বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে পরে প্রতারণা করলে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। আগে বিষয়টি ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে সে অনুযায়ী শাস্তির বিধান থাকলেও আইন সংশোধনের পর তা ভিন্ন ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আইন সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, কেবিনেট আজকে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের আইন উপদেষ্টা গত সপ্তাহে বিস্তারিত বলেছেন। উনার ব্রিফিংয়ের পরে আমরা অনেকগুলো উইমেন গ্রুপের মতামত আমরা নিয়েছি। তাদের মতামতগুলোকে অ্যাকমডেট করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। তার আলোকে আজকে প্রায় ঘণ্টাখানেক এই ল‘টা ডিবেট হয়েছিল, তারপর এ অ্যামেন্ডেন্টটা পাস হয়েছে।
অনুমোদন পাওয়া খসড়া অনুযায়ী, প্রেমের সম্পর্ক থাকার সময় বিয়ের প্রতিশ্রুতি বা প্রতারণার মাধ্যমে কারও সঙ্গে যৌনকর্ম করলে তা আর ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না। এ ধরনের প্রতারণাকে আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৭ বছর কারাদণ্ড। শফিকুল আলম বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যে রেইপ কেসগুলো, সেই জায়গাটায়ও নতুন করে অনেকগুলো মেজার নেওয়া হয়েছে। আগের ল’য়ে নতুন একটা সেকশন নিয়ে এসে সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর করা হয়েছে এবং সেটার ক্ষেত্রে আরও যারা সেইফগার্ড নেওয়া যায়, সেগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেবিনেট অবশেষে এটা আজকে পাস করেছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর অধ্যাদেশ জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী তার আগে বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, না, এটা নারী ও শিশু নির্যাতনের কেসের মধ্যেই থাকবে, কিন্তু আলাদা একটা সেকশনে হবে। এটা আলাদা অপরাধ না, একই অপরাধ, মানে একই আইনের আওতায়। আগে যে রকম এ, বি, সি, ডি– এরকম ছিল, সেটাকে আলাদাভাবে ইয়ে হইসে। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা পরে বিস্তারিত বলবেন বলে জানান সরকারপ্রধানের প্রেস সচিব।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত ১৩ মার্চ বলেছিলেন, নতুন আইনে শুধু একটা বিষয় অ্যাড করতে চাই। শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের দ্রুত বিচার নিশ্চিতে আমরা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছি। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান নতুন আইনে থাকবে। এ ট্রাইব্যুনালের কাজ হবে শুধু শিশু ধর্ষণ ও বলাৎকারের ঘটনা দ্রুত বিচার করা। যেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া যায়।
প্রস্তাবিত আইনে ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলাৎকারের নতুন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, আপনারা জানেন, এ মামলাগুলোর (বিচার) ডিলে হওয়ার পেছনে ডিএনএ টেস্টের একটা বড় ভূমিকা ছিল। সে জায়গাগুলো কীভাবে এড্রেস করা যায়, সেগুলোর মেজার নেওয়া হয়েছে। আমরা নতুন দুইটা ডিএনএ ল্যাবও করতে যাচ্ছি।
উপদেষ্টা পরিষদের বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আরো দুটো সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ পার্সেন্টের কম হলে টেন্ডার প্রস্তাব বাতিলের যে বিধান তা বাতিল করা হয়েছে। আগের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিঙ ছিল, যা থাকার কারণে একই প্রতিষ্ঠান বার বার কাজ পেত, তা বদলে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিঙ করা হবে। তাতে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে। বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজের দরপত্র বা টেন্ডার অনলাইনে হচ্ছে। এটিতে শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তরা আগে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না। সেই অসুবিধা দূর করতেও আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এছাড়া ৩ এপ্রিল একদিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সকল জনগোষ্ঠীর সামাজিক দিবসে ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়।