বিলুপ্তির পথে মাছ ধরার চাঁই

শফিউল আজম, পটিয়া | শনিবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় খাল, বিল, ও নদীনালায় মাছ ধরার অন্যতম জনপ্রিয় ফাঁদ ‘চাঁই’ এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময় খালে বিলে ছিল দেশীয় মাছে ভরপুর। বৃষ্টির পানি জমিতে জমলেই এ চাঁই দিয়েই মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তো কৃষকশ্রমিক থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এখন খালে বিলে আর মাছের সেই উপস্থিতি নেই। যেন দেশীয় মাছের অকাল শুরু হয়েছে। গেল ভরা বর্ষায় জমিতে প্রচুর পানি থাকলেও, নেই এক সময়ের দেশীয় মাছ ধরার সেই জৌলুস। সময়ের বিবর্তনে মাছ ধরার সেই জৌলুস থেমে যাওয়ার পাশাপাশি হারিয়ে যাচ্ছে মাছ ধরার জনপ্রিয় ও স্থানীয়ভাবে তৈরীকৃত সেই চাঁই। নতুন প্রজম্মের কাছেও ধীরে ধীরে পরিচিতি হারাচ্ছে চাঁই নামের সেই উপাদানও।

আবুল কাসেম নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি জানান, গত ১০/১৫ বছর পূর্বেও বর্ষা মৌসুমে খালে বিলে চাঁই বসালে ভরপুর মাছ পাওয়া যেত। দেশীয় মাছে খুবই আয়েশ করে করে দু’চারদিন খাওয়া হতো। এখন সেই সুসময় আর নেই। জমিতে বা খালে বিলে যেমন দেশীয় মাছের আকাল চলছে। তেমনিভাবে মাছ ধরার অন্যতম জনপ্রিয় উপাদান চাঁইও হারিয়ে যাচ্ছে। পটিয়া পৌর সদরের থানার হাট ও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজারগুলোয় কিছু চাঁই বিক্রি করতে দেখা গেলেও আগের মতো ঘরে ঘরে সেই চাঁই আর দেখা মিলে না। যেন খালে বিলে মাছ নেই, তাই চাঁইও নেই!

হাটে পাইকারি ও খুচরা ক্রয়বিক্রয় করা হচ্ছে মাছ ধরার চাঁই। বছরের এ সময়টা মাছ ধরার এই ফাঁদ বেশি কেনাবেচা হয়। এ মৌসুমে কেনা একেকটি বাঁশের মাছ ধরার চাঁই কমপক্ষে এক বছর ব্যবহার করা যাবে। খরনা ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের কারিগর জাফর জানান, তারা প্রথমে বাঁশ কেটে শলা তৈরি করেন। পরে সেগুলো হালকা রোদে শুকিয়ে লইলনের সূতা দিয়ে বেঁধে বেঁধে চাঁই বা ফাঁদ বানানো হয়। এ কাজে গৃহবধূ থেকে শুরু করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সহায়তা করে থাকেন। ফাঁদ বানানোর কাজে সকালসন্ধ্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ ফাঁদ দিয়ে চিংড়ি, পুঁটি, খৈলশা, দারকানা ও ট্যাংরা টাকিসহ ছোট মাছ শিকার করা হয়। এতে খাবারের জন্য বাজার থেকে মাছ কিনতে হয় না অনেকেরই। তবে আগের মতো সেই চাহিদা নেই। চাহিদা দিন দিন কমে আসছে।

কচুয়াই ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের হাজমপাড়ার ফাঁদ তৈরির কারিগররা জানান, একটি বাঁশের দাম ২৫০৩০০ টাকা। একটি বাঁশ থেকে কমপক্ষে ৬৭টা চাঁই তৈরি করা হয়। একটি তৈরি করতে ২ জনের ৩ দিন সময় লাগে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। প্রতিটি চাঁই বড় ৩৫০৪০০ টাকা ও ছোটটি ২৫০২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পটিয়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে বলেন, বর্ষার সময় নদী, নালা ও খালবিলে পানিতে টইটম্বুর থাকে। এক সময় এ পানিতে মানুষ দেশীয় মাছ ধরতে হুমড়ি খেয়ে পড়তো। মাছ ধরার ফাঁদ চাঁইসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে মানুষ মাছ ধরতো। এখন কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে কিটনাশকের ব্যবহারের ফলে মাছ উৎপাদন ও বংশবিস্তার কমে যাচ্ছে। মাছ নদী থেকে খাল বিলের মাধ্যমে গ্রামের বিভিন্ন জলাশয়ে প্রবেশ করতো। এখন যত্রতত্র বাড়ি ঘর নির্মাণের ফলে মাছের অবাধ বিচরণ ও স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেও দেশীয় মাছ কমে যাচ্ছে। তবে এখন দেশীয় মাছ গুলসা, পাবদা, টেংরা, দেশী শিং ও মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। ফলে এ মাছ হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে এবং বাজারের চাহিদাও মিটাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার লাশ তুলে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাদা, দুর্ভোগে দুই হাজার কৃষক