বিপ্লব উদ্যানের সবুজ ফেরত চান সবাই

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেটে অবস্থিত বিপ্লব উদ্যানে নির্মাণাধীন সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সবুজায়নের মাধ্যমে পূর্বের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশকর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিশিষ্টজনদের প্রায় সবাই এই অভিন্ন দাবিই জানান। চসিকের কনফারেন্স রুমে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিপ্লব উদ্যানের আগের ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন চসিকের স্থপতি আবদুল্লাহআলওমর। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় মতামত পেশ করেন প্রফেসর ডা. ইমরান বিন ইউনুস, স্থপতি জেরিনা হোসেন, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, স্থপতি আশিক ইমরান, সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি ও সালাউদ্দিন মো. রেজা, আসমা আকতার, হাসান মারুফ রুমি, শফিক আনোয়ার, হুমায়ুন কবির, সাংবাদিক নেতা শাহনেওয়াজসহ অনেকেই।

মতবিনিময় সভায় সবাইকে সমন্বয় করে চসিককে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. ইমরান বিন ইউনুস বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের বসবাস। এই নগরীকে সবার বাস উপযোগী করা লাগবে। তাই বিপ্লব উদ্যান নিয়ে সবাইকে সমন্বয় করে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি উড়াল সড়কের ডিভাইডারে পার্কিং স্পেস করার পরামর্শ দেন।

প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বাসযোগ্য চট্টগ্রাম গড়তে চসিককে উড়াল সড়কে অপরিকল্পিত র‌্যাম্প স্থাপন না করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিতে বলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কোনো প্ল্যানিং ইনস্টিটিউশন নেই বলে চট্টগ্রামে জঞ্জাল সৃষ্টি হয়েছে। স্থপতি জেরিনা হোসেন বিপ্লব উদ্যানের সবুজায়নের পাশাপাশি ফুটপাতকে জনপরিসরে হাঁটার উপযোগী করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন আইন অনুসারে চসিকের উন্মুক্ত স্থান রক্ষায় দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও বিপ্লব উদ্যানের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ উদ্যানের বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেছে। নাগরিকদের স্বার্থে বিপ্লব উদ্যানকে আবারও নাগরিকদের উদ্যান হিসেবে ফিরিয়ে আনতে হবে।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচি বলেন, বিপ্লব উদ্যানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণার স্মৃতি রক্ষায় চসিককে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিগত দুই মেয়রের সময়ে নেওয়া কার্যক্রম বন্ধ করে বিপ্লব উদ্যানকে আগের মতো সবুজায়ন করতে বলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা। তিনি বলেন, বিপ্লব উদ্যানের আগের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। এই উদ্যান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত।

পরিবেশ কর্মী শফিক আনোয়ার আইকনিক স্থান হিসেবে বিপ্লব উদ্যান রক্ষার উদ্যোগ নিতে বলেন চসিককে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা অধিকার রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক আসমা আকতার বলেন, আইন অনুযায়ী একটি উদ্যানে ২৫ শতাংশের বেশি কংক্রিটের স্থাপনা রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু বিপ্লব উদ্যানে এর চেয়ে অনেক বেশি কংক্রিটের স্থাপনা বর্তমানে আছে। তাই এই উদ্যানকে সবুজায়ন করে সববয়সী নাগরিকের অবকাশ যাপনে আগের মতো ব্যবস্থা করতে হবে কর্পোরেশনকে। এজন্য সবুজায়ন করা লাগবে।

বিপ্লব উদ্যানে দোকান মালিকদের পক্ষে হুমায়ুন কবির বলেন, বিপ্লব উদ্যান আগে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। মাদক বেচাকেনা হতো। চসিকের আগের মেয়রের সময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক কর্মী হাসান মারুফ রুমি বলেন, উন্নয়নের প্রথম শর্ত হলো পরিবেশ ও প্রাণীকুলকে রক্ষা করা। কিন্তু বিপ্লব উদ্যানে অপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ইটপাথরের জঞ্জাল সৃষ্টি করা হয়েছে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাবুল চন্দ বণিক, মো. আল আমিন হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ইনসিয়াত মো. আলী আকবর, আহমেদ ইকবাল হায়দার, তাসলিমা মুনা, রিতু পারভীন, মনিরা পারভীন রুবা, ফারমিন এলাহি, লায়ন এমএ হোসেন বাদল, ফারুক আহমদ, আবু সুফিয়ান রাশেদ, রায়হান বাদশা, শ ম বখতিয়ার, নিজাম সিদ্দিকী, সাবাইতা সুলতানা ইতু, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মো. জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মনীষা মহাজন, চৈতী সর্ববিদ্যা, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, মো. সাব্বির রাহমান সানি, মোহাম্মদ ইকবাল হসান, মেহেরীন, শামিলা রিমা, মোহাম্মদ জিয়াউল হক, মো. আশরাফ হোসেন, স্থপতি তুহিন বড়ুয়া ও মো. আবদুর রহিম।

সভাপতির বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি আপনাদের থেকে। আশা করি পরবর্তীতেও আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বিপ্লব উদ্যান নিয়ে সুন্দর সুন্দর মতামত এসেছে। আমরা সবার মতামতকে স্বাগত জানাই। আমরা এই ব্যাপারে আরেকটি সভা করবো। এরপর এটা নিয়ে একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানাবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওয়াসার স্মার্ট মিটার বসানো কাজ শুরু
পরবর্তী নিবন্ধটাইমের ‘হানড্রেড নেক্সট’ তালিকায় তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম