গ্রীষ্মের পাহাড়। তীব্র দাহকালে প্রশান্তি এনে দেয় লাল, হলুদ ও গোলাপী ফুল। তবে গভীর অরণ্য বা বুনো পাহাড়ে কৃষ্ণচূড়া, লাল সোনাইল, সোনালু বা রাধাচূড়ার মতো ফুল কম দেখা যায়। প্রাকৃতিকাভাবে সৃষ্ট এসব বনে আমাদের চেনা ফুলের বাইরে রঙ ছড়ায় অচেনা অদেখা ফুল। নানা প্রতিকূলতায় পাহাড়ে এখনো টিকে রয়েছে বিপন্ন কিছু উদ্ভিদ, বছরের নির্দিষ্ট সময়ে প্রস্ফূটিত হয় ফুল। এমন এক উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে খাগড়াছড়ি দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের এক দুর্গম পাহাড়ে। প্রাকৃতিক বনে থোকায় থোকায় দুলছে অজানা এক ফুল। স্থানীয়রা জানায় এই ফুলের নাম ‘বান্দরহোলা’।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক প্রকাশিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ পরিচিতি’ গ্রন্থে বলা হয় ‘বান্দরহোলা’ পাহাড়ের সংকটাপন্ন উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম উঁধনধহমধ এবং বৈজ্ঞানিক নাম Duabanga gradiflora। ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ পরিচিতি’ গ্রন্থে বলা হয়, বান্দরহোলা চিরসবুজ বনের গাছ। এরা বড় আকৃতির দ্রুত বর্ধনশীল। গাছের উচ্চতা অন্তত ৪০ মিটার পর্যন্ত হয়। লম্বা ডালপালার আগা নিম্নমুখীভাবে ঝুলে থাকে। পাতা আকারে বেশ বড়। পাতা দুই সারিতে সাজানো থাকে। গাছের কাণ্ড সরল ও সোজা। চিরসবুজ বনের অন্যতম দীর্ঘকায় বৃক্ষ।
স্থানীয় বড় কাঙড়াখাইয়া গ্রামের বাসিন্দা রবি বঞ্জন চাকমা বলেন, আমাদের গ্রামের মধ্যে কেবল বিহার এলাকায় অন্তত কয়েক ডজন বান্দরহোলা গাছ রয়েছে। আশপাশের গ্রামে নেই। এর ফুল অত্যন্ত সুন্দর। বসন্তের পরপর এখানে ফুল ফোটে। এরপর ফল ধরে। পাহাড়ে কাঁধে কিংবা উঁচু এলাকা এবং ঝিরির পাশে বান্দরহোলার গাছ রয়েছে। সাদা রঙের ফুল হয়।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা প্রিয় শংকর চাকমা বলেন, এখানকার বন প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠেছে। বছরের পর বছর বন সংরক্ষিত থাকে। স্থানীয়রা কেউ এখানে গাছ কাটে না। এখানে এখনো বান্দরহোলা ছাড়াও বেশ কিছু বিপন্ন উদ্ভিদ রয়েছে। গ্রীষ্মের আগেই ফুল ফোটে। বান্দরহোলা ফুল সুন্দর। গুচ্ছ আকারের থোকায় থোকায় সাদা ফুল ফুটে। ফল থেকে অনেকে বীজ সংগ্রহ করে। বান্দরহোলা কাঠ হলদে বাদামি বর্ণের, বেশ শক্ত, মজবুত ও টেকসই। বায়োভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির সংগঠক সবুজ চাকমা বলেন, বান্দরহোলা আমাদের বিপন্ন বুনো ফুল। নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে অনেক দেশীয় উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। বান্দরহোলা ফুল অত্যন্ত সুন্দর। গাছও বেশ বড় হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনের বিপন্ন উদ্ভিদ বান্দরহোলা। দেশীয় প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ করতে না পারলে তা একটা সময় পরিবেশে বিপর্যয় তৈরি করবে।
জানা যায়, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।