দলের তরুণ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ক্ষমতায় থাকলে বিনয়ী হতে হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে উন্নয়নের সাথে যদি বিনয় যুক্ত হয়, তাহলে দেশের মানুষ আবারো রায় দিয়ে আওয়ামী লীগকে এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে। শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের কারণে আমরা পরপর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছি। টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে বলে আস্ফালন করলে চলবে না। ক্ষমতায় থাকলে বিনয়ী হতে হয়। তবেই বারবার ক্ষমতায় ফিরে আসা সম্ভব হবে। আজকে শেখ হাসিনার অবস্থান মালয়েশিয়ার মাহাথির ও সিঙ্গাপুরের নিক ওয়ানকের অবস্থানকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই অবস্থান ধরে থাকতে হলে নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। বহু উন্নয়ন হয়েছে। সেই উন্নয়নের সাথে যদি আমাদের তরুণ কর্মীদের আস্ফালন থাকে মানুষ সেই উন্নয়ন ভুলে যাবে। আমাদেরকে পছন্দ করবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ তারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারা ষড়যন্ত্র করেছিল। এখনো যারা বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতিপক্ষ তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। সেজন্য ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী ঢাকার বুকে ও রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু আস্ফালন করেন, আবার একটা ১৫ আগস্টের ইঙ্গিত দেন। তারা যে ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র করছেন এগুলো সেটিরই বহিঃপ্রকাশ। তাই আমাদেরকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, গত ৪০ বছর ধরে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। ২১ বছর ধরে আমাদের শুনতে হয়েছে আওয়ামী লীগ কখনো রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যারা সে কথা বলত তাদের আস্ফালনকে মিথ্যে প্রমাণিত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। মায়ের মমতা ও বোনের স্নেহে বঙ্গবন্ধুহীন আওয়ামী লীগকে গুছিয়েছেন, ঐক্যবদ্ধ করেছেন, নির্বাচন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এদেশকে উন্নয়নের মডেলে পরিণত করেছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার স্বার্থকতা সেখানে, যে পাকিস্তানিরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর বলত বাংলাদেশ আদৌ রাষ্ট্র হিসেবে ঠিকে থাকতে পারবে কিনা, সেই পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আজ বাংলাদেশের গড় আয় ২২২৭ ডলার, যা ভারতের চেয়েও বেশি। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বলেছিলেন দশ বছরের মধ্যে পাকিস্তানকে সুইজারল্যান্ড বানাব। তখন পাকিস্তানের নেতারা বলেছিলেন সুইজারল্যান্ড চাই না, আমাদেরকে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ বানিয়ে দিন। আজ সুদৃঢ়ভাবেই বলতে হয়, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। ১২ বছর আগে যে বাঙালি সন্তান বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তারা দেশে ফিরে এদেশের চিরচেনা মেঠোপথ খুঁজে পান না, গায়ে জামা কাপড়হীন কোনো মানুষ দেখেন না। এদেশে অভুক্ত কেউ নেই। কারণ আমরা প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ১২টি মানবিক ও সামাজিক সূচকে এগিয়ে আছি। এমনকি মাথাপিছু গড় আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছি। তাই শেখ হাসিনার উপর বাঙালি জাতির আস্থার কোনো সংকট নেই, বরং তা দিন দিন দৃঢ় হচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশে আসার পর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুসহ নিহতদের মাগফেরাত কামনায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে একটি মিলাদ পড়াতে যেতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান সেই মিলাদ পড়াতে দেননি, ৩২ নম্বরে ঢুকতেও দেননি। সেই কারণে ৩২ নম্বরের সামনের রাস্তায় বসে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে মিলাদ পড়াতে হয়েছিল। এমনকি টুঙ্গিপাড়ার বাড়িতেও যেতে দেওয়া হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যাতে এদেশে আসতে না পারেন সেজন্য তৎকালীন জিয়াউর রহমানের সরকার বহু ষড়যন্ত্র করেছে। জিয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিল শেখ হাসিনা যদি এদেশে আসে তাহলে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। বহু রক্তচক্ষু ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁর দেশে আসা নিষ্কণ্ঠক ছিল না। যে গণতন্ত্র সামরিক ছাউনির মধ্যে বন্দি ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই সামরিক ছাউনি থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে এনেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের ভোটের ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুধুমাত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা নয়, বাংলাদেশ পৃথিবীর সামনে একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ হোসেন, দিদারুল আলম চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈফুদ্দিন খালেদ বাহার, আবদুল লতিফ টিপু, জাহাঙ্গীর চৌধুরী সিএনসি স্পেশাল, হাজী মোহাম্মদ ইউনুস প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন সফর আলী, শেখ মোহাম্মদ ইসহাক, আবদুল আহাদ, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কিষান চৌধুরী, সৈয়দ আমিনুল হক, পেয়ার মোহাম্মদ, বখতিয়ার উদ্দীন খান, রোটা. মোহাম্মদ ইলিয়াস, ড. নেছার উদ্দীন মঞ্জু, হাজী বেলাল আহমদ, সাহাব উদ্দীন আহমেদ, হাজী আবদুল হালিম, মো. আনসারুল হক, মো. মুমিনুল হক, কাজী আলতাফ হোসেন, রেজাউল করিম কায়সার, মো. ইলিয়াস, ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, মোহাম্মদ ইয়াকুব, আইয়ুব খান, নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, জসিম উদ্দীন, শামসুল আলম, আশরাফুল আলম, জহুরুল আলম জসিম, এরশাদ মামুন, অধ্যাপক মো. ইসমাইল, আসলাম সওদাগর, লুৎফুল হক খুশি, কায়সার মালিক, দিদারুল আলম মাসুম, আমিনুল হক রঞ্জু, আলী নেওয়াজ, ইফতেখারুল আলম জাহেদ, আবু তৈয়ব সিদ্দিকী, সৈয়দ মোহাম্মদ জাকারিয়া, এরশাদ উল্লাহ, মো. নাজিমুল ইসলাম মজুমদার, আবদুল আল ইব্রাহীম, হাজী আলী বঙ, মোসলেম উদ্দীন, স্বপন কুমার মজুমদার, ফয়জুল্লাহ বাহাদুর, ইসকান্দর মিয়া, জানে আলম, আবদুল মান্নান, হাজী মোহাম্মদ হাসান, জয়নাল আবেদীন আজাদ, নুরুল আলম ও আবদুল মালেক।