ফেনী, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি সহ চট্টগ্রাম বিভাগের বেশ কিছু জেলার মানুষ ভয়াবহ বন্যার কারণে পানিবন্দি হয়ে আছে। জেলা–উপজেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ছাত্র জনতা বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন সেনা রিজিয়ন। টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ির বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতি হওয়ায় হাজার হাজার পরিবারের স্বাভাবিক জীবন প্রায় বিপন্ন হয়ে যায়। জেলায় এবার চতুর্থবারের মতো বন্যায় প্লাবিত হয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক কার্যত্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে জেলা সদরের গঞ্জপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় কবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। যতদিন পর্যন্ত বন্যার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবেনা,ততদিন পর্যন্ত খাগড়াছড়ি রিজিয়নের পক্ষ থেকে শুকনো কাবার,ত্রাণ ও বিভিন্ন ধরনের মানব সেবামূলক কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মোঃ আমান হাসান। খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কালে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের বিএম মেজর সাদাত রহমান, ক্যাপ্টেন গালিব বিন সাইফসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ও সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যায় কবলিত এলাকার মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
জেলা রেড ক্রিসেন্ট : বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রস্তুতি ও কন্ট্রোল রুম পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের যুব স্বেচ্ছাসেবকরা। মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি সহ অন্যান্য উপজেলায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার, আশ্রয়কেন্দ্রে বয়স্ক–শিশু, গবাদি পশু সাইক্লোন সেন্টারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান, মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা পরিচালনা করা হচ্ছে। মীরসরাই উপজেলায় যুব রেড ক্রিসেন্ট, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের যুব স্বেচ্ছাসেবীদের ৩টি দল এবং ফটিকছড়ি উপজেলায় দুইটি দল নিরবিচ্ছিন্নভাবে উদ্ধার ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উপজেলাসমূহে দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।গতকাল মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এবং করেরহাট এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার এবং রান্না করা খাবর বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম চৌধুরী পরাগ। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার কার্যকরী পর্ষদ সদস্য ইসমাইল হক চৌধুরী ফয়সাল, জেমিসন মেটারনিটি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দৌলা সুজন ও যুব প্রধান কৃষ্ণ দাশসহ যুব সদস্যরা। এছাড়াও ফটিকছড়ি উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ৫০০ জন বন্যার্তদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে যুব রেড ক্রিসেন্ট, চট্টগ্রাম এর কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুমে খোলা হয়েছে। জরুরি বিষয়ে ও তথ্য প্রদানের লক্ষ্যে ০১৬২৫–৪৩২০৯৬ এবং ০১৮২০–১৩১২৫৬ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি : বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) উদ্যোগে ফেনী, ফটিকছড়িসহ বন্যা কবলিত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বিএসপির ২০টি স্বেচ্ছাসেবক টিম বানবাসিদের উদ্ধার এবং বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণে অংশ নিয়েছে। বিএসপি চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির জাতীয় স্থায়ী পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্যা কবলিত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। ইতোমধ্যে হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্ট পরিচালনাধীন মাদ্রাসাসমূহে ফটিকছড়ি মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফস্থ গাউছিয়া রহমানিয়া মইনীয়া মঞ্জিল, মাইজভাণ্ডার রহমানিয়া মইনীয়া দরসে নেজামী কামিল মাদ্রাসা, পাইনদং আমতল সিদ্দিকিয়া মইনীয়া দাখিল মাদ্রাসা, কাঞ্চনপুর মইনীয়া সাইফিয়া মাদ্রাসায় বিএসপির উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া তিনি পার্টির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চট্টগ্রাম, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার সকল ইউনিটকে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি জেলা শহরের পাশাপাশি মেরুং ইউনিয়নেও ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি। গতকাল শুক্রবার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম. এন. আফছার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রব রাজা, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আইন সম্পাদক এড. বেদারুল ইসলাম, দীঘিনালা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. শফিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মেরুং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। জানা গেছে, জেলা বিএনপি. উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সৌজন্যে এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
ফটিকছড়ি : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ও পাইন্দং ইউনিয়নের অনেকগুলো আশ্রয়শিবির ঘুরে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। তিনি সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আমীর নাজিম উদ্দীন সিকদার, সেক্রেটারি ইউসুফ বিন সিরাজ, পাইন্দং ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি নাঈম উদ্দিন, শহিদুল্লাহ তালুকদার প্রমুখ।
ইজিআরবি : ফটিকছড়ি সুয়াবিলের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশভিত্তিক সংগঠন ইকোলোজিক্যাল জাস্টিস এন্ড রিসার্চ অব বাংলাদেশ (ইজেআরবি)। গতকাল সকাল ১০টার দিকে সংগঠনটির সদস্যরা দুর্গত এলাকা সুয়াবিলে গিয়ে মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রীসহ প্রাথমিক ঔষধপত্র ও প্রয়োজনীয় নানা উপকরণ তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইকোলোজিক্যাল জাস্টিস এন্ড রিসার্চ অব বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো–অর্ডিনেটর নোমান বিন খুরশীদ, কো–অর্ডিনেটর নাবিল হাসান, সমন্বয়ক এ এস এম রেজোয়ান ভূঁইয়া, আবু মুহায়মিন চৌধুরী, রাইফ, তাসনিম বিন খুরশীদ, আফরান নাওয়ার, আসমা আক্তার, সাখাওয়াত হোসেনসহ প্রমুখ।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ : ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইরের নেতৃত্বে একটি রিলিফ টিম গতকাল শুক্রবার ফটিকছড়ি উপজেলার ফরহাদাবাদ এলাকা পরিদর্শনে যান। দুর্গত মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার, শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় তার সাথে ছিলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাওলানা এ এম মঈনউদ্দীন চৌধুরী হালিম, সহ অর্থ সম্পাদক মাওলানা ওয়াহেদ মুরাদ, সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক কফিল উদ্দীন রানা, ইসলামিক যুবফ্রন্ট বাংলাদেশের সহ সভাপতি কাজী আহসানুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু ছাদেক ছিটু, মুহাম্মদ তানভীর আজহারী প্রমুখ।
ফেনী জেলায় ত্রাণ : ফেনী জেলার ভয়াবহ বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের মাঝে গত ২২ আগস্ট ৪টি স্পিড বোটের মাধ্যমে নিরাপদ স্থানে রেসকিউ করার কাজে এগিয়ে এলেন সমাজকর্মী এসএম আহসানুল কবির চৌধুরী (টিটু)। তাঁর সাথে সীতাকুণ্ড এলাকার বিভিন্নস্তরের লোকজন যোগ দেন। এছাড়াও তিনি বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার, খাবার পানির বোতল, মোমবাতি, টর্চ লাইট, গ্যাস লাইটারসহ বিভিন্ন অনুষাঙ্গিক প্রদান করেন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নিজ সার্মথ্য অনুযায়ী তাদের ও রেসকিউ কাজ সম্পাদনে নগদ অর্থ দেন।
তিনি বন্যাদুর্গত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজে ভাড়া করা স্পিড বোটের মাধ্যমে চলমান থাকবে। তিনি সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার আহবান জানান।