১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চিটাগাং ক্লাব মিলনায়তনে ‘ম্যাসাকার’ ও ‘স্পার্টাকাস বিষয়ক জটিলতা’ নামক দুটি নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে চট্টগ্রামের প্রথম গ্রুপ থিয়েটার সংগঠন ‘থিয়েটার–৭৩’। আরম্ভ হয় চট্টগ্রামে গ্রুপ থিয়েটার চর্চার পথচলা। একই বছর চট্টগ্রাম নগরীর মুসলিম হলে ‘রঙ্গমঞ্চ থিয়েটার প্রযোজিত মমতাজউদদীন আহমদ নির্দেশিত দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পন’ উপভোগের মাধ্যমে অভিষেক হয় মঞ্চনাটকের দর্শক জালাল উদ্দিন আকাশের (১৯৬৫ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। তাঁর বয়স তখন মাত্র আট বছর। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে গ্রুপ থিয়েটার চর্চার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়। দর্শক হিসেবে জালাল উদ্দিন আকাশের পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করার কথা এ বছরই। কিন্তু না, তিনি থেমে গেলেন। পঞ্চাশ বছরের মধ্যে প্রথম দশ বছর বাদ দিলে, পরবর্তী চল্লিশ বছর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় যত নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে, সবগুলো নাটক উপভোগ করেছেন জালাল উদ্দিন আকাশ। প্রতিটি নাটকের একাধিক মঞ্চায়ন উপভোগ তো করেছেন, অনেক নাটকের সবগুলো মঞ্চায়ন উপভোগ করেছেন তিনি। বাংলাদেশ যতগুলো জেলায় মঞ্চানাটক হয়, সেসব জেলায়, একাধিকবার গিয়ে একাধিক দলের নাটক দেখেছেন জালাল উদ্দিন আকাশ। আর দেশের কোনো প্রান্তের কোনো নাট্যদল চট্টগ্রাম বা ঢাকায় এলে দর্শকসারিতে তাঁর উপস্থিতি অবধারিত। দেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতার প্রায় সব নাট্যদলের নাটক দেখার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর । নাটক দেখার জন্য তিনি বছরে নির্দিষ্ট সময় দেশের বাইরে যেতেন। বিভিন্ন দেশের নাট্যদল যখনই নাটক নিয়ে চট্টগ্রাম বা ঢাকায় এসেছে, তখন সেখানে দর্শকসারিতে পাওয়া গেছে তাঁকে। তিনি সবসময় প্রথম সারিতে বসে নাটক দেখার চেষ্টা করতেন। সেজন্য গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকেট কেটে ফার্স্ট বেল দেওয়ার আধঘন্টা আগে থেকেই তিনি মিলনায়তনের প্রবেশপথ বা কিউতে সবার আগে সবসময় দাঁড়িয়ে যেতেন। নাটক দেখার এই দুর্নিবার নেশা মেটাতে গিয়ে তাঁকে পেশাগত জীবনে অনেক ভোগান্তি সইতে হয়েছে এবং মাশুল গুনতে হয়েছে। সেই পেশাগত দায়িত্ব শেষ করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাত দুইটার সময় টেম্পোতে করে বাসায় ফেরার পথে ঘাতক ট্রাক কর্তৃক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতাল, আইসি ইউ, লাইফ সাপোর্ট হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি চিরতরে থেমে গেলেন।
১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন জালাল উদ্দিন আকাশ। পিতা মরহুম শেখ কামাল উদ্দিন, মাতা রাবেয়া খাতুন। চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়িতে তাঁর জন্ম, বেড়ে উঠা ও সাংস্কৃতিক চর্চা। তাঁর দেখা দ্বিতীয় নাটক ১৯৭৩ সালেই আনোয়ার হোসেন, সেলিনা, বাবুল চৌধুরী, চিত্ত দত্ত প্রমুখ অভিনীত অফিসপাড়ার নাটক ‘সিরাজউদ্দৌলা।’ ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে (তখন নাম ছিল শিল্প–সাহিত্য পরিষদ মিলনায়তন চট্টগ্রাম) একুশদিনব্যাপী একটি নাট্য উৎসব হয়। মাত্র নয় বছর বয়সে সেই উৎসবে নাটক দেখার মাধ্যমে জালাল উদ্দিন আকাশ গ্রুপ থিয়েটারের দর্শকে পরিণত হন। গ্রুপ থিয়েটার, অফিস পাড়ার নাটক, কমার্শিয়াল থিয়েটারের নাটক, বিভিন্ন ক্লাবের নাটক পাড়ার বার্ষিক নাটক ইত্যাদি মাধ্যমের মঞ্চনাটক উপভোগ করতে গিয়ে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তন, স্টুডিও থিয়েটার, টিআইসি, আগ্রাবাদ ডেবার পাড়স্থ সালাউদ্দিন মিলনায়তন, বন্দর রিপাবলিক ক্লাব, জেমসেন হল, দেওয়ান বাজার সিএন্ডবি মিলনয়তন, অঁলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, পাথরঘাটা ক্যাথলিক ক্লাব মিলনায়তন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ বীর উত্তম শাহ আলম মিলনায়তন, সেন্ট মেরিস হল, আমেরিকান কালাচারাল সেন্টার হল, আগ্রাবাদ কমিউনিটি সেন্টার, কমার্স কলেজ মিলনায়তন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, সন্দ্বীপ টাউন হল (১৯৮৭ সালে সাগরে বিলীন), কক্সবাজার শহরের সবগুলো মিলনায়তন, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়নগঞ্জ, খুলনা, রাজশাহী, যশোর এবং ঢাকার সবগুলো মিলনায়তনে নাটক উপভোগ করেছেন তিনি।
চট্টগ্রামের নাটক ‘ক্যালিগুলা’ চট্টগ্রাম ও ঢাকা মিলিয়ে আটটি মঞ্চায়নের সবক’টিতে উপস্থিত ছিলেন জালাল উদ্দিন আকাশ। নবম মঞ্চায়ন হলো ভারতের দিল্লীতে ২০১৮ সালের ৯ মার্চ। যথারীতি দর্শকসারিতে উদয় হলেন আকাশ। পরদিন ১০ মার্চ বিহারের পাটনা শহরে নাটকটির দশম মঞ্চায়ন হবে। নানারকম প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে বিহারে পৌঁছে রাতটা সেখানকার রেলস্টেশনে ভাসমান লোকদের সাথে কাটিয়ে ১০ মার্চ সন্ধ্যায় জালাল উদ্দিন আকাশ পাটনার সেই মিলনায়তনের কিউতে ও দর্শকসারিতে উপস্থিত। নাটক শেষে আনুষ্ঠানিকতায় ক্যালিগুলার নির্দেশক অসীম দাশকে মঞ্চে আহ্বান করা হলো। বিভিন্ন কথার এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, দশটি মঞ্চায়নের পরিক্রমায় কম্পোজিশনে কি কি পরিবর্তন করা হয়েছে এবং অভিনয়শিল্পী কতবার পরিবর্তন করা হয়েছে। নির্দেশক জানালেন, কোন প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই এই নাটকের দশটি মঞ্চায়ন হয়েছে। তার প্রমাণ দর্শক সারিতে বাংলাদেশ থেকে আগত দর্শক জালাল উদ্দিন আকাশ আছেন। তিনি এই নাটকের সবকটি মঞ্চায়ন উপভোগ করেছেন। নির্দেশকের এই কথা শোনামাত্র উপস্থিত সবার দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হলো জালাল উদ্দিন আকাশের দিকে, মিডিয়ার লোকজনও হামলে পড়লেন তাঁর উপর। বিস্তারিত জানালেন তিনি এবং পাটনায় আসার ভোগান্তি ও ভাসমান লোকদের সাথে রেলস্টেশনে রাত কাটানোর ঘটনাও বাদ গেল না। মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার এবং ভারতীয় জনতা দলের তৎকালীন প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র ও উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী প্রসাদ। এবার তিনি হয়ে গেলেন এই দুই মন্ত্রীর ভিআইপি অতিথি। নিজের জীবনের অনেকগুলো স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে এই ঘটনাটির স্মৃতি আমৃত্যু লালন করেছেন জালাল উদ্দিন আকাশ। মাস ছয়েক আগে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে চিটাগাং ক্লাবের নাটক ‘নিঃসঙ্গ নিরাময়’ মঞ্চায়ন শেষে