বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট আজ

ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী আপিল দ্রুত নিষ্পত্তিতে বেঞ্চ চায় রাষ্ট্রপক্ষ

| রবিবার , ২১ আগস্ট, ২০২২ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট আজ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নজির বিহীন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। আজ এই নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৮তম বার্ষিকী।
বাসস জানায় : পরবর্তী সময়ে গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী ও সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলে যে ওই সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই হামলাটি পরিচালিত হয়েছিল। ইতিহাসের এই জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকীতে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে হামলায় নিহতদের স্মরণ করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি পালনে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।
২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এখনও অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।
আপিল দ্রুত নিষ্পত্তিতে বেঞ্চ চায় রাষ্ট্রপক্ষ : বিডিনিউজ জানায়, দেড় যুগ আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন এবং তাদের করা আপিলের ওপর ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে চার বছর আগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দিলেও উচ্চ আদালতে আপিল শুনানি আটকে আছে অন্যান্য মামলার দীর্ঘ জটের কারণে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির রায় নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তির জন্য ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে শুনানির যে আবেদন করা হয়েছে, তাতে প্রধান বিচারপতি একটি বেঞ্চ ঠিক দেবেন বলে তিনি আশা করেছেন। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি আশা করব- অবকাশকালীন ছুটির আগে হয়ত সম্ভব হবে না, অবকাশের পরেই হয়ত উনি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন। যে বেঞ্চ ঠিক করবেন, সেখানে আমরা শুনানি আরম্ভ করব।’
চট্টগ্রামে কর্মসূচি : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ সকল শহীদদের স্মরণে ১৮তম বার্ষিকীতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে আজ রোববার বিকাল ৩টায় এক বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সকল কর্মকর্তা, সদস্যবৃন্দ, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের সকলস্তরের নেতাকর্মীদের যথা সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, একই কর্মসূচি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৫টি থানা ও ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড পর্যায়ে পালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম প্যাকেজের কাজ শুরু
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক আহত