা। টেন্ডারে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে, এতে দেশের ১৯টি বেসরকারি আইসিডি পরিচালনাকারী কোনো প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হবে না। যারা নিজেদের জমিতে নিজেদের ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে বড় বড় আইসিডি অপারেট করছে তাদেরকে বাদ দেওয়ার শর্তগুলো আইসিডি মালিকদের ক্ষুদ্ধ করে।

বিষয়টি নিয়ে বিকডার প্রতিবাদের মাঝে দেশে শুরু হয় ছাত্রগণঅভ্যুত্থান। এতে সরকার পতন ঘটে। সরকার পতনের পর ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়। এতে করে নির্ধারিত সময়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় ডিপিএম পদ্ধতিতে ঠিকাদার হিসেবে সাইফ পাওয়ারটেকের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়।

অবশেষে কমলাপুর আইসিডিতে পাঁচ বছরের জন্য অপারেটর নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গত ৮ এপ্রিল বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) আহূত টেন্ডারে আগামী ৬ মে বেলা ১২টা পর্যন্ত টেন্ডার ডকুমেন্টস ক্রয় এবং ৭ মে বেলা ১২টা পর্যন্ত টেন্ডার দাখিল করা যাবে। ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টায় টেন্ডার বক্স খোলা হবে।

কমলাপুর আইসিডিতে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দ্বিতীয় দফা টেন্ডার আহ্বানের পর চট্টগ্রামের আইসিডি মালিক, বার্থ অপারেটর এবং শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। আগের মতো বিশেষ কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার জন্য কোনো বিশেষ শর্ত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করে তারা। তবে টেন্ডার ডকুমেন্টস কেনার আগে বিষয়টি জানার সুযোগ নেই জানিয়ে সূত্র বলেছে, তেমন বিশেষ কোনো শর্ত জুড়ে দেওয়া হলে আবারো প্রতিবাদ জানানো হবে। বন্দরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, টেন্ডারে রেলওয়ের মাধ্যমে লোডিংআনলোডিংয়ের শর্ত পরিবর্তন করে জাহাজের মাধ্যমেও কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠা ১৯টি আইসিডি, বার্থ অপারেটর এবং শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরসহ অন্তত ৮০টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে। যাদের দর বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য ঠিক মনে হবে তাদেরকে কাজ দেওয়া হবে। বিশেষ কোম্পানির জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা এবারের টেন্ডারে রাখা হয়নি বলে বন্দরের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। তবে তেমন কোনো শর্ত নেই। যোগ্য অপারেটর নিয়োগের জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কমলাপুর আইসিডির কন্টেনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের আরেকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমলাপুর আইসিডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি স্থাপনা। এই আইসিডির কার্যক্রমের ওপর চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের ইমেজ বহুলাংশে নির্ভরশীল। ইতোপূর্বে এই আইসিডি থেকে ৪৯৫ টিইইউএস কন্টেনার গায়েব করা হয়েছিল। যেগুলোর হদিশ মিলেনি। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ৪৯৫ টিইইউএস কন্টেনার গায়েবের ঘটনা ঘটে। ওগুলো শুল্ক পরিশোধ না করে খালাস করা হয়েছে। ওই ঘটনার তদন্ত চললেও তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংস্কার দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে দুর্বৃত্তের হামলায় নারী-পুরুষসহ আহত ৯