আনুষ্ঠানিকতায় নাটকটির রচয়িতা ও নির্দেশক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যকার রবিউল আলম নাট্যজনদের সাথে জালাল উদ্দিন আকাশকেও মঞ্চে আহ্বান করেন। সেদিন আকাশের সুচিন্তিত বক্তব্য উপস্থিত সবাই সানন্দে গ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত নিয়মিত নাট্যপত্রিকা ‘নাট্যমঞ্চ’ চতুর্থ সংখ্যায় (৩ জানুয়ারি ২০১৯) আকাশকে নিয়ে ‘জালাল উদ্দিন আকাশ: একজন একনিষ্ঠ দর্শক’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। জানা মতে, প্রায় দেড় হাজার শব্দ সম্বলিত এই প্রবন্ধটিই দর্শক আকাশকে নিয়ে দীর্ঘ এবং একমাত্র লেখা।
মাত্র আটান্ন বছরে জীবনাবসান হওয়া জালাল উদ্দিন আকাশের নাট্য–দর্শকজীবন পঞ্চাশ বছরের। দর্শক আকাশের ভালো লাগা নাটকগুলোর মধ্যে ১৯৭৩ সালে দেখা দ্বিতীয় নাটক ‘সিরাজদ্দৌলা’ অন্যতম। এই নাটকের দেশপ্রেম, দ্রোহ, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তাঁর হৃদয়ে দাগ কেটেছিল। শান্তনু বিশ্বাস রচিত, নির্দেশিত ও অভিনীত ১৯৮৬ সালে প্রথম মঞ্চায়ন হওয়া কালপুরুষের নাটক ‘ইনফর্মার’ আমাদের মহান স্বাধীনতার পটভূমিতে অদ্বিতীয় নাটক বলে তিনি মনে করতেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘১৯৭১’ নাটকটিকেও তিনি স্বাধীনতার পটভূমিকায় উল্লেখযোগ্য নাটক মনে করতেন। চট্টগ্রামের ‘ফেইমে’র ‘ক্যালিগুলা’ তাঁর দৃষ্টিতে সেরা একটি নাটক।
শান্তনু বিশ্বাসের ‘ইনফর্মার’ নাটক দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে জালাল উদ্দিন আকাশ ‘নূরা পাগলা’ নামে একটি নাটক রচনা করেন। ১৯৮৯ সালের ঘটনা এটা। আগ্রাবাদ গণকল্যাণ পরিষদ শামসুল কবির লিটনের নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চায়ন করে। সেই সময় ঢাকায় বাংলা থিয়েটারের আমন্ত্রণে নাটকটি ঢাকায়ও মঞ্চস্থ হয়। ‘নূরা পাগলা’ নাটকের পাণ্ডুলিপি অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।
জালাল উদ্দিন আকাশ অভিনয়ও করেছেন। সেটা ১৯৮৩ সালের ঘটনা, কমার্শিয়াল থিয়েটারে। ভৈরব নাথ রচিত ও পঙ্কজ পাল নির্দেশিত নাটকটি হচ্ছে ‘মা মাটি মানুষ’। পঙ্কজ পাল, শাহাবুদ্দীন মজুমদার, চলচ্চিত্র শিল্পী খালেদা আক্তার কল্পনা ও সাজ্জাদ হোসেনের সাথে স্বল্পসময়ের একটি চরিত্রে অভিনয় করেন আকাশ। এরপর আরও কয়েকটি নাটকে তিনি কাজ করেছেন। কিন্তু, তিনি নিজেকে নাট্য দর্শক হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
জালাল উদ্দি আকাশকে নিয়ে ‘নাট্যমঞ্চ’ প্রত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে তাঁর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করছি, “মঞ্চনাটক না দেখলে যে আমি বাঁচবো না। এটা আমার নেশা। রক্তে মিশে গেছে। একটি নাটক কতবার দেখেছি, সেটা কোনো বিষয় নয়। আমি মনে করি প্রতিটি নাগরিকেরই মঞ্চ নাটক দেখা উচিত। এতে সমাজ ও দেশ অনেক পরিশীলিত হবে, মানুষের মানসিকতা ও রুচি উন্নত হবে। তবে খারাপ লাগে, সীমিত আয়ের মানুষ আমি। আমার মতো যারা বহুকষ্টে সময় বের করে এসে যখন দেখি নাটক সময়মতো শুরু হচ্ছে না। তখন আমাদের মানসিক যন্ত্রণা বাড়ে। কারণ, নাটক দেখা শেষে আবার পেশাগত জায়গায় যেতে হবে। আরও খারাপ লাগে যখন দেখি, কোনো কোনো নাটক শুধু করার জন্য করা হচ্ছে। নাই কোনো মেসেজ, নাই কোনো ভাবনার খোরাক, নাই অভিনয় নৈপুণ্য। তারপরও পরবর্তী শো–তে আসি, দেখি না কোনো পরিবর্তন হলো কিনা। কিন্তু আশায় গুঁড়েবালি। এসব বিষয় সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখতে অনুরোধ করবো। কারণ, এতে দর্শক মঞ্চনাটকের প্রতি বিমুখ হয়। যা আমাকে কষ্ট দেয়। আমার সাথে অনেক দর্শকের নিয়মিত কথা হয়।”
মঞ্চনাটকের প্রতি এরকম নিবেদিতপ্রাণ, দায়বদ্ধ দর্শক খুব কমই আছে। আর জালাল উদ্দিন আকাশ শুধু বাংলাদেশে নয়, আমরা মনে করি বিশ্বে বিরল এক দর্শক। যিনি গত চল্লিশ বছরে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় যত মঞ্চ নাটক হয়েছে সবগুলো নাটক দেখেছেন। শুধু দেখেছেন তা নয়, অনেক নাটকের একাধিক মঞ্চায়ন দেখেছেন। আবার অনেক নাটকের সবগুলো মঞ্চায়নও দেখেছেন। দেশের সব জেলার অনেক নাটক এবং দেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতার সিংহভাগ নাটকই তাঁর দেখা আছে। বাংলাদেশে গত চল্লিশ বছরে যত বিদেশি নাট্যদল এসেছে, এদেশে পরিবেশিত তাদের তাদের প্রায় সব নাটক দেখেছেন। তিনি নাটকের সেট দেখে বলে দিতে পারতেন, কোনটা কোন দলের কোন নাটকের সেট। অবলীলায় বলতে পারতেন ডজন ডজন নাটকের বিষয়, বক্তব্য, শিল্পীদের কার কেমন অভিনয়। তিনি যে শুধু নাটকের দর্শক ছিলেন, তা নয়। মিলনায়তনে ও মুক্তাঙ্গনে যত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, যথাসম্ভব তিনি দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করতেন।
মঞ্চ নাটকে দর্শক একটি অপরিহার্য অংশ। দর্শকের উদ্দেশ্যেই নাটক নিবেদিত হয়। দর্শক ছাড়া নাটক মঞ্চায়ন কল্পনাতীত। সেখানে আমাদের ছিলেন জালাল উদ্দিন আকাশের মতো একজন বিরল একমাত্র দর্শক। জালাল উদ্দিন আকাশের মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সমাজে কয়জন আছেন? অথচ তাঁর মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর মরদেহ শিল্পকলা একাডেমি বা শহীদ মিনারে আনা হলো না। এমন তো নয় যে, তাঁকে কেউ চেনেন না। চট্টগ্রামের প্রতিটি নাট্য সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রবীন–নবীন অনেক কর্মীর সাথেই তাঁর পরিচয় ছিল। চট্টগ্রামের সিংহভাগ নাট্যকর্মীর সাথে তাঁর আলাপ ও আড্ডা চলত তারপরও তাঁকে এভাবে উপেক্ষা করা হলো! কয়েকজন নাট্যকর্মী তো ফেইসবুকে পোস্টও দিয়েছেন জালাল উদ্দিন আকাশ এর মরদেহ শিল্পকলায় আনার আহ্বান জানিয়ে। গত ডিসেম্বরে ধারণ করা একটি ভিডিওতে জালাল উদ্দিন আকাশ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যেন চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে আনা হয়। যিনি তাঁর এই বক্তব্য ভিডিও করেছেন, তিনিও সেই বক্তব্য উদ্ধৃত করে পোস্ট দিয়েছিলেন, কেউ কেউ কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগও করেছিলেন। ভোট ও ভেট এর নাট্য সাংস্কৃতিতে জালাল উদ্দিন আকাশ হয়ে গেলেন অচ্ছুত। জীবদ্দশাতে জালাল উদ্দিন আকাশ নিয়মিত নাটক দেখার মধ্য দিয়ে সমাজে উন্নত রুচি ও মানসিকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুপরবর্তী তাঁর প্রতি আমাদের উপেক্ষা ও উদাসীনতা আমাদের মানসিকতারই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। বিদায় বিশ্বের বিরল দর্শক জালাল উদ্দিন আকাশ। আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। সবার হৃদয়ে আপনার স্মৃতি চির জাগরূক থাকুক।
তথ্যসূত্র: নাট্যমঞ্চ ৪র্থ সংখ্যা
লেখক: নাট্যকর্মী ও শিক্ষক, সম্পাদক, নাট্যমঞ্চ