বিফলে গেল হৃদয়ের সেঞ্চুরি আর জাকেরের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস

গিলের সেঞ্চুরিতে জয় দিয়ে শুরু ভারতের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ

শুরুতে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়। এরপর ধ্বংস স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে হৃদয়জাকেরের লড়াই। দুজনেরই ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং। পরে রিশাদতাসকিনদের চোখ রাঙানি। কিন্তু দিন শেষে কোনো কিছুই কাজে আসল না বাংলাদেশের। হার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর শুরু করল বাংলাদেশ। পেসার মোহাম্মদ সামির দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর ব্যাটার শুভমান গিলের দায়িত্বশীল ব্যাটিং ভারতকে দারুণ এক জয় পায়। আর সে জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যাত্রা শুরু হলো রোহিতকোহলিদের। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সূচনা করল ভারত।

হৃদয়ের লড়াকু সেঞ্চুরি ম্লান হয়ে গেল গিলের সেঞ্চুরির কাছে। যদিও মোহাম্মদ সামি দিনের শুরুতেই বাংলাদেশকে হারের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি টাইগাররা। বাংলাদেশের অধিনায়কসহ টপ অর্ডারের চার ব্যাটার করেছেন ৩০ রান। দলের পাঁচ জন ব্যাটার ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। স্বল্প পুঁজি নিয়ে তারপরও বোলাররা ভালই লড়াই করেছিল। সেখানে আবার ক্যাচও মিস করেছে ফিল্ডাররা। এতোকিছুর পর জয় আশা করাটা নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি ছিল। শেষ পর্যন্ত সে বাড়াবাড়ির পথে হাঁটতে পারেনি টাইগাররা। যথারীতি হার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর করল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই চরম বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৫ বল খেলে কোনো রান না করে মোহাম্মদ শামির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন সৌম্য। হর্ষিত রানার করা পরের ওভারে শর্ট কভারে কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনিও রানের খাতা খুলতে পারেননি। তৃতীয় উইকেটে মিরাজকে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধের হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তানজিদ। ২৪ রানের জুটি ভাঙে মিরাজ ১০ বলে ৫ রান করে আউট হলে।নবম ওভারে আরো বড় ধাক্কা বাংলাদেশ শিবিরে। টানা দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন অক্ষর প্যাটেল। দ্বিতীয় বলে তানজিদ ও তৃতীয় বলে মুশফিককে তুলে নেন তিনি। ২৫ বলে ২৫ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তানজিদ। আর গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরেন মুশফিক। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে একেবারে খাদের কিনারায় বাংলাদেশ।

এরপরই ষষ্ঠ উইকেটে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রেকর্ড গড়া জুটি করেন জাকের ও হৃদয়। ১৫৪ রানের জুটি গড়ে দলকে উদ্ধার করেন দুজন। সে সাথে গড়েন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ষষ্ঠ উইকেট জুটির রেকর্ডও। এদুজন ষষ্ঠ উইকেটে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বুচার ও জাস্টিন কেম্পের গড়া ১৩১ রানের রেকর্ড ভেঙে দেন। দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ফিফটি। ১১৪ বলে ৬৮ রান করা জাকের আলিকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ শামি। চারটি চার মেরেছেন জাকের আলি। এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। আগের ইনিংসটা ছিল অপরাজিত ৬২ রানের। যা গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিলেন জাকের আলি।

এরপর উইকেটে এসে ২টি ছক্কা মেরে রানের গতি বাড়িয়ে দেন রিশাদ হোসেন। কিন্তু ১২ বলে ১৮ রান করে হর্ষিতের বলে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ হন তিনি। তখনো লড়াই করছিলেন তাওহিদ হৃদয়। দুইবার ইনজুরিতে পড়েও লোওয়ার অর্ডারদের অপরপ্রান্তে দাঁড় করিয়ে বীরের মতো লড়াই করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। ১১৪ বলে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি। এরপর আরও ৪ বল খেললেও কোনো রান যোগ না করেই শামির বলে আউট হন আহত হৃদয়। ১১৮ বলে ১০০ রান করেন তিনি। ৬টি চারের পাশাপাশি ২টি ছক্কা মেরেছেন হৃদয়। আর তাতেই খাদের কিনারা থেকে বাংলাদেশের ইনিংস গিয়ে দাঁড়ায় ২২৮ রানে। ভারতের পক্ষে ৫৩ রানে ৫ উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি। হর্ষিত রানা ৩১ বলে ৩ ও অক্ষর প্যাটেল ৪৩ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট ।

জবাবে ব্যাট করতে নামা ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল দুর্দান্ত শুরু করেন। ৯.৫ ওভারে ৬৯ রান তুলে নেন দুজন। ৩৬ বলে ৪১ রান করা রোহিতকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙেন তাসকিন। এই ইনিংস খেলতে গিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন রোহিত। বিরাট কোহলিকে নিয়ে আরো ৪৩ রান যোগ করেন গিল। রিশান হোসেনকে কাট করতে গিয়ে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ২২ রান করা কোহলি। শ্রেয়াস আইয়ারকেও ভয়ংকর হতে দিলেন না মোস্তাফিজ। ১৫ রান করা আইয়ার ক্যাচ দেন শান্তর হাতে। নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে অক্ষর প্যাটেলকে ফেরান রিশাদ। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে টানছিলেন শুভমান গিল। ১৪৪ রানে ৪ উইকেট পতনের পর গিলের সাথে জুটি বাধেন কে এল রাহুল। তাকে দ্রুত ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাসকিনের বলে সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি জাকের আলি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি দুজন। দলকে টেনে নিয়ে গেছেন জয়েল বন্দরে। পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটি গড়ে ২১ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ের গিল এবং রাহুল। গিল ১২৯ বলে ১০১ এবং রাহুল ৪৭ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের রিশাদ হোসেন ১০ ওভার বল করে ৩৮ রান খরচায় নিয়েছেন ২ উইকেট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগ্রাবাদে বিদ্যুতের খুঁটিতে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধঅনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে ওয়াসায় দুদকের টিম