বিলায়তের উজ্জ্বল নক্ষত্র : একটি বিশুদ্ধ হাদিস শরীফ মর্মার্থের সাদৃশ্যতা

অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ | শুক্রবার , ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

নবুয়তের প্রতিচ্ছবি বিলায়ত। আরবীতে বলা হয় ‘আল্‌ বিলায়াতু জিল্লুন নবুওয়াত’ মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার পূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে বিলায়ত অর্জিত হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাতে নববীর অনুসরণ ছাড়া বিলায়ত অকল্পনীয় বিষয়। ‘অলি’ শব্দের সরল অর্থ মহান আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্যপ্রাপ্ত বন্ধু। মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার আদর্শ অনুসরণ করে বিলায়তের মর্যাদাপ্রাপ্ত মহান প্রভুর নৈকট্যধন্য কিছু ব্যক্তি থাকেন; যারা জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সমূহ গুণে গুণান্বিত হন। মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ায় তারা নিজেদেরকে অতুলনীয় করে তোলেন। হযরত আবু হোরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার কাছ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি ইরশাদ করেন- আল্লাহ তা’য়ালা যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন; জিব্রাইল আলাইহিস ছালামকে ডেকে বলেন- আল্লাহ অমুককে ভালোবাসেন, তুমিও ভালোবাস। তখন জিব্রাইল আলাইহিস ছালাম তাকে ভালোবাসেন। অতঃপর আসমানী জগতের ফিরিশতাদেরকে ডেকে বলেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা অমুককে ভালোবাসেন। তোমরাও তাঁকে ভালোবাস। তখন আসমানের বাসিন্দা সকল ফিরিশতা তাকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেন। তখনই এ জগতে (জমিনে) তাঁর ব্যাপক ও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়।
[১) আল জামেউছ ছহীহ, হাদিস নং ৩০৩৭, ৫৬৯৩ কৃত: আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী, ২) ছহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৮৭৩, কৃত: মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল কুশাইরী ৩) আল মুয়াত্তা, হাদিস নং ৩৫০৬, কৃত: ইমাম মালেক বিন আনাস।]
উপরোক্ত হাদিস শরীফের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করলে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হবে উক্ত হাদিসের মর্মার্থের সাথে সাদৃশ্যতা রয়েছে মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকার মহান দিকপাল, আধ্যাত্মিক জগতের দীপ্তিমান উজ্জ্বল নক্ষত্র নবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার বংশের ৩১তম পুরুষ, মাইজভাণ্ডারী রূহানিয়তের পঞ্চম মহাপুরুষ, আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার চেয়ারম্যান হযরতুলহাজ্ব শাহ্‌সূফী সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্‌-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল্‌-মাইজভাণ্ডারী মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর। ১৯৬৭ ঈসাব্দ, ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ ও ১৩৮৬ হিজরি সনের ঐতিহাসিক সেদিনটা ছিল জুমা’বার। জুমা’বারে বাবা আদম আলাইহিস ছালামার সৃষ্টিজগতে শুভাগমন; সেদিনই তাঁর ওপর আল্লাহ পাকের দয়া এবং ঐদিন তার বেছাল সাধিত হয়। জুমার দিনে উম্মতের আমলনামা মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার দরবারে পেশ করা হয়। সেদিন ভক্তিশ্রদ্ধা নিয়ে অধিক হারে দরূদ পাঠ করার জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লাম উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন। জুমার দিন এমন এক বিশেষ মুহূর্ত আছে যাতে মুসলমানদের প্রার্থনা নিশ্চিত কবুল হয়। জুমার দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। সপ্তাহে সাতটা দিনের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জুমাবারই উক্ত তাত্ত্বিক খোশরোজ শরীফের সৌভাগ্য অর্জন আত্মিক মহাপুরুষগণ রূহানিয়তের নজরে বিশ্লেষণ করলে তার রহস্য অনুধাবন করতে পারবেন যে, জগৎ স্বামী মহান প্রভু ঐ দিনটাই মহান মুর্শিদ কেবলার ভাগ্যে কেন নির্ধারণ করলেন?
ফেব্রুয়ারি ঈসায়ী বছরের দ্বিতীয় মাস। এ মাস আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এ মাসের ১টি দিন ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বখ্যাত। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের আলোচনার সাথে সাথে বিশ্বমানের বাংলাদেশী মহাপুরুষের মধ্যে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্‌-হাসানী ওয়াল হোসাইনীর শুভজন্মের স্মৃতিও বিশ্বমানের হোক মনে হয় মহান স্রষ্টা তাই চেয়েছেন।
ফাল্গুন বঙ্গাব্দের একাদশ মাস। এ মাসের সাথেই বসন্তের সূচনা হয়। বাংলার আকাশ-বাতাসে ছয় ঋতুর এ দেশে বসন্ত ঋতুই শ্রেষ্ঠতম ঋতু হিসেবে খ্যাত। এ ফাল্গুনকে নিজেদের প্রিয় বিবেচনায় অনেক কবি-সাহিত্যিক প্রবন্ধ, কবিতা, গান ইত্যাদি রচনা করেছেন। মহান প্রভুর গোপন রহস্য কয়জনইবা বুঝতে পারে? অনুমান করা যায় বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিক, গায়ক, মরমী গায়কদের লেখা, কবিতা-গান ও ভাব কাব্যে মহান মুর্শিদ কেবলার জীবনীও স্বর্ণাক্ষরে স্থান পাওয়ার সুব্যবস্থা হিসেবে ফাল্গুন মাসকেই খোশরোজের জন্য হয়তো কুদরতের মহাব্যবস্থাপক আপন সিদ্ধান্তে নির্বাচন করেছেন।
জিলক্বদ হিজরি বর্ষের একাদশ মাস ‘আশহুরুল হুরম’ তথা প্রাক ইসলামিক ও ইসলামী আইনে যে কয়টি মাসে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম তার মধ্যে এটা প্রথম মাস। এ মাসকে হজ্বের মাসও বলা হয়েছে পবিত্র হাদিস শরীফে। এ মাসে জন্ম লাভ করা মানে বিশ্বশান্তির ও সর্বজনীন নিরাপত্তা এবং আধ্যাত্মিক বার্তা বহন তেমনিই অনুমান করা যায়। এ বছর অর্থাৎ ২০২১ সনের ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদ কেবলা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্‌-হাসানী ওয়াল হোসাইনী মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর ৫৪ তম খোশরোজ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি সর্বজন সম্মানিত শ্রদ্ধেয় বরণীয় ও গ্রহণযোগ্য এক বিরল দৃষ্টান্তের মহামানব। দেশে বিদেশে সর্বস্তরের বিবেকবান, জ্ঞানী-মহাজ্ঞানী ও আধ্যাত্মিক মহাপুরুষদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ঈর্ষণীয়। তিনি সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে বিশ্ব বিবেকের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বিধায় নির্দ্বিধায় বলা যায়- মহান প্রভু তাঁকে ভালোবাসেন, আসমানী জগতের ফিরিশতাগণ তাঁকে ভালোবাসেন। তাই, তিনি জগতবাসীর ভালোবাসার পাত্র। তিনি নিঃসন্দেহে বিলায়তের উজ্জ্বল নক্ষত্র। বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিস ও মর্মার্থের সাথে তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যতা।
লেখক : অধ্যক্ষ, ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্‌রাসা, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমাদের চেতনা ও শহীদদের আত্মত্যাগ
পরবর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা