৭ ইনিংসে এক সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে ২৮১ রান, স্ট্রাইক রেট ১৫৮.৭৬, ছক্কা ২২টি– সবশেষ এনসিএল টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে জিসান আলমের পরিসংখ্যান। সিলেটের হয়ে ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব চালান তরুণ ওপেনার। সেই ধারা অব্যাহত রেখে সামনের বিপিএলেও মনে রাখার মতো কিছু করতে চান তিনি। বিপিএলের গত আসরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স দলে ডাক পেয়েছিলেন তখনও স্বীকৃত টি–টোয়েন্টি না খেলা জিসান। তবে সেবার কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। এক বছর পর নতুন আসরে পরিস্থিতি পুরো ভিন্ন। প্লেয়ার্স ড্রাফটে দ্বিতীয় ডাকেই তাকে দলে টেনে নিয়েছে দুর্বার রাজশাহী। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি অবশ্য ড্রাফটের আগে সরাসরি চুক্তিতেই জিসানকে দলে নিয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে ড্রাফটে ফেরানো হয় জিসানের নাম। তাতে অবশ্য জিসানের ঠিকানা বদলায়নি। শুরুতেই তাকে ডেকে নেয় রাজশাহী। ওয়ানডে সংস্করণের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, পরে এনসিএল টি–টোয়েন্টিতে ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সামর্থ্যের ছাপ রাখেন মারকুটে ওপেনার। স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে ৯ ম্যাচে তার স্ট্রাইক রেট ১৫১.৭৯ আর লিস্ট ‘এ’তে ২৩ ইনিংসে তিনি ৫৭৫ রান করেছেন ১২৮.৩৪ স্ট্রাইক রেটে। এতেই পরিষ্কার তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের চিত্র। বিশেষ করে সবশেষ এনসিএলে টুর্নামেন্টে উদ্বোধনী ম্যাচে ১০ ছক্কায় সেঞ্চুরি করেন জিসান। আসরে সবচেয়ে বেশি ছক্কাও মারেন তিনি। সিলেটের বিদায়ের আগ পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন তরুণ ওপেনার। মিরপুরের বিসিবি একাডেমি মাঠে শনিবার দলের অনুশীলন শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জিসান জানান, ব্যাটিংয়ে লিটন কুমার দাস ও রোহিত শর্মাকে আদর্শ মানেন তিনি। এনসিএলে চমৎকার ব্যাটিংয়ের ধারা বিপিএলেও ধরে রাখতে চান ২০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ‘ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। যেহেতু এনসিএল খুব ভালো গেছে। চেষ্টা করব বিপিএলেও যেন এমন একটা টুর্নামেন্ট কাটাতে পারি। অনেক বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। চেষ্টা করব ভালো ক্রিকেট খেলার। চাপ না, মনোযোগী থাকব। ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ ভালো খেলার চেষ্টা করব।’ নিজের বাবা ও সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার জাহাঙ্গীর আলমের কাছেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি জিসানের। নারায়ণগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমি মাঠের সেন্টার উইকেটে বাবার সঙ্গে ছক্কা মারার অনুশীলন করতে করতেই এখন বড় বড় ছক্কা মারেন তিনি। বড় বড় ছক্কার রহস্য তেমন কিছুই না। আমি ছোটবেলা থেকে সহজাত ক্রিকেট খেলে আসছি। ছোটবেলায় বাবা (জাহাঙ্গীর আলম) আমাকে সেন্টার উইকেটে ব্যাটিং করাতেন। এজন্য সহজাতভাবেই ছক্কা মারি, ওটাকেই বড় বড় ছক্কা বলে সবাই।’ বাংলাদেশের হয়ে ৩টি ওয়ানডে খেলেছেন জিসানের বাবা জাহাঙ্গীর। এছাড়া তার চাচা সোহেল হোসেনও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন দুই মৌসুম। তাদের দেখানো পথে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম লেখাতে চান জিসান। ‘অবশ্যই এটা (বাবা ও চাচার লেগ্যাসি) আমার জন্য অনুপ্রেরণার বিষয়। যেহেতু বাবা–চাচা দুজনই জাতীয় দলে খেলেছেন, আমিও চেষ্টা করব ভালো কিছু করার। যদি কপালে লেখা থাকে, জাতীয় দলে খেলব।’ তাই বলে নিজের ওপর বাড়তি চাপ নিতে চান না তরুণ ওপেনার। সহজাত ব্যাটিংয়ে বিপিএল মাতানোর ইচ্ছা তার। ‘চাপ নিতে চাচ্ছি না। কারণ এটা আমার খেলা। আমাকে খেলতে হবে। মূল হচ্ছে পারফরম করা, এটাই চেষ্টা করব। এনসিএল ভালো খেলেছি, চেষ্টা করব বিপিএলেও নিজের সেরাটা খেলার। নিজেকে প্রমাণ করার ভালো একটা মঞ্চ। এটা করতে পারলে ভালো লাগবে।’ এসময় বিপিএলে নিজের লক্ষ্যটাও জানিয়ে দেন জিসান।‘ সবারই একটা লক্ষ্য থাকে। আমারও লক্ষ্য আছে সেরা পাঁচ রান সংগ্রাহকের মধ্যে থাকার।’ মিরপুর শের–ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে রাজশাহী।