৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শাহনাজ কামরুন নাহার (মহুয়া) হত্যার পর বৃদ্ধ পিতা–মাতার সময় কাটছে দিনরাত বিলাপ করে। পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনির আহাম্মদের মেয়ে শাহনাজ কামরুন নাহার মহুয়া ও একই উপজেলার বুধপুরা বেলখাইন এলাকার মো. রফিকুল আলম চৌধুরীর ছেলে আল ফায়াদ চৌধুরীর সাথে ২০১৮ সাল থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক গড়ায় পরিণয়ে।
২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর দুই পরিবারের সম্মতিতে সামাজিকভাবে বিয়ের আসরে বসে তারা দু’জন। কিন্তু বিয়ের বছর না পেরুতেই শাহনাজ কামরুন নাহারের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই মধুর জীবন পরিণত হয় বিষাদে। গেল ১৬ অক্টোবর ভোর রাতে চট্টগ্রাম নগরের বাসায় ৯ মাসের অন্তঃসত্তা শাহনাজ কামরুন নাহার আত্মহত্যা করেছে দাবি করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ রেখে পালিয়ে যান। যার কারণে তার গর্ভের অনাগত সন্তানও পৃথিবীর আলোর মুখ দেখতে পারেনি। এ ঘটনায় স্বামী ফায়াদ চৌধুরীসহ শ্বশুরবাড়ির সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শাহনাজ কামরুন নাহারের ভাই শাহ নেওয়াজ। মামলার আসামি নিহত কামরুন নাহারের স্বামীর দুই বোন তসলিমা আফরোজ, নাজিফা সালসাবিন ও ভগ্নিপতি মো. লোকমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে মূল আসামি স্বামী ও শাশুড়িকে এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
নিহতের মা জোৎস্না বেগম বলেন, ওই দিন আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যা করেন তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এই হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
এদিকে মেয়েকে হারানোর অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় মেয়ের মৃত্যুর পরদিনই ব্রেইন স্ট্রোক করেন মনির আহাম্মদ। গেল ২৩ অক্টোবর হয় তার অপারেশন। তিনি এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। মেয়ে হত্যার বিচার চাইছেন প্রশাসনের কাছে।
শাহনাজ কামরুন নাহারের ভাই শাহ নেওয়াজ বলেন, প্রেমের সম্পর্কের বিয়ে হওয়ায় আমার বোন বেশির ভাগ সময় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কথা গোপন রাখতো। কিন্তু স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আচরণে বুঝা যেত আমার বোন শান্তিতে নেই। বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন, আমার বোন আত্মহত্যা করেছে। যদি বোন আত্মহত্যাই করবে, তাহলে বাড়ির সবাই হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালালো কেন?
পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। স্বামীর বোনেরা তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করত তার বিভিন্ন প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।