বিশৃঙ্খল কাপ্তাই সড়কে নিত্য দুর্ঘটনা, চরম দুর্ভোগ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা, বাড়তি গাড়ির চাপ ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বাঁক সড়কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিশৃঙ্খল সড়কে পরিণত করেছে। এতে দিন দিন বাড়ছে যানজট, হচ্ছে চরম দুর্ভোগ ও ঘটছে দুর্ঘটনা।
সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে এ বছরে অন্তত ৫০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ১০ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী। শুধুমাত্র গত এক মাসে এ সড়কে ৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ৪ জন। আহত হয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে গত ২৯ ডিসেম্বর কাপ্তাই সড়কের পাহাড়তলী এলাকায় বৃদ্ধা সাজিয়া খাতুন (৫৫), ২২ ডিসেম্বর সড়কের নোয়াপাড়া পথেরহাট এলাকায় সাজেদুল ফয়সাল (২৩), ১২ ডিসেম্বর দুপুরে আকতার হোসেন (৯), ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজ গেটের সামনে মন্টু দে (৬৫), ১৬ নভেম্বর গোডাউন এলাকায় মো. নেজাম (৩৫), ২৭ আগস্ট চন্দ্রঘোনা বুইজ্জার দোকান এলাকায় জামাল উদ্দিন (৫০) নিহত হন।
সরেজমিনে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের তাপবিদ্যুৎ গেট থেকে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে রাঙ্গুনিয়া অংশ। এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করেন। দিন দিন সড়কে বাড়তি গাড়ির চাপ সহ নানা কারণে সড়কের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ক্রমে লাগামহীন হয়ে পড়ছে।
সড়কের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য দিন দিন দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। ফুটপাত দখল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও যাত্রী উঠানামা করানো, সড়কের উপর বাজার, যেমন খুশি তেমন স্টাইলে গাড়ি চালানো, ফিটনেস ও নম্বরবিহীন যানবাহন, লাইসেন্সবিহীন চালক, ট্রাফিক সিস্টেমের অভাব, ঘুষ বাণিজ্য, সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা, টার্মিনালের অভাব, আইন না মানার মানসিকতা সহ নানা কারণে কাপ্তাই সড়কে শৃঙ্খলা নেই বলে মনে করছেন সচেতনমহল। এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফুটপাত দখল মুক্ত করা হলেও তা আবারও দখল করে নেওয়া হচ্ছে। এতে সড়ক জুড়ে তীব্র যানজট, নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা সহ নিত্য দুর্ভোগ লেগেই রয়েছে।
রোয়াজারহাট বাজারে আসা হুমায়ন কবির বলেন, ‘এলোমেলোভাবে গাড়ি রাখা ও সড়কের উপর গাড়ি রেখে যাত্রী উঠানামা করানোর কারণে দিনভর রোয়াজারহাটে যানজট লেগেই থাকে। কিন্তু এটি দেখার জন্য যেন কেউ নেই।’
আবু আহম্মেদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কাপ্তাই সড়কের লিচুবাগান, বুইজ্জার দোকান, চারাবটতল, মরিয়মনগর, পারুয়া ও গোডাউন ব্রিজ দিয়ে কাঠবোঝাই দ্রুতগামী চাঁদের গাড়ির বেপরোয়া চালকদের কারণে কিছুদিন পরপরই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু এরপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’
আবদুল করিম নামে ইছাখালী এলাকার এক যাত্রী বলেন, ‘ব্যাংকে চাকুরির কারণে প্রতিদিনই আমি কাপ্তাই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। এই সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের উপর বাজার, অবৈধ সিএনজি অটোরিঙা স্ট্যান্ড উচ্ছেদ সহ ফুটপাত দখল মুক্ত করা গেলে সড়কে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিই থাকবে না।’
জসিম উদ্দিন নামে শান্তিরহাট এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় ট্রাফিক পুলিশ বঙ থাকলেও স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশ নেই। তবে তারা মাঝেমধ্যে এসে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে যায়। এছাড়া অবৈধ যান চলাচলে ট্রাফিক পুলিশের টোকেন বাণিজ্যও উল্লেখযোগ্য।’
চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নেতা শাহ আলম চৌধুরী বলেন, ‘বাঁকগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাঁকগুলোতে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ও স্বচ্ছ আয়না স্থাপন করা প্রয়োজন। বাঁকগুলো সংস্কার করলে দুর্ঘটনা কমবে।’
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিল্কী বলেন, কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়া অংশে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ আছেন মাত্র তিনজন। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় ট্রাফিক পুলিশ বাড়ানো সম্ভব না। তা সত্ত্বেও নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যানবাহনের লাইসেন্স ও ফিটনেস যাচাই করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটোকাইয়ের পাথরে রক্তাক্ত চবি শিক্ষার্থী
পরবর্তী নিবন্ধটেক্সি নিয়ে বাসায় ফেরার সময় চালককে ছুরিকাঘাত