বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৪–১৯৮৭)। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। বিভিন্ন ধারার উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের রচয়িতা তিনি। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ২৪শে অক্টোবর বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার পাণ্ডুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বিপিন বিহারী মুখোপাধ্যায়। দ্বারভাঙ্গা রাজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। তার কর্মক্ষেত্র ছিল বৈচিত্র্যময়। কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি ইন্ডিয়ান নেশন পত্রিকার কার্যাধ্যক্ষের পদে আসীন ছিলেন। পরে বিহারের দ্বারভাঙ্গায় মহারাজের সচিব হিসেবেও কাজ করেন। ১৯১৬–১৯৪২ পর্যন্ত কর্মজীবনে বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষকতা চলাকালীন তিনি নিজেকে লেখার কাজে নিয়োজিত করেন। ১৯৪২ সালে চাকরি ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে সাহিত্য সাধনায় নিয়োজিত হন। সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের তিনি রচয়িতা। তার জনপ্রিয় উপন্যাসটি হলো– ‘নীলাঙ্গুরীয়’। এছাড়াও তিনি অনেক কৌতুক ও রঙ্গরসের গল্পও লিখেছেন। লেখক হিসেবে বিভুতিভূষণ মুখোপাধ্যায়–এর আত্মপ্রকাশ ১৩২২ বঙ্গাব্দের ‘প্রবাসী’ পত্রিকার আষাঢ় সংখ্যায় প্রকাশিত ‘অবিচার’ গল্পটির মধ্যদিয়ে। আর জীবনের একেবারে শেষদিকে ১৩৯৩–এর কয়েকটি কয়েকটি শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত ছোট গল্প তার সাহিত্য প্রয়াসের শেষ নিদর্শন। বিভুতিভূষণ মুখোপাধ্যায় জীবনের শেষদিন পর্যন্ত লিখে গেছেন। ৭০–৭২ বছরব্যাপী এই নিরন্তর সাহিত্যসাধনার সম্ভবত দ্বিতীয় কোনো নজীর নেই। ৯২ বছর বয়সেও তিনি উপন্যাস রচনা করেন। তার সর্বশেষ উপন্যাস ‘সেই তীর্থে বরদ বঙ্গে’। বিভূতিভূষণের প্রতিভা ছিল বহুমুখী। ছোটদের জন্য পুজোসংখ্যায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন, পোনুর চিঠি ও অন্য নানা গল্প যা পরিণত মনস্ক পাঠকরাও পরম উৎসাহে পড়েছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ‘ডিলিট’ উপাধি দেন। এ ছাড়াও তিনি আনন্দ পুরস্কার, শরৎস্মৃতি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ব ভ ম’ এবং ‘কশ্চিৎ প্রৌঢ়’ ছদ্মনামেও সাহিত্য রচনা করেছেন। এ ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে– ‘সর্গাদপী গরীয়সী’, ‘দুয়ার হতে অদূরে’, ‘কুশীপ্রাঙ্গনের চিঠি’, ‘একই পথের দুই প্রান্তে’, ‘অযাত্রার জয়যাত্রা’, ‘কৈলাশের পাঠরানী’, ‘দুষ্টু লক্ষিদের গল্প’, ‘জীবন তীর্থ’ (আত্মজীবনী), ‘কাঞ্চনমূল্য’, প্রিয়ংবদা’ ইত্যাদি। ১৯৮৭ থ্রিস্টাব্দের ৩০শে জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।