বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা মানতে হবে

চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ

| সোমবার , ৮ মে, ২০২৩ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন ৪০০৫০০ রোগী। বেশিরভাগ শিশুকিশোর। ওয়াসার পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে শঙ্কায় আছেন অভিভাবকরা। তাঁরা জানান, ওয়াসার লাইনে পানি আসে না; যা আসে, সেখানে দেখা যাচ্ছে লবণাক্ত পানি আসছে। ওই পানি খেয়ে অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। জানা যায়, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই তিনগুণের বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। একই অবস্থা চট্টগ্রামের অন্যান্য হাসপাতালেও। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, অতিরিক্ত লবণাক্ততা ও সরবরাহ লাইনে দূষিত পানির কারণে পানিবাহিত ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছি, শিশুদের যেনও বিশুদ্ধ ও টাটকা খাবার দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে নির্দেশনা মেনে দিতে হবে ১০১৫ চামচ খাবার স্যালাইন।

এদিকে দৈনিক আজাদীতে গত ৫ মে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব সতর্কতায় কয়েকদফা নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর স্বাক্ষরে গত ৪ মে এসব নির্দেশনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে বেশ কয়টি উপজেলায় ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী অভিকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। আর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের (এমওডিসি) ডা. নুরুল হায়দার কমিটির সদস্য সচিব। এছাড়া সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা থোয়াইনু মং মার্মাকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটি ডায়রিয়ার প্রকোপ থাকা (বিশেষ করে বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ) উপজেলাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে সিভিল সার্জনের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। নির্দেশনা প্রদান ও কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। জনস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি অতি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার জন্য সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রদত্ত নির্দেশনার মধ্যে রয়েছেু সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ওষুধ চিকিৎসা সামগ্রী মজুদ রাখতে হবে। ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিশুদ্ধ পানি পান করার মাধ্যমে এবং সেই পানি প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহারের মাধ্যমে যে রোগব্যাধি সংক্রমিত হয়ে থাকে তাকেই পানিবাহিত রোগ বলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে প্রত্যেক বছর পৃথিবীতে প্রায় দশ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হলো পানিবাহিত রোগ। ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। ২৪ ঘণ্টায় ৩ বা তার বেশি পাতলা পায়খানা হলে সেটিকে ডায়রিয়া বলে। বাংলাদেশে ডায়রিয়া ভয়াবহ নতুন কোনো রূপ নয়। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে ডায়রিয়া সংক্রামণ নগরজুড়ে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার জন্য মূলত দায়ী কিছু ব্যাকটেরিয়া। বর্তমানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যা ৬০ বছরের ইতিহাসে নজির বিহীন।

সামপ্রতিক সময়ে যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগ দূষিত পানি ও বাসি খাবার গ্রহণের কারণে হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়াও গত ২ বছর মানুষজন নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসা এবং স্বাস্থ্যবিধি শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষজনের মধ্যে হাত পরিষ্কার করার প্রবণতা কমে আসছে যা ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। হাসপাতালে আসা রোগীর বেশিরভাগই অভিযোগ, ওয়াসার পানি পান করেই তাদের সমস্যা হয়েছে। আক্রান্তরা পানি ফুটিয়ে পান করেনি। অনেকে এমনও বলেছে, পানি ফুটালেও দুর্গন্ধ যাচ্ছে না।

ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা বলেন, পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। পানি বলগ ওঠার পর ৪৫ মিনিট ফুটাতে হবে, এরপর ঠাণ্ডা করে খেতে হবে, রাস্তার খাবার বর্জন করতে হবে, আর হাত ধুতে হবে। অবশ্যই খাওয়ার আগে ও টয়লেট থেকে আসার পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। এই তিনটি মানতেই হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে