সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়ও কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন জোরালোভাবে অতিবাহিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে ভোর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাসদস্যদের টহল ছিল চোখে পড়ার মতো। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টহল চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি ও পথচারীদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেছে পুলিশ। অহেতুক ঘোরাঘুরির কারণে কোথাও-কোথাও জরিমানাও করা হয়েছে।
হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, লকডাউনের ১ম দিন হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে কঠোর অবস্থানে ছিল। গতকাল সকাল থেকে পণ্যবাহী যান ও রিকশা ছাড়া সকল ধরনের যানবাহন বন্ধ ছিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান ছাড়া বন্ধ ছিল বিভিন্ন শপিংমল।
সরোজমিনে উপজেলার বাসস্ট্যান্ড জিরো পয়েন্ট, চৌধুরীর হাট, বড়দীঘিরপাড়, মির্জাপুর, কাটিরহাট, নুরআলী মিয়ারহাট, নাজিরহাট বাজারের হাটহাজারী অংশ, ইছাপুর ও বিভিন্ন অলিগলিসহ বাজারেও টহল দিতে দেখা যায় সেনবাহিনী ও পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসনকে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট শরিফ উল্ল্যাহ জানান, প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করছি। পাশাপাশি মাক্স পরিধান এবং অযথা মানুষ রাস্তায় ঘোরাঘুরি না করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করছি। ১ম দিন পণ্যবাহী ও রিকশা ব্যাতিত অন্য যানবাহন চলাচলা করতে পারেনি।
পটিয়া প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে পটিয়া পৌর সদর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা করে আদায় করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নীলুফা ইয়াসমিন অভিযান চালিয়ে ছয় মামলায় এই জরিমানা আদায় করেন। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে সচেতন করতে মাস্ক বিতরণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার মশিউর রহমানসহ পুলিশের একটি টিম। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নীলুফা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে ছয় মামলায় ১ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা করে আদায় করা হয়েছে। জরিমানা ছাড়াও জনগণকে সচেতন করতে তিনি এলাকায় মাস্ক বিতরণ করেন। অভিযান চলমান রাখা হবে বলে জানান।
আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, প্রথম দিনের লকডাউন কার্যকর করতে উপজেলায় কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। গতকাল সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও সড়কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেষ জোবায়ের আহমদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরী, আনোয়ারা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম দিদারুল ইসলাম ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সোয়াইবের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার পিএবি সড়কের চাতরী চৌমহনী বাজার, কালাবিবি দিঘীমোড়, সরকার হাট, আনোয়ারা সদর, জয়কালী বাজার, মালঘর বাজার, ছত্তার হাট, কাফকো সেন্টার, বটতলী রুস্তম হাটসহ বিভিন্ন হাট বাজার ও সড়কের মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল দল কঠোর নজরদারীতে থাকায় যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ জানান, লকডাউন কার্যকর করতে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, লকডাউন অমান্য করা ও জরুরি প্রয়োজনে হাটে বাজারে বের হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার দায়ে মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে উপজেলার আবুতোরাব, মিঠাছরা বাজার, বামনসুন্দর ও সুফিয়া বাজারে উক্ত আদালত পরিচালনা করা হয়। আদালত পরিচালনা করেন মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান, সহকারি কমিশনার ভূমি সুবল চাকমা, মীরসরাই থানার ওসি মুজিবুর রহমান সহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। এ সময় হ্যান্ড মাইক দিয়ে হাটে বাজারে অহেতুক ঘুরে বেড়াতে বা প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুটি টিম ১৭ জনকে ১৮৮০ টাকা জরিমানা করেন।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, সাতদিনের সরকারি বিধি-নিষেধ বা কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন রাঙ্গুনিয়ায় বন্ধ ছিল দোকানপাট, সড়ক ছিল যানবাহন শূন্য। লকডাউন কার্যকরে বিভিন্ন হাট-বাজার, সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। গতকাল অভিযানকালে আইন অমান্য করে ঘর থেকে বের হওয়ায় ৩৩ মামলায় ১২ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিন সকাল থেকে রাঙ্গুনিয়ার কাপ্তাই সড়কের শান্তিরহাট থেকে লিচুবাগান, গোডাউন থেকে রাজারহাট, মরিয়মগর থেকে রাণীরহাট, হাজারীহাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই বন্ধ ছিল সবধরণের যানবাহন। তবে কিছু মালবাহী গাড়ী, ব্যাটারিচালিত রিকশা, টমটম ও কিছু সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। মুদির দোকান ও বেকারী খোলা থাকলেও হোটেল রেস্টুরেন্ট, শপিংমল বন্ধ ছিল। দুপুর ১২টার দিকে রোয়াজারহাটে পুলিশের টহল চলাকালে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিল্কী। এসময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের একাধিক ভ্রাম্যমাণ টহল টিম মাঠ পর্যায়ে লকডাউন কার্যকরে কাজ করছে। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব চৌধুরী। এসময় আইন অমান্য করে ঘর থেকে বের হওয়ায় ২৭ মামলায় ৯ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন।
চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউনের ১ম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলাম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহফুজা জেরিনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ ভ্রাম্যমান আদালতে পথচারী, ব্যবসায়ী ও চালকদের কাছ থেকে ৭ হাজার ৬শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। উপজেলা সদর, বাগিচাহাট, খানবটতল, দোহাজারী পৌরসভা সদরে পৃথক পৃথক এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে দোহাজারী পৌরসভার মাংস বিক্রেতা সাব্বির হোসেনকে ৩ হাজার, আল মদিনা ফার্মেসিকে ১ হাজার, রিমা মেডিকেলকে ৫শ, বাগিচাহাট এলাকার জেবল হোসেন ফার্নিচারকে ১ হাজার, সাতগাউছিয়া ফার্নিচারকে ১ হাজার, মোটরসাইকেল আরোহী পরানকে ৫শ, রিকশাযাত্রী আহমদ ছফাকে ৩শ, পথচারী জাহেদুল ইসলামকে ২শ, প্রিয়তোষকে ১শ টাকাসহ সর্বমোট ৭ হাজার ৬শ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে সহযোগিতা করে চন্দনাইশ থানার একদল। অভিযানের সময় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পথচারীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
কঠোর লকডাউনের ১ম দিনে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংক্রামক আইনে এসব জরিমানা করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া ইসলাম।
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন কক্সবাজারের চকরিয়ায় পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে যাত্রীবাহী কোন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। মহাসড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশের উপস্থিতিতে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়।
অপরদিকে চকরিয়া পৌরশহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গার অন্তত ৩০টি বিপনী বিতানে (মার্কেট) তালা ঝুলতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন তাদেরকে মুখোমুখি হতে দেখা গেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবিক অর্থে কঠোরভাবেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কোথাও কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। সারাদিন বিভিন্নস্থানে আমি নিজে এবং এসি ল্যান্ড পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অযথা ঘোরাফেরা করায় অসংখ্য পাবলিকের কাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য রাঙামাটিতে লকডাউনের প্রথম দিন পণ্যবাহী ও জরুরি সেবার গাড়ী ছাড়া সব ধরনের যানবাহন বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেবল কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান ছিল খোলা। লকডাউন কার্যকরে সকাল থেকে মাঠে ছিল সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। এসময় তারা বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়ে চেক করাসহ অকারণে যারা ঘোরাঘুরি করছিল তাদের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। লকডাউন কার্যকরে জেলা প্রশাসনের ৫টি মোবাইল টীম মাঠে কাজ করেছে। সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহমান মাস্ক না পড়ায় ১ জনকে এবং সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে হোটেলে খাবার পরিবেশন করায় কয়েকটি হোটেলকে জরিমানা করেন। এদিকে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান বাজার দর নিয়ন্ত্রণে শহরের বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করে বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ করেন।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বান্দরবানে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মাঠে ছিল জেলা প্রশাসনের ৭টি মোবাইল কোর্ট। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বান্দরবানে লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনে জেলা শহরের ওষুধের দোকান ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া অন্যান্য সকল দোকানপাঠ বন্ধ ছিল। গণপরিবহন ও দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ ঘোষণা করায় জেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও কক্সবাজারসহ দূরপাল্লার কোন যাত্রীবাহী বাস স্টেশন ছেড়ে যায়নি। শহরের মোড়ে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে।
এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজি বলেন, বান্দরবানের লকডাউন কার্যকরে ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৭টি মোবাইল কোর্ট বের হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মানতে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।
টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফে কঠোর লকডাউন পালনে মাঠে ছিল উপজেলা প্রশাসন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নস্থানে তৎপর ছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীসহ উপজেলা প্রশাসন। পরিচালনা করেছে যৌথ অভিযানও। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান, লকডাউন সফল করতে প্রথম দিনের শুরুতেই ভোর থেকে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করেছে। কোথাও কোথাও অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি প্রবেশমুখসহ শহরের বিভিন্নস্থানে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল। রাস্তায় বের হওয়া মানুষসহ গাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। যারা দোকানপাট খোলা রেখেছে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে লকডাউন বাস্তবায়নে গতকাল মাঠে ছিল প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসারসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাতদিনের সরকারি কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে সীতাকুণ্ড পৌরসদর, উপজেলার বাড়বকুণ্ড বাজার, শুকলাল হাট, বাঁশবাড়িয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এতে লকডাউনে দোকান খোলা রাখার অভিযোগে সীতাকুণ্ড বাজারের জান্নাত এন্টারপ্রাইজকে এক হাজার টাকা ও হাসপাতাল রোডের আরিয়ান ফার্নিচার ডোরকে এক হাজার টাকা এবং মাস্ক পরিধান না করায় বাড়বকুণ্ড বাজারের রাজিব নাথকে ২শ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মো. শাহাদাত হোসেন, সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি আবুল কালাম, ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক প্রমুখ। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, লকডাউনের প্রতিদিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর এই টিমের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উখিয়া প্রতিনিধি জানান, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন উখিয়ায় সর্বাত্মকভাবে অতিবাহিত হয়েছে। কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান ও কিছু রেস্তোরাঁ খোলা থাকলেও অনান্য সবকিছু বন্ধ ছিল। তবে উখিয়ার ২১ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারের নির্দেশনা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। গতকাল দেশব্যাপী শুরু হয়েছে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন। যা একইসাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও কার্যকরের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন ধরনের লকডাউন বা সরকারী বিধি-নিষেধ ক্যাম্পগুলোতে কার্যকর করা হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লকডাউন কার্যকরে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের মাঠে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাজ উদ্দিন, ওসি আহমেদ সনজুর মোরশেদ বিভিন্ন স্পটে সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যকরে দায়িত্ব পালন করেছেন। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারী আইন ও সকল নির্দেশনা দেশের অভ্যন্তরে সর্বক্ষেত্রের জন্য সমান প্রযোজ্য ও কার্যকর। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর জন্য আমাদের স্থানীয় লোকজনদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরিস্থিতির চিত্র কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হবে বলে তিনি জানান।
সাতকানিয়া প্রতিনিধি জানান, কঠোর লকডাউন অমান্য করে দোকান খোলা, স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা এবং মুদির দোকানে মূল্য তালিকা না থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধে সাতকানিয়ায় ৪৫ টি মামলায় ১ লক্ষ ৩ হাজার ৪ শত ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল বশিরুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় সেনা বাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, আমরা সকাল থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত উপজেলার কেরানীহাট, মৌলভীর দোকান, বুড়ির দোকান, বাজালিয়া, ধর্মপুর, দেওদিঘী বাজার, মির্জারখীল বাজার ও সাতকানিয়া পৌরসভারসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এসময় দোকান খোলা রাখা, ঘরকে দোকান বানিয়ে ভাত বিক্রি, মুদির দোকানে মূল্য তালিকা না থাকা, মাস্ক না পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় এসব মামলা ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, জরিমানার পাশাপাশি এলাকায় মাইকিং করে জনসচেতনতা সৃষ্টির এবং লোকজনের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন- ২০১৮ এর আওতায় ৩৬টি মামলা দায়ের করে ১২ হাজার ১০০ শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। বাঁশখালীতে লকডাউনে কঠোর নজরদারি অংশ হিসাবে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও বাঁশখালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাযহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথক দুটি মোবাইল কোর্ট বাঁশখালীর উত্তর ও দক্ষিণ অংশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। সকাল থেকে সামান্য কিছু লোকজন রিক্সাগাড়ি চলাচল করলে প্রশাসনের টহল জোরধার সাথে সাথে ফাঁকা হয়ে যায় সড়ক। এ সময় অকারণে বের হওয়া সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল ও দোকানকে ৩৬ টি মামলার ১২ হাজার ১০০শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার লকডাউন প্রদান করেছে। লকডাউন শতভাগ কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে উপজেলা প্রশাসন বাঁশখালী কর্তৃক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এছাড়া লোহাগাড়ায় ‘কঠোর লকডাউন’ বাস্তবায়নে ৩৭ মামলায় ১৪ হাজার ৩৩০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা প্রশাসনের পাশপাশি মাঠে নেমেছিল সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আহসান হাবীব জিতু।
তিনি জানান, লকডাউনের প্রথম দিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অযথা ঘুরাফেরা ও দোকান খোলা রাখার দায়ে সংক্রমণ আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারামতে ৩৭টি মামলায় ১৪ হাজার ৩৩০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এ সময় সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশ দেন তিনি। অভিযানে সাথে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসাইন মাহমুদ, সেনাবাহিনী কক্সবাজার ১০ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মুকতাদির আহমেদ আসিফ ও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওবাইদুল ইসলাম প্রমুখ।












