বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে

| বুধবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ষষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনার সমন্বয়কৃত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস জানিয়েছে, দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ বা প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বয়স ২৯ বছরের কম। অর্থাৎ তারুণ্যের কারণে জনসংখ্যার যে জনমিতিক সুবিধা, তা পুরোপুরি বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশে ২৯ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এ বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ১০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার হিসাবে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৬৮ লাখ বা ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, ৪ বছরের কম বয়সী রয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার বা ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৮ লাখ বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ; ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৫৫ লাখ বা ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা ১ কোটি ৪৭ লাখ বা ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৩৫ বছরের কম বয়সীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশের কিছু বেশি বা ১০ কোটি ৮৭ লাখের কিছু বেশি।

এই প্রতিবেদনে তরুণদের সংখ্যাধিক্যের খবরে আমরা বিছুটা উজ্জীবিত। কেননা দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের ভূমিকা অনন্য। তারা তাদের মেধাকে সঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে জাতিকে সমৃদ্ধ করার কাজে অংশ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের এই যাত্রায় দেশের তরুণ সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, দেশের তরুণ সমাজকে তার অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।তবে বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে তরুণদের এই যাত্রা খুব সহজ হবে না, যদি না তারা সঠিকভাবে নিজেদের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা, সম্ভাবনা ও সীমিত সম্পদের সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যম তৈরি করে। এই তরুণদের সামনেই আজ সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের উন্নয়ন এবং বিশ্বের বিভিন্ন আর্থসামাজিক সমস্যাগুলো দূর করার সুযোগ রয়েছে। সুযোগ আছে দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার। এই সুযোগ কিন্তু শুধু বাংলাদেশের তরুণদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সব তরুণই এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে ও করবে। আমাদের তরুণেরা ও যুবসমাজ কি ভবিষ্যতের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হচ্ছে? যদি তারা তৈরি না হয়, তাহলে ওই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিশ্বায়নই কিন্তু জীবনের পথ চলায় চাকরি হারানো, হতাশাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।’

তারুণ্যের এক প্রতিনিধি লুৎফর রহমান নাঈম এক লেখায় লিখেছেন, আজকের তরুণ সমাজ ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক। তারা যদি অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়, তাহলে সমাজে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করবে। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সকল কল্যাণমূলক কাজে তরুণদের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে থাকলে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজের আকাশ থেকে কালো মেঘের ছায়া কখনো দূর হবে না। সমাজ পরিবর্তন করতে চাইলে তরুণ সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমাজকল্যাণমূলক সকল কাজে। তারুণ্য হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার। তাই তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে করতে হবে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। জরাজীর্ণ সমাজ ব্যবস্থাকে সংস্কার করে নতুন কিছু রচনার জন্য সবার আগে তরুণ সমাজকেই জাগতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই সমাজের স্তরে স্তরে দুর্নীতির যে সমারোহ তা দূর করা সম্ভব।

সব ধরনের বিভ্রান্তি থেকে তরুণদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিশাল এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে