দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু সাগরিকাস্থ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে। এরপর ২০০৬ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা হয়। যেখানে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামে শ্রীলংকা জাতীয় ক্রিকেট দল। তখনো স্টেডিয়ামটি পূর্ণতা পায়নি। মূলত ২০১১ সালের বিশ্বকাপকে ঘিরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম পূর্ণতা পায়। কিন্তু সেবার খুব তড়িঘড়ি করে কাজ করতে গিয়ে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও তাতে কোনো লাভ হয়নি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর কেটে গেছে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়। কিন্তু জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সংস্কারের তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি। মাঝখানে বছর দুয়েক আগে জরাজীর্ণ হয়ে পড়া গ্যালারির চেয়ারসমূহ পরিবর্তন করা হয় কেবল। তবে প্রায় এক যুগ পর এবার আমূল সংস্কার হচ্ছে স্টেডিয়ামটির।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের অন্য সব কিছুর মত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও এসেছে পরিবর্তন। নাজমুল হাসান পাপনরা পালিয়ে গেলে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদকে বিসিবির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি দায়িত্ব নিয়ে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু যেমন ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এবং সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংস্কারের প্রস্তাবনা প্রেরণ করেন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তিন স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। যেখানে চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পায় ৭ কোটি ৪৮ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৭ টাকা। বিপিএলের আগে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের যেসব সংস্কার কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রয়েছে ১. প্যাভেলিয়ন এবং মিডিয়া ভবনের ছাদে স্থাপিত ক্যানেপির প্রোফাইল শিট পরিবর্তন, বাবল ইন্সুলেশন পরিবর্তন, ফ্রেম রং করা। ২. প্রেসিডেন্ট বঙের মেরামত ও ইনটেরিয়রসহ আসবাবপত্র সংস্কার/পরিবর্তন। ৩. প্যাভেলিয়ন ভবনের প্রেসিডেন্ট বঙ, হসপিটালিটি বঙ, কর্পোরেট বঙ, খেলোয়াড় ড্রেসিং রুমে পানি পড়া বন্ধ করতে এঙপ্যানশন জয়েন্ট মেরামত, তৃতীয় তলার সম্মুখস্থ অস্থায়ী ক্যান্টিলিভার সংস্কার এবং প্রতিটি কক্ষের সম্মুখস্থ থাই গ্লাস সংস্কার ও মেরামত করণ, ফ্যার্নিচার সমূহ মেরামত করা। ৪. খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম, হসপিটালিটি বঙ, কর্পোরেট বঙে এসির পরিবর্তন। ৫. প্যাভেলিয়ন ভবন সম্মুখস্থ লিফট কোরটি সংস্কার ও লিফট স্থাপন, ২টি পোর্চ সংস্কার। ৬. পি এ সিস্টেম এবং মাঠের ট্রাইভিশন সংস্কার ও আধুনিকায়নকরণ। ৭. গ্যালারি সংলগ্ন চলাচলের রাস্তাটি সংস্কার করা, গ্যালারিতে অবস্থিত টয়লেট সংস্কার এবং গ্যালারিতে প্রবেশ পথের কলাপসিবল গেইট সমূহ সংস্কার/পরিবর্তন। ৮. স্টেডিয়ামের সীমানা প্রাচীরের উচ্চতা বাড়িয়ে কাটা তারের বেড়া নতুনভাবে নির্মাণ করা। ৯. বিদ্যমান ফ্লাডলাইট–এর সংস্কার ও উন্নয়ন।
এই কাজগুলো করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনী ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে। তারা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেছে স্টেডিয়ামের দুপাশের প্যাভেলিয়ন ভবন এবং মিডিয়া সেন্টারের ছাদের ক্যানেপির প্রোফাইল শিট খুলে ফেলা হয়েছে। একই সাথে অন্যান্য যেসব সংস্কার কাজ রয়েছে প্রকল্পের আওতায় সে সবও শুরু হয়ে গেছে। এই কাজ আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও তা সম্ভব নাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রকল্পের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কর্মকর্তা মেজর মোহাইমেনুল ইসলাম জানিয়েছেন, যেহেতু কাজের ভলিয়ম খুব বড় তাই বিপিএলের আগে যতটুকু সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা করবেন তারা।
তবে খুব সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন কাজ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগে যারা কাজ করেছে তাদের সে কাজ বছর না ঘুরতেই নষ্ট হয়ে যায় কিংবা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। যেহেতু এবারে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের হাতে দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে সেহেতু কাজের গুণগত মান নিয়েও স্বস্তিতে থাকার কথা বলছেন ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টরা।
এবারের বিপিএল শুরু হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। তবে চট্টগ্রামে বিপিএল মাঠে গড়াবে আগামী ১৬ জানুয়ারি। তার আগেই বেশিরভাগ এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের এই কর্মকর্তা। দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় স্টেডিয়ামটির চারদিকে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। বলা যায় একরকম ছাল উঠে গেছে। বিপিএলের আগে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম আবার নবরূপে সাজবে তেমনটি প্রত্যাশা করছেন সবাই। কারণ বিপিএল মানে বিশ্বের নানা দেশের তারকা ক্রিকেটারদের সমাবেশ। তাদের সামনে আমাদের দেশের স্টেডিয়ামগুলোকে যত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায় ততই তা দেশের সুনাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। আর সে কাজটা করার গুরু দায়িত্ব বর্তেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কাঁধে। আর এই কাজটা অত্যন্ত দক্ষতা এবং আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করতে চায় এই প্রতিষ্ঠানটি। যাতে বিপিএলের আগে একটি সুন্দর এবং সাজানো গোছানো স্টেডিয়াম দেখতে পারে দেশ–বিদেশের সবাই।