বাংলাদেশ বিমানে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা আছে তার! যখন তখন পরিচয় দেন নিজেকে বিমানমন্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে। আসলে তিনি একজন প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১০০ ভুক্তভোগীর থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
গত সোমবার দুপুরে নগরীর আকবর শাহ থানার নন্দন আবাসিক এলাকা থেকে মমতাজ বেগম নামে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর)। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ আলী হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তার মমতাজ বেগম (৪০) সন্দ্বীপ উপজেলার মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের শিবেরহাট গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী। তিনি নগরীর নন্দন আবাসিক এলাকার ১০৩ নম্বর ভবনে ভাড়া থাকতেন। সিএমপির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন জানান, প্রতারণার অভিযোগে মমতাজের বিরুদ্ধে নগরীর বন্দর থানায় দায়ের হওয়া দু’টি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে। এসব মামলায় ২০২০ সালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। কয়েক মাসের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে মমতাজ আবারও প্রতারণা শুরু করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সন্দ্বীপ থানায়ও দু’টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। গত দুই বছর ধরে কখনো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক, কখনো বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর আত্মীয়, কখনো সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বিমানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মমতাজ শতাধিক চাকরি প্রত্যাশীর থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ধরনের কয়েকটি লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে জমা পড়ে। আমরা তদন্তে নেমে মমতাজের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করি। তার ধরা পড়ার সংবাদ শুনে ডিবি কার্যালয়ের গেটে ভুক্তভোগীদের ভিড় জমে যায়। তারা সবাই মমতাজের প্রতারণার শিকার হয়েছেন জানিয়ে তার বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, মমতাজ একা এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত নন বলে আমাদের ধারণা। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য হয়ে সম্ভবত সে কাজ করে। তার সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত কি না সেটা অনুসন্ধান চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে মমতাজ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে নিজের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে এয়ার হোস্টেজসহ বিভিন্ন পদে লোভনীয় চাকরির অফার দিতেন তিনি। বিশ্বাস জন্মানোর জন্য টাকা নেওয়ার আগে তাদের চাকরিতে যোগদানের ফরম, অঙ্গীকারনামা, পরিচয়পত্র এবং বিমানের নির্ধারিত পোশাক-ব্যাচ সরবরাহ করতেন। এরপর বিমানে চড়িয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যেত প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে। সেখানে অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বিমান মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রত্যাশীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হত।
অভিযানে অংশ নেওয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরিফুর বলেন, চাকরি প্রত্যাশীরা যখন ভাবতেন তাদের চাকরি নিশ্চিত, তখন তারা প্রতারণার আসল ফাঁদে পা দিতেন। মমতাজ তাদের একেকজনের কাছ থেকে আড়াই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২১ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। কয়েকজনের কাছ থেকে একসঙ্গে টাকা আদায়ের পর মোবাইল বন্ধ করে দিতেন কিংবা সিম পাল্টে ফেলতেন। একইভাবে বাসাও পরিবর্তন করে ফেলতেন। নিরীহ চাকরি প্রত্যাশীদের মনে বিশ্বাস জন্মানোর আরেকটি কারণ হচ্ছে, তিনি সবসময় ভিআইপি স্টাইলে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। দেখে মনে হতো, তিনি আসলেই উচ্চপদস্থ কেউ